বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলে দিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম শিক্ষার্থীদের
বাংলাকন্ঠ রিপোর্ট:
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নয় দফা দাবিতে উত্তাল গোটা দেশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে। তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এবার বন্ধ থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খুলে দিতে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত রাজশাহী, কুমিল্লা, জাহাঙ্গীরনগর এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবর এই দাবি জানানোর খবর পাওয়া গেছে।
শনিবার (৩ আগস্ট) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাডে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে একটি বিবৃতি ফেসবুকে পোস্ট করা হয়।
এতে বলা হয়েছে, ‘আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এই মর্মে ঘোষণা দিচ্ছি যে, চলমান আন্দোলনে ক্ষমতাসীন সরকারকর্তৃক গুম-খুন, দমন-পীড়ন ও গণগ্রেপ্তারের কারণে ছাত্র হিসেবে আমরা খুবই আতঙ্ক ও উদ্বেগের মধ্যে দিনাতিপাত করছি। এই অবস্থায় আমরা নিজেদের বর্তমান আবাসস্থলে নিজেদেরকে কিছুতেই নিরাপদ বোধ করছি না। সঙ্গত কারণেই আমরা আমাদের নিরাপদ ক্যাম্পাসের হলগুলোতে শান্তিপূর্ণ উপায়ে ফিরে যেতে চাই। তাই আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আমাদেরকে নিজ নিজ হলগুলোতে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হল খুলে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের শান্তিপূর্ণ আহ্বানে সাড়া না দেয়, তাহলে আমরা নিজেরাই নিজেদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়ে হলে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করব। সেই প্রেক্ষিতে যেকোন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্বয়ং দায়ভার নিতে বাধ্য থাকবে।’
বিবৃতির বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহায়ের ইসলাম বলেন, ‘এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে এই সরকারের গুম, খুন, নির্যাতনে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিজেদের বর্তমান আবাসস্থলে নিরাপদ বোধ করছি না। এজন্যই আমরা আমাদের হলে শান্তিপূর্ণ অবস্থানের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে হল খুলে দিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের দাবি না মানলে আমরা সকল শিক্ষার্থীকে নিয়ে হল দখল করে হলে ঢুকতে বাধ্য হব। আর এই পরিস্থিতে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে তার দায় সম্পূর্ণভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন গ্রুপ এবং বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে, জরিপ করে তাদের মতামতের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘এ ব্যাপারে যদি শিক্ষার্থীরা আমাদের অফিসিয়ালি জানায় তাহলে আমরা আলোচনা করে দেখব। আমরা সবসময়ই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি।’
অপরদিকে হল খোলার দাবির একটি বিজ্ঞপ্তি ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এতে বলা হয়, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল হল বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসের আশপাশের এলাকাসহ বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাসা-বাড়িতে অবস্থান করছে, যা বর্তমানে পুলিশের নির্বিচারে ধরপাকড় ও নানারকম অনিরাপত্তার কারণে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। যেহেতু কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সহায়তার কথা সম্প্রতি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, তাই আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বলছি- আগামী ২৪ ঘণ্টার (রবিবার দুপুর ১২টা) মধ্যে যেকোনোভাবে সকল হল খুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা রবিবার নিজ নিজ হলে নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে নিজেরাই উঠার ব্যবস্থা করবে। সেক্ষেত্রে, যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়ী থাকবে।’
আবাসিক হল খোলার দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও।
শনিবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মহুয়া মঞ্চে’ কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার সমন্বয়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জরুরি সিন্ডিকেট ডেকে হল খোলার ব্যাপারে প্রশাসন যদি সিন্ধান্ত না নেয়, তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপ শিক্ষার্থীরা নিজ হাতে নিবে। ’
আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক তৌহিদ সিয়াম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ১৯ দিন ধরে অন্যায্যভাবে হল বন্ধ করে রেখেছে। আমরা ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম প্রশাসনকে দিয়েছি। যদি হল খুলে দেওয়া না হয়, পরবর্তী ব্যবস্থা আর প্রশাসনের হাতে থাকবে না। শিক্ষার্থীরা ভিসি, প্রক্টর, প্রভোস্টদের পরিত্যাগ করবে। তারা নিজেরা নিজ দায়িত্বে হলে উঠে যাবে।’
এদিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে ছাত্রলীগ মুক্ত ক্যাম্পাস ঘোষণা করে প্রধান ফটকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে গ্রাফিতি এঁকেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এসময় আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খুলে দিতে আল্টিমেটাম দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়করা।
এএ/
Share your comment :