
মার্কিন শুল্ক
পোশাক রপ্তানিতে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা
- বাংলাকণ্ঠ ডেস্ক:
- ১০ জুলাই ২০২৫, ১০:৩৭
-11040.jpg)
বাংলাদেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর মার্কিন ক্রেতারা নতুন অর্ডার নিয়ে আলোচনা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। পাশাপাশি যেসব পণ্যের চালান ইতোমধ্যে প্রক্রিয়াধীন, সেগুলোর ক্ষেত্রে বাড়তি শুল্ক আরোপ হলে অতিরিক্ত খরচের একটি অংশ বাংলাদেশি সরবরাহকারীদের ওপর চাপিয়ে দিতে বলছেন তারা।
বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, নতুন এই শুল্কহার ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। এতে করে মার্কিন বাজারে প্রবেশের সময় বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আগের প্রায় ১৬ শতাংশের সঙ্গে নতুন ৩৫ শতাংশ যোগ হয়ে মোট শুল্ক দাঁড়াতে পারে প্রায় ৫১ শতাংশ।
শিল্পখাতের নেতারা আশঙ্কা করছেন, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের ৮.৪ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি বাজার, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।
রপ্তানিকারকরা বলছেন, নতুন শুল্ক নিয়ে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা তাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে যেসব পণ্যের অর্ডার দেওয়া হয়ে গেছে কিন্তু এখনও পাঠানো হয়নি, সেগুলোর খরচ ভাগাভাগি নিয়ে ক্রেতারা নতুন করে আলোচনা শুরু করায় এই উদ্বেগ আরও বেড়েছে।
২০ শতাংশের বেশি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি করা এক গার্মেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের একটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বুধবার আমাদের মিটিং হয়েছে। তারা পাইপলাইনে থাকা অর্ডারে ট্যারিফের কারণে বাড়তি টাকার একটি অংশ বহন করার জন্য আমাদের বলছে।'
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের জন্য পাইপলাইনে থাকা মোট ক্রয়াদেশের পরিমাণ ২ বিলিয়ন ডলারের মতো হতে পারে।
আরেক শীর্ষস্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সক্ষমতার তফাত তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, 'মার্কিন ক্রেতারা বলছে: "বাংলাদেশে ভিয়েতনামের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি ট্যারিফ, কীভাবে অর্ডার প্লেস করব?"'
উল্লেখ্য, ভিয়েতনামের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক চূড়ান্ত করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেকজন রপ্তানিকারক বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক ক্রেতা অর্ডার নেগোশিয়েট না করে দেশটির সরকারের সিদ্ধান্ত জানার জন্য অপেক্ষা করছিল এতদিন। এখন ওই অর্ডার নিয়ে আর নেগোসিয়েশনের সম্ভাবনা দেখছি না।'
বাংলাদেশ গার্মেন্টস বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি কাজী ইফতেখার হোসেন বলেন, 'বাংলাদেশের পণ্যে ভিয়েতনামের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি ট্যারিফ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করতে হয়, তাহলে এর ১০ শতাংশের মতো ভার সরবরাহকারীর ওপর সেখানকার ক্রেতারা দিতে চাইবে, এটা স্বাভাবিক।'
তিনি আরও বলেন, এভাবে যদি বাড়তি ব্যয় ভাগাভাগি করতে হয়, তাহলে চূড়ান্তভাবে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরাই লোকসানে পড়বে এবং দীর্ঘমেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বাজার ধরে রাখতে পারবে না।
কাজী ইফতেখার বলেন, চলতি মাসের ১০ তারিখের পর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য শিপমেন্ট করা হলে ওই পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বন্দরে পৌঁছাতে আগস্ট পার হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে নতুন আরোপ করা ৩৫ শতাংশ হারে শুল্ক দিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্র একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার, যেখানে ২০২৪ সালে প্রায় ৮.৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ কারণেই রপ্তানিকারকদের মধ্যে উদ্বেগ তুলনামূলকভাবে বেশি।
তাদের আশঙ্কা, যদি দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে নতুন শুল্কহার কমানো না যায়, তবে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির পরিমাণ কমতে শুরু করবে।
এ অবস্থায় ইউরোপসহ বিকল্প বাজারে প্রবেশের চেষ্টা করলে সেখানে প্রতিযোগিতার কারণে মূল্যহ্রাসের সম্ভাবনাও দেখা দিতে পারে, যা সামগ্রিকভাবে পোশাক খাতে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।