স্বপ্নভঙ্গের গোলাপি বাস: শৃঙ্খলার প্রতিশ্রুতি কীভাবে লোকাল বিশৃঙ্খলায় রূপ নিল

ছবি: লেখক

যাত্রা শুরু হয়েছিল এক প্রতিশ্রুতি নিয়ে—ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফেরানোর দৃঢ় প্রত্যয়।
২০২৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্যোগে যখন গোলাপি রঙের বাস সার্ভিস চালু হয়, তখন রাজধানীবাসীর মনে জেগেছিল আশার আলো। কিন্তু মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবধানে সেই আশার বাস আজ হারিয়েছে পথ।

উত্তরার আজমপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছিলেন এই সার্ভিস। ঘোষিত হয়—এই বিশেষায়িত বাস চলবে নির্ধারিত রুটে, নির্ধারিত স্টপেজে, ই-টিকিটিং ব্যবস্থা থাকবে এবং যাত্রীদের ওঠা-নামা হবে শুধুই স্টপেজ থেকে। বাস্তবে তা টিকলো না খুব বেশিদিন।

আজ গোলাপি বাসগুলো ঢাকার রাস্তায় চলাচল করছে সাধারণ লোকাল বাসের মতো। যত্রতত্র দাঁড়ায়, টিকিট ছাড়াই যাত্রী ওঠে, কোনো ট্রাফিক আইন মানার বালাই নেই। যাত্রীদের ভাড়া নিয়ে হেল্পারদের সঙ্গে চলে কথা কাটাকাটি। অনেকে বলছেন, গোলাপি রঙের চেহারার বাইরে এর ভেতর আর বিশেষ কিছু নেই।

বাড্ডা থেকে পুরানা পল্টন যাওয়ার পথে দেখা যায়, বাসটিতে কোনো নিয়ম মানা হচ্ছে না। গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন যাত্রীরা, কাউন্টার টিকিটের চিহ্ন নেই।

শফিকুল ইসলাম নামের এক যাত্রী বললেন, “শুরুর দিকে টিকিট কেটে উঠতাম। এখন আর কাউন্টারই খোলা থাকে না।”
শারমিন ইসলাম বলেন, “ যে সুবিধার কথা বলেছিল—তা তো এখন একেবারেই নেই। এটা এখন ঠিক লোকাল বাস।”

বাস চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মালিকপক্ষ ও শ্রমিকদের দ্বন্দ্বে অনেক নিয়ম মানা যাচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কুড়িল-বাড্ডা-রামপুরা রোডে যাত্রীদের দুর্ভোগ সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে, মেট্রোরেল সংযুক্ত মিরপুর বা উত্তরা এলাকায় বাসের দুর্ভোগ তুলনামূলকভাবে কম।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের প্রকল্প চালুর আগে প্রয়োগব্যবস্থা, মনিটরিং এবং স্বচ্ছতা জরুরি। শুধু প্রচার নয়, প্রয়োজন স্থায়ী বাস্তবায়ন ও জবাবদিহিতা।

প্রতিশ্রুতি ছিল গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানোর। বাস্তবতা বলছে—স্বপ্ন ছিল গোলাপি, বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে ধূসর।


লেখক: শিক্ষার্থী, যোগাযোগ ও গণমাধ্যম বিভাগ, ইউডা