
আত্ম-প্রবঞ্চনায় ভুগছে ইসরাইলী সেনারা, করছে আত্মহত্যাও
- ০৩ আগস্ট ২০২৫, ২০:৩২
-10346.jpg)
নিজেদের অপরাধে নিজেরাই ভুগছেন ইসরাইলী সেনারা। নিরিহ ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো অমানবিক নির্যাতনে গাজায় পোড়া মাটি নীতি গ্রহণ করা দখলদার ইসরাইলের কমপক্ষে ১ লক্ষ সেনা সদস্য কাজে ফেরেনি। তাদের কেউ কেউ বেঁছে নিচ্ছেন আত্মহত্যার পথ।
দীর্ঘ প্রায় ২২ মাস ধরে ইসরায়েলের ভয়ংকর আগ্রাসনের শিকার গাজাবাসী। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় হামাসকে উৎখাত আর তাদের কবল থেকে জিম্মি উদ্ধারের নামে ইসরায়েলের নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চলছেই। ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার হামলায় প্রতিদিনই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের লাশের মিছিল। একদিকে আকাশ ও স্থল অভিযান, অন্যদিকে ত্রাণ আটকে সৃষ্টি করা দুর্ভিক্ষ; গাজা যেন সাক্ষাৎ নরক হয়ে উঠেছে তার বাসিন্দাদের জন্য।
এদিকে, ইসরায়েলের বানানো সেই ‘নরক’ থেকে ফিরে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন দেশটির বহু সেনা। ঘটছে একের পর এক আত্মহত্যার ঘটনা। ইসরায়েলি প্রচারমাধ্যমের তথ্য অনুসারে, ছুটি শেষেও কাজে ফেরেননি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) প্রায় এক লাখ রিজার্ভ সেনা।
সম্প্রতি তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টিআরটি গ্লোবালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সাল থেকে ২০২৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত অন্তত ৫০ ইসরায়েলি সেনা আত্মহত্যা করেছেন। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৪ ও ২০২১ সালে ছিল ১১ জন।
সর্বশেষ ২৭ জুলাই দক্ষিণ ইসরায়েলে নিজ বাসায় আত্মহত্যা করেন রিজার্ভ সেনা অ্যারিয়েল মিয়ার তামান। এতে ইসরায়েলি সৈন্যদের মানসিক সমস্যায় জর্জরিত হওয়ার বিষয়টি আবারও আলোচনায় উঠে আসে।
এর আগে, ৫ জুলাই আত্মহত্যা করেন গাজা ও লেবাননে দায়িত্ব পালন করা রিজার্ভ সেনা ড্যানিয়েল এদ্রি। তিনি পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে (পিটিএসডি) আক্রান্ত ছিলেন।
এই জুলাইয়েই আরও দুই আইডিএফ সেনার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। এই মৃত্যুকেও ‘আত্মহত্যা’ বলে সন্দেহ করছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। এছাড়া, ১৫ জুলাই দক্ষিণ ইসরায়েলের এক ঘাঁটিতে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন প্যারাট্রুপার কর্পোরাল ড্যান ফিলিপসন। পরে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের সংঘাত শুরুর পর থেকে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৮টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর আগে, ২০২৩ সালের শুরুতে আরও ১০ সৈন্য আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। সবমিলিয়ে দুই বছরে মোট ৩৮ জন ইসরায়েলি সেনা আত্মহত্যা করেন।
এছাড়াও, যারা দায়িত্বের বাইরে থাকা অবস্থায় আত্মহননের পথ বেছে দিয়েছেন তাদের হিসাব এই তালিকায় নেই।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনীতে মানসিক সমস্যার বিষয়টি নতুন কিছু না হলেও বিশেষজ্ঞদের অভিমত, গাজায় গণহত্যা ও ক্রমবর্ধমান সহিংসতার সঙ্গে এই আত্মহত্যার বিষয়টি জড়িয়ে আছে।
ইসরায়েলি সেনাদের হাতে দুই বছরেরও কম সময়ে গাজায় প্রায় ৬০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে প্রায় ১৭ হাজার শিশু। তাদের অনেককেই পুড়ে যাওয়া অথবা অঙ্গ হারানো অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আত্মহত্যা করা সেনাদের বেশিরভাগই রিজার্ভ সেনা। তারা পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে (পিটিএসডি) আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও চাকরিতে ফেরত এসে পুনরায় গাজা আগ্রাসনে যোগ দিয়েছিলেন।
ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কেএএন’র তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রায় তিন হাজার ৭৭০ জন সেনার পিটিএসডি ধরা পড়েছে। গত মার্চে দখলদার দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পুনর্বাসন বিভাগ জানিয়েছে, গাজা আগ্রাসন শুরুর পর থেকে প্রায় ১৬ হাজার সেনাকে মানসিক সেবা দিয়েছে তারা।
এরই মধ্যে আইডিএফের অনেক রিজার্ভ সেনা পুনরায় দায়িত্বে ফিরতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৮০ শতাংশ রিজার্ভ সেনা কাজে যোগ দিয়েছে্ন। তবে, দেশটির সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কেএএন জানিয়েছে, এটি ৬০ শতাংশের মতো। সে হিসাবে প্রায় এক লাখ সেনা পুনরায় কাজে যোগ দেননি।
চলতি বছরের এপ্রিলে ইসরায়েল বিমান বাহিনীর প্রায় এক হাজার সদস্য গাজায় আগ্রাসন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিলেন। এছাড়াও, গত মে মাসে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর শতাধিক কর্মকর্তা এক খোলা চিঠিতে এই আগ্রাসনকে অনৈতিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেন।