চামড়া শিল্পের টেকসই উন্নয়নে টিসিএলপি প্রকল্পের উদ্বোধন
বাংলাকণ্ঠ রিপোর্ট:
রাজধানীর বনানীর শেরাটনে ‘লেদারট্রেস বাংলাদেশ: ট্রেসেবল এবং সার্কুলার লেদার প্রোডাকশন (টিসিএলপি)’ প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত হয়েছে। আইডিয়া ট্রি এবং সেরা বাংলাদেশের আয়োজনে এবং এসএমইপি ফ্রেমওয়ার্কের অধীনে অর্থায়িত এই কার্যক্রমের লক্ষ্য বাংলাদেশের চামড়া শিল্পের ট্রেসেবিলিটি, টেকসই উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক মানদণ্ড নিশ্চিত করা।
এই প্রকল্পটি ইউনিভার্সিটি অব নর্থহ্যাম্পটন, ইউনিভার্সিটি অব হার্টফোর্ডশায়ার এবং সাসটেইনেবল লেদার ফাউন্ডেশন (এসএলএফ) এর যৌথ অংশগ্রহণের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) চেয়ারম্যান ও অতিরিক্ত সচিব আশরাফ উদ্দিন আহমেদ খান এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (নীতি, আইন ও আন্তর্জাতিক হযোগিতা) মো. সেলিম উল্লাহ।
আশরাফ উদ্দিন আহমেদ খান জানান, এ ধরনের উদ্যোগ বাংলাদেশের চামড়া শিল্পকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। তিনি আয়োজকদের এবং কনসোর্টিয়াম পার্টনারদের ধন্যবাদ জানান।
সেলিম উল্লাহি জানান, পরিবেশের সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে চামড়া শিল্পকে হাজারীবাগ থেকে সাভারের হেমায়েতপুরে স্থানান্তর করা হয়েছিল। তিনি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে সেন্ট্রাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (সিইটিপি) খুব শিগগিরই যেকোনো উপায়ে সম্পূর্ণরূপে কার্যকর হওয়া উচিত বলে জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির পরিচালক ড. মোহাম্মদ কামরুজ্জামান। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ), বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএলএলএফইএ) এবং লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলএফএমইএবি) এর নেতারা।
অনুষ্ঠানে চামড়া খাতের বিভিন্ন খ্যাতনামা অতিথিবৃন্দ, অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ, একাডেমিক ব্যক্তিত্ব, শিল্প বিশেষজ্ঞ, সাপ্লাই চেইন বিশেষজ্ঞ, ব্র্যান্ড প্রতিনিধি, আইএনজিও, জাতিসংঘের প্রতিনিধি এবং যুক্তরাজ্যের প্রকল্প-নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
একটি প্যানেল ডিসকাশন ছিল অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ, যেখানে দেশি ও বিদেশি বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন। এই আলোচনা টিসিএলপি প্রকল্পের কৌশলগত গুরুত্ব তুলে ধরে এবং চামড়া খাতের সাপ্লাই চেইনে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করতে ই-ট্রেসেবিলিটি ‘র মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম বাস্তবায়নের প্রকল্পকে সাধুবাদ জানায়। টিসিএলপি প্রকল্পটি টেকসই চর্চা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পুনঃব্যবহারযোগ্য উৎপাদনকে (রিসাইক্লিং) উৎসাহিত করে, বর্জ্য হ্রাস-উপকরণ দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ব্র্যান্ড উন্নয়নের জন্য নানাবিধ বিনিয়োগকে উৎসাহিত করে, এসব বিনিয়োগ স্থানীয় ও বৈশ্বিক উভয় বাজারেই বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানকে শক্তিশালী করবে। প্যানেলের আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে আন্তঃসহযোগিতার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন, যা নলেজ শেয়ারিং, অর্থায়নের সুযোগ বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা নিশ্চিত করে বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনে ইন্ডাস্ট্রিগুলোর অন্তর্ভুক্তিকে সহজতর করতে পারে। সাসটেইনেবল লেদার ফাউন্ডেশন (এসএলএফ)-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডেবোরা টেইলর অনুষ্ঠানের একটি সেশনে চামড়া শিল্পের ভ্যালু চেইনে ট্রেসেবিলিটির গুরুত্ব ‘পরিবেশ ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ’ থেকে ব্যাখ্যা করেন। সেই সঙ্গে হার্থফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আমিন হোসেইনিয়ান-ফার প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং বাংলাদেশি চামড়া শিল্প নিয়ে তার কিছু অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
নর্থহ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. অলুওয়াসেই ওমোলোসো, এই ই-ট্রেসেবিলিটি প্রকল্পে লিঙ্গ সমতা ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তির (জিইএসআই) বিষয়টিতে আলোকপাত করেন ও বিস্তারিত আলোচনা করেন।
অনুষ্ঠানটি আইডিয়া ট্রি’র হেড অব অপারেশনস কাউসার আলী’র ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে শেষ হয়। তিনি সকল অংশগ্রহণকারীদের উৎসাহ ও মূল্যবান মতামতের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং প্রত্যাশা করেন যে টিসিএলপি প্রকল্পটি বাংলাদেশের চামড়া শিল্পে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে, এ লক্ষ্যে তিনি অ্যাসোসিয়েশন নেতাদের নেতৃত্বে সকল স্টেকহোল্ডারদের পারস্পারিক সহায়তা কমনা করেন।
এএ/
Share your comment :