
বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আমার ওপর নির্ভর করে: মডেল মেঘনা
- ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৩:৫৫

বাংলাদেশের আলোচিত মডেল মেঘনা আলম। বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে সখ্যতা করে প্রতারণা করেন বলে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। এদিকে প্রতারণা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে করা মামলায় মেঘনার জব্দকৃত মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপে রাষ্ট্রবিরোধী কোনো উপাদান রয়েছে কি না, তা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলামের আদালত এই আদেশ দেন।
সকাল ১১টার দিকে পাসপোর্ট, মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ ফেরত পেতে আদালতে হাজির হন মেঘনা আলম। এসময় তার হাতে ছিল খেজুরের একটি কার্টন ও জায়নামাজ। পরবর্তী সময়ে তার আবেদনের ওপর শুনানি হয়।
আদালতে মেঘনার পক্ষে আইনজীবীরা জানান, তিনি একজন লিডারশিপ ট্রেইনার এবং নিয়মিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তাকে বিদেশ যেতে হয়। এজন্য ব্যক্তিগত আইফোন-১৬ প্রো, ম্যাকবুক, অপো মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব ফেরতের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেওয়া যাবে বলেও তারা আদালতকে জানান।
তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. হারুন অর রশিদ এসবের বিরোধিতা করে বলেন, 'আসামি বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্রের কূটনীতিক বা প্রতিনিধি ও দেশীয় ধণাঢ্য ব্যবসায়ীদের সাথে প্রতারণা করে আসছেন। এই মামলাটি চাঞ্চল্যকর। আসামির মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ দিয়ে কার কার সাথে যোগাযোগ করেছেন তা জানা দরকার। আরও কার কার সাথে ব্লাকমেইল করেছে, কাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেছেন তা তদন্ত হয়ে আসা জরুরি। আসামির জিনিসপত্র ফেরতের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ ঘোর আপত্তি জানাচ্ছি।'
কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে মেঘনা আদালতকে বলেন, 'আমার সঙ্গে বিভিন্ন রাষ্ট্রদূতের প্রফেশনাল [পেশাগত] সম্পর্ক রয়েছে। সৌদি রাষ্ট্রদূত ইশা আমাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেছিল। তার যথেষ্ট প্রমাণ আমার কাছে রয়েছে। আমি যথেষ্ট প্রমাণ দিতে পারব আমাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলা হয়েছিল।'
তখন বিচারক তার উদ্দেশে বলেন, এখন এটা আলোচনার বিষয় নয়।
মেঘনা আরও বলেন, 'বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আমার ওপর নির্ভর করে। আমি ছয়টি মহাদেশে ১০টি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করেছি এবং নারীদের অধিকার নিয়ে বহু কাজ করেছি। তাই আমার ম্যাকবুক, ল্যাপটপ, মোবাইল ও পাসপোর্ট ফেরত চাই।'
জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, মামলার এজাহারে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, আসামি মূলত নারীদের ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইলের কাজ করতেন। এর প্রতিবাদে মেঘনা বলেন, 'আপনি রাষ্ট্রদূতকে অসম্মান করছেন।' এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। মেঘনা বলেন, 'আমি এখন পর্যন্ত নিরপরাধ।'
সব শুনানি শেষে আদালত মেঘনা আলমের মোবাইল, ল্যাপটপ ও ম্যাকবুকে রাষ্ট্রবিরোধী কোনো উপাদান আছে কিনা, তা তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেন। একই সঙ্গে এসব ডিভাইসের মালিকানা যাচাই করে আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মেঘনা আলম, দেওয়ান সমিরসহ অজ্ঞাত ২-৩ জন মিলে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র গড়ে তুলেছেন। তারা বিভিন্ন আকর্ষণীয় ও স্মার্ট মেয়েদের ব্যবহার করে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিক ও দেশীয় ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলতেন। পরবর্তীতে অবৈধ সম্পর্কের সূত্র ধরে বিভিন্ন কৌশলে অর্থ আদায় করতেন এবং সম্মানহানির ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতেন।
দেওয়ান সমির কাওয়াই গ্রুপ ও সানজানা ইন্টারন্যাশনাল নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। তিনি আগে 'মিরআই ইন্টারন্যাশনাল ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড' নামে একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন। তার প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন নারীকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নিয়োগ দিয়ে বিদেশিদের সঙ্গে সহজে যোগাযোগের পথ তৈরি করতেন। এরপর ব্ল্যাকমেইল করে বড় অঙ্কের অর্থ আদায় করতেন।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১০ এপ্রিল বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের আটকাদেশ দিয়ে মেঘনা আলমকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে সেই আদেশ বাতিল হয়। ১৭ এপ্রিল ধানমণ্ডি থানায় দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর ২৮ এপ্রিল আদালত তাকে জামিনে মুক্তি দেন।