ফের পাকিস্তানি তারকাদের বিরুদ্ধে ভারতের অ্যাকশন

ভারত-পাকিস্তান

জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর পাকিস্তানের ক্রিকেটার, শোবিজ তারকা এবং সামাজিক মাধ্যম ইনফ্লুয়েন্সারদের অনেকের অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করেছিল ভারত সরকার। যদিও কিছুদিন পর সেগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা সাময়িকভাবে তুলে নেওয়া হয়, তবে সম্প্রতি আবারও বেশ কয়েকটি অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, গতকাল বুধবার পর্যন্ত পাকিস্তানের জনপ্রিয় অভিনেতা ও অভিনেত্রী মাওরা হোসেন, সাবা কামার, আহাদ রাজা মির, ইউমনা জাইদি ও দানিশ তাইমুরের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট ভারতে দেখা যাচ্ছিল। একইভাবে পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেট তারকা শহীদ আফ্রিদি ও শোয়েব আখতারের ইউটিউব চ্যানেলও তখন ভারতীয় ব্যবহারকারীদের জন্য উন্মুক্ত ছিল। তবে এখন এসব অ্যাকাউন্টও নিষিদ্ধের তালিকায় পড়েছে।

তবে পাকিস্তানের জনপ্রিয় তারকা ফাওয়াদ খান, মাহিরা খান ও হানিয়া আমিরের অ্যাকাউন্ট ভারতে বুধবারও দেখা যায়নি। তাদের অ্যাকাউন্ট খুঁজতে গেলে লেখা আসছে, “ভারতে এই অ্যাকাউন্টটি পাওয়া যাচ্ছে না। আইনগত অনুরোধের ভিত্তিতে এই কনটেন্ট ভারতে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।”

এর আগেই, গত মে মাসে ভারত সরকার সব ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, মিডিয়া স্ট্রিমিং সার্ভিস এবং ডিজিটাল মাধ্যমগুলোকে পাকিস্তানে তৈরি ওয়েব সিরিজ, সিনেমা, গান, পডকাস্টসহ অন্যান্য মিডিয়া কনটেন্ট বন্ধের নির্দেশ দেয়। ৮ মে’র ওই সরকারি পরামর্শনামায় বলা হয়, তথ্য প্রযুক্তি (মধ্যস্থতাকারী নির্দেশিকা ও ডিজিটাল মিডিয়া নীতিমালা) বিধি—২০২১-এর আওতায় মাধ্যমগুলোকে নিশ্চিত করতে হবে যে, যাতে কোনো কনটেন্ট ভারতের সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা, জাতীয় নিরাপত্তা বা আইনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি না হয়।

ওই পরামর্শে বলা হয়, ‘ভারতে পরিচালিত সব ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, স্ট্রিমিং সার্ভিস ও ডিজিটাল মাধ্যমকে অবিলম্বে পাকিস্তানে উৎপত্তি হওয়া সব ওয়েব সিরিজ, সিনেমা, গান, পডকাস্ট ও অন্যান্য মিডিয়া কনটেন্ট বন্ধ করতে হবে, তা সাবস্ক্রিপশন-ভিত্তিক হোক বা উন্মুক্ত।’

ওই নির্দেশনার পর জনপ্রিয় পাকিস্তানি শো সম্প্রচার করা বহু ইউটিউব চ্যানেল বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে প্রায় দুই মাস পর, ভারতের বাজারে আবারও হুম টিভি, এআরওয়াই ডিজিটাল ও হার পাল জিও—এর মতো বিনোদনমূলক ইউটিউব চ্যানেল দেখা যাচ্ছে। একইভাবে শহীদ আফ্রিদি ও শোয়েব আখতারের ইউটিউব চ্যানেলও বর্তমানে ভারতে চালু রয়েছে।

এদিকে, গতকাল বুধবার পাকিস্তানের কিছু অ্যাকাউন্ট ভারতে দেখা যেতে শুরু করলে অল ইন্ডিয়ান সিনে ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশন (এআইসিডব্লিউএ) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে জরুরি আবেদন জানায়। তারা পাকিস্তানের সব নাগরিক, শিল্পী, ইনফ্লুয়েন্সার ও বিনোদনমাধ্যমের ডিজিটাল উপস্থিতি ও মিডিয়া চ্যানেল ভারতে পুরোপুরি নিষিদ্ধের দাবি তোলে।

পাকিস্তানের অ্যাকাউন্ট ভারতে চালু হওয়াকে এআইসিডব্লিউএ ‘আমাদের শহীদ সেনাদের আত্মত্যাগের অপমান’ এবং ‘সন্ত্রাসবাদে প্রিয়জন হারানো প্রতিটি ভারতীয়ের জন্য এক আবেগগত আঘাত’ বলে অভিহিত করে।

সংগঠনটি ২৬ / ১১ মুম্বাই হামলা, পুলওয়ামা, উরি এবং পাহেলগামের হামলার কথা উল্লেখ করে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক বলে আখ্যায়িত করে। তাদের ভাষায়, ‘পাকিস্তান এখনো সীমান্তে সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। দেশটি সন্ত্রাসবাদের আশ্রয়স্থল।’ এআইসিডব্লিউএ আরও অভিযোগ করে, ‘এতসব ঘটনার পরও পাকিস্তানের অনেক শিল্পী প্রকাশ্যে ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলছে, লজ্জাও করছে না।’

আবেদনে এআইসিডব্লিউএ তিনটি দাবি জানায়

১. পাকিস্তানের সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্ট ও মিডিয়া চ্যানেলের ওপর অবিলম্বে সর্বভারতীয় ডিজিটাল নিষেধাজ্ঞা।

২. পাকিস্তানের কোনো নাগরিককে ভবিষ্যতে ভারতীয় মিডিয়া, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম কিংবা বিজ্ঞাপনের সঙ্গে যুক্ত করা যাবে না।

৩. শহীদ সেনাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে স্থায়ীভাবে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করা।

উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামের বাইসারানে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ পর্যটক নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ২৪ জন ভারতীয়, একজন নেপালি এবং একজন স্থানীয় বাসিন্দা। এটি ছিল ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর উপত্যকায় সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলা।

এরপর ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকে। পাকিস্তানের ওপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে ভারত, যার মধ্যে রয়েছে ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করা। একই সঙ্গে ভারত ‘অপারেশন সিন্দুর’ চালিয়ে পাকিস্তানের ভেতরে হামলা চালায়। জবাবে পাকিস্তানও ভারতে হামলা চালায়।