
বিএনপির অনন্য রাজনৈতিক সৌজন্যতা
- ২০ জুলাই ২০২৫, ০১:৩৫

রাজনীতি মানেই যে সবাই খারাপ, এখানে কোনো সৌজন্যতা নাই- এ ধারণা ভেঙ্গে দিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি জাতীয় সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়া জামায়াতের আমীর ডা.শফিকুর রহমানকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে গিয়ে প্রমান করলেন মাঠে-ময়দানে যাই হোক, কিন্তু বাস্তবে রাজনীতিতে এখনো সৌজন্যতা আছে। তার এমন আচরণ দেশের অস্থির রাজনীতিতে শিষ্টাচার ও সৌজন্যতাবোধের এক অভূতপূর্ব ও অনন্য নজির স্থাপন করলো।
ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জামায়াত আমীরকে দেখতে শনিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে সেখানে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসময় তিনি জামায়াত আমীরের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং চিকিৎসার খোঁজ নেন। তার সাথে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানও উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্রান্তিকালীন সময়ে জামায়াত আমীরের সুস্থ থাকাটা খুবই জরুরি। সমাবেশে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। উনার সুস্থতার তথ্য জেনে আমরা আশ্বস্ত হয়েছি। তিনি বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে আমরা জামায়াত আমীরকে দেখতে এসেছি।
দলীয় আমীরকে দেখতে আসায় বিএনপি’র নেতৃবৃন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে জামায়াত। দলটির নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের হাসপাতালে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, জামায়াত আমীর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে দোয়া চেয়েছেন। তিনি বলেন, জামায়াত আমীর এখন সুস্থ আছেন। তার হার্ট, কিডনি স্বাভাবিক আছে। অতিরিক্ত গরমের কারণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।
এদিকে অসুস্থ জামায়াতের আমিরকে দেখতে বিএনপির মহাসচিবের হাসপাতালে ছুটে আসা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে মির্জা ফখরুলকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন নেটিজেনরা। তারা জামায়াতের সমাবেশে বিএনপিকে দাওয়াত না দেওয়ায় সমালোচনার ঝড় তুলছেন। কেউ কেউ বলছেন, জামায়াত তার 'জাতীয় মহাসমাবেশ' এ বিএনপিকে দাওয়াত দেয়ার সৌজন্যতাটুকু কিংবা উদারতাটুকুও দেখাতে পারে নি। বরং বিএনপি থেকে তুলনামূলক ছোট দল হয়েও তাদের এই আচরণে অহংবোধই প্রকাশ পেয়েছে বলা চলে।
কিন্তু রাজনীতি বড্ড কঠিন জিনিস। কারণ, সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান অসুস্থ্য হয়ে হসপিটালে ভর্তি হলে সেখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ড. আব্দুল মঈন খানসহ নেতৃবৃন্দ জামায়াত আমীরকে গিয়ে দেখে এসেছেন। এতে দিনের বেলা সমাবেশে দাওয়াত না পেয়েও অসুস্থ্য আমীরকে দেখতে যাওয়ার এই ঘটনা বাংলাদেশের অস্থির রাজনীতিতে শিষ্টাচার ও সৌজন্যতাবোধের এক অভূতপূর্ব উদাহরণ হয়েই থাকবে।
আবার কেউ কেউ বলছেন, জামায়াত হয়তো চেয়েছিলো তাদের এতবড় মহাসমাবেশে বিএনপিকে দাওয়াত না দিয়ে কৌশলে একটা রাজনৈতিক ধাক্কা দিবে। কিন্তু উল্টো বিএনপির নেতৃবৃন্দের জামায়াত আমীরকে দেখতে হাসপাতালে যাওয়া মানবিক দিক থেকে অসাধারণ দৃষ্টান্ত হলেও কৌশলে কিন্তু জামায়াতেরই গায়ে বিএনপির পাল্টা ধাক্কা হিসেবে দেখছে জনগণ।
নেটিজেনদের আরো মন্তব্য হচ্ছে, রাজনীতি করতে হলে সুদূরপ্রসারি চিন্তা এবং মেধা দিয়েই করা উচিৎ। না হলে ছাপড়িপনা রাজনীতি আপনাকে অদূর ভবিষ্যতে বন্ধুহীন করে ফেলবে।