'ভাষা আন্দোলন' শুরু করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

মমতা

ভারতে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস বেশ পুরনো হলেও ১৯৬১ সালে আসামের ভাষা আন্দোলন ইতিহাস হয়ে আছে। ওই বছরের ১৯ মে ভাষা আন্দোলন চলাকালে শিলচরের পুলিশ ১১ জন বাঙালি প্রতিবাদীকে হত্যা করে। শিলচরের বাঙালিরা শহীদদের মৃতদেহ নিয়ে প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন। এই ঘটনার পর আসাম সরকার বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষাকে সরকারী ভাষার স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। এবার ভারতে বাংলা ভাষাভাষী অভিবাসীদের ওপর হামলার প্রতিবাদের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার বীরভূম জেলার বোলপুর থেকে তার বহুল প্রচারিত 'ভাষা আন্দোলন'-এর সূচনা করেন।

তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী অভিযোগ করেন, জাতীয় সত্তা থেকে বাঙালি পরিচয় মুছে ফেলার চেষ্টা করতেই এ হামলাগুলো চালানো হচ্ছে।

প্রতিবাদ মিছিলটি নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতনের জন্য পরিচিত বোলপুরের ট্যুরিস্ট লজ মোড় থেকে শুরু হয়ে জামবোনি বাসস্ট্যান্ড—প্রায় তিন কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে শেষ হয়।

হাতে রবীন্দ্রনাথের একটি প্রতিকৃতি ধরে মিছিলের নেতৃত্ব দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাস্তার দুইপাশে দাঁড়ানো জনতার দিকে হাত নেড়ে অভিবাদন জানান তিনি।

মিছিল চলাকালে দলীয় কর্মীরা প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের প্রতীকী প্রতিবাদ সংগীত 'আমি বাংলায় গান গাই' পরিবেশন করেন। পাশাপাশি লাল-সাদা শাড়ি পরিহিত নারীরা শঙ্খ বাজান, যা মিছিলে একটি স্বতন্ত্র বাঙালি সাংস্কৃতিক রঙ এনে দেয়।

নিজের পরিচিত সুতির শাড়ি ও শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীর ঐতিহ্যবাহী উত্তরীয় পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মিছিলের নেতৃত্ব দেন। তার দুই পাশে ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় নেতা ও মন্ত্রীরা। এটি ছিল রাজ্যজুড়ে পরিকল্পিত আন্দোলনের প্রথম পদক্ষেপ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভূমি ও বাংলার সাংস্কৃতিক প্রাণকেন্দ্র বোলপুরকে বেছে নেওয়া ছিল একটি অত্যন্ত প্রতীকী সিদ্ধান্ত।

গত সপ্তাহেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কর্মীদের ২৮ জুলাই থেকে নতুন এক আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানান, একে তিনি দ্বিতীয় 'ভাষা আন্দোলন' হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি এর সাদৃশ্য টানেন ১৯৫২ সালের ঢাকার ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে।

১৯৫২ সালে ছাত্ররা প্রাণ দিয়ে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতির দাবি জানান। এ আন্দোলনের স্মরণে জাতিসংঘ পরে ২১ ফেব্রুয়ারিকে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে ঘোষণা করে।

বাংলা ভাষাভাষী অভিবাসীদের উপর কথিত হয়রানির ঘটনা রাজ্যের রাজনীতি উত্তপ্ত করে তুলেছে। এরই মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর এই মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। গুজরাট, হরিয়ানা, রাজস্থান, ওডিশা, তামিলনাড়ু ও মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যগুলোতে এই ধরনের ঘটনার খবর প্রকাশিত হয়েছে, যা বাংলার পরিবারগুলোর মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করেছে।