
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন
বাংলাদেশের শুল্ক নিয়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের যে আশ্বাস
- আর্ন্তজাতিক ডেস্ক
- ০৮ জুলাই ২০২৫, ১৪:৪৩
-10807.jpg)
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন করে ১৪টি দেশের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন, যার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। বিষয়টি জানিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়েছেন ট্রাম্প। চিঠিতে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। তবে তার আগেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি অনুকূল সমাধান চায় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান গত সোমবার মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম ব্লুমবার্গকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভার্চুয়াল ও সরাসরি উপস্থিত হয়ে অন্তত ৭ দফায় আলোচনা করেছি। আমরা একটা ইতিবাচক ফলাফল প্রত্যাশা করছি।”
বাণিজ্যসচিব আরও বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র ইঙ্গিত দিয়েছে যে, তারা দুটি আলাদা স্তর করবে। এর একটিতে থাকবে বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত বা এলডিসিভুক্ত দেশগুলো। অপর স্তরে থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য বাণিজ্যিক অংশীদারেরা।”
মাহবুবুর রহমান বলেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ‘দ্য মোস্ট অ্যাডভান্স বা সবচেয়ে বেশি অগ্রগামী।’ তিনি আরও জানান, মার্কিন কর্মকর্তারা ব্যক্তিগতভাবে আশ্বাস দিয়েছেন যে, বাংলাদেশের ওপর যে শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে তা আলোচনা এগিয়ে গেলে হয়তো এড়ানো যাবে।
গত বছরের রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি স্বস্তির খবরই হবে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ওপর আগে নির্ধারিত ৩৭ শতাংশ শুল্ক বাংলাদেশের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করছে, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে। কারণ, এই খাতই দেশের মোট রপ্তানির ৮০ শতাংশের জোগান দেয় এবং এতে লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে বাংলাদেশকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামের চেয়ে সমান বা আরও ভালো একটি চুক্তি করতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। ভিয়েতনাম সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে চুক্তিটি করেছে, তাতে রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হয়েছে। তবে যদি কোনো পণ্য ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে রপ্তানি হয়, তাহলে সেখানে ৪০ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে।
বাণিজ্যসচিব জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে, বাংলাদেশে প্রবেশ করা মার্কিন পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার। বিশেষ করে যেসব খাতে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে অন্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক বাণিজ্য চুক্তি করেছে, যেমন অটোমোবাইল খাত, সেসব ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্র বেশি আগ্রহী।
মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, দেশ এখনো চূড়ান্ত নথিপত্রের জন্য অপেক্ষা করছে, তাই এখনই কোনো বাধ্যবাধকতা গ্রহণ করা হবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা একতরফা সিদ্ধান্ত নেব না। এটা হবে একটি পরামর্শভিত্তিক প্রক্রিয়া।’
উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব জানিয়েছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি দল ওয়াশিংটনে আছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করার জন্য। উভয় পক্ষের জন্যই একটি লাভজনক চুক্তির লক্ষ্যে কাজ করছে এই প্রতিনিধিদল।
প্রেসসচিব শফিকুল আলম তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন ওয়াশিংটনে অবস্থান করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানও এই দলের সদস্য।’
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ট্রাম্পের শুল্কসংক্রন্ত চিঠির বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, ‘গতকাল (সোমবার) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে একটি চিঠি এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করবে, যা কার্যকর হবে ১ আগস্ট থেকে।’
মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনার বিষয়ে প্রেস সচিব তাঁর পোস্টে বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশি প্রতিনিধিদল এরই মধ্যে বেশ কয়েক দফা বৈঠক করেছে। আগামী ৯ জুলাই অর্থাৎ, বুধবার আরও এক দফার বৈঠক হবে। শেখ বশিরউদ্দিন এই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন। উভয় দেশের জন্য লাভজনক হবে—ওয়াশিংটনের সঙ্গে এমন একটি শুল্কচুক্তির অপেক্ষায় আছে ঢাকা।’