
মার্কিন শুল্কারোপে ইন্দোনেশিয়ার যে সেক্টরে ধস!
- ০৬ আগস্ট ২০২৫, ১২:৪৬

যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির কারণে ইন্দোনেশিয়ার চিংড়ি শিল্প বড় ধরনের সংকটে পড়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমদানি শুল্ক কার্যকরের পর দেশটির রপ্তানিকারকরা যুক্তরাষ্ট্রের বাজার হারানোর আশঙ্কায় নতুন বাজার খুঁজে বেড়াচ্ছেন। এতে একদিকে যেমন খাতটির সম্প্রসারণ থমকে গেছে, তেমনি হুমকির মুখে পড়েছে প্রায় ১০ লাখ শ্রমিকের জীবিকা।
জাভা দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে ১৫০টি পুকুর নিয়ে পরিচালিত চিংড়ি খামারের মালিক ডেনি লিওনার্দো জানান, এ বছর আরও ১০০টি পুকুর যুক্ত করার পরিকল্পনা থাকলেও, শুল্কের কারণে মার্কিন অর্ডার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেই পরিকল্পনা স্থগিত রাখতে হচ্ছে।
“যুক্তরাষ্ট্র যখন ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি বাজারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, তখন সবাই নতুন বাজার খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে যেন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমানো যায়,” বলেন ৩০ বছর বয়সী এই চিংড়ি চাষি।
যুক্তরাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ার চিংড়ির সবচেয়ে বড় বাজার, যেখানে দেশটি গত বছর মোট $১.৬৮ বিলিয়ন রপ্তানির ৬০% বিক্রি করেছে। ১ মার্কিন ডলার = ১৬,৩৮০ রুপিয়া (ইন্দোনেশিয়ান)।
ইন্দোনেশিয়ার চিংড়ি চাষিদের সংগঠনের প্রধান আন্দি টামসিল অনুমান করছেন, ১৯% শুল্কের কারণে ২০২৫ সালে রপ্তানি ২০২৪ সালের তুলনায় ৩০% কমে যেতে পারে, যা প্রায় ১০ লাখ শ্রমিকের জীবিকা হুমকির মুখে ফেলবে।
জুলাইয়ের চুক্তির পরও অধিকাংশ মার্কিন ক্রেতা এখনো চিংড়ি কেনা বন্ধ রেখেছে বলে জানিয়েছেন সামুদ্রিক খাদ্য ব্যবসায়ীদের একটি সংগঠনের প্রধান বুদি উইবোও। তিনি বলেন, নতুন শুল্ক হার ইন্দোনেশিয়াকে বিশ্বের সর্বোচ্চ খামারি চিংড়ি উৎপাদক ইকুয়েডরের তুলনায় পিছিয়ে দিচ্ছে, যাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি শুল্ক নির্ধারিত হয়েছে মাত্র ১৫%।
চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় চিংড়ি আমদানিকারক হলেও, এতদিন উচ্চ মূল্য পাওয়ায় ইন্দোনেশীয় ব্যবসায়ীরা যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য পাঠাতে আগ্রহী ছিলেন। আগে চীনে রপ্তানি হতো মাত্র ২%। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে।
চীনা বাজার ধরতে নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছে ইন্দোনেশিয়া। জুন মাসে গুয়াংজু সফর করেছেন ইন্দোনেশিয়ার শিল্প প্রতিনিধিরা, যেখানে চীনের আমদানিকারক, রেস্তোরাঁ মালিক এবং কৃষিভিত্তিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ভবিষ্যতে আরও সফরের পরিকল্পনা রয়েছে।
“চীন বছরে ১০ লাখ টনের মতো চিংড়ি আমদানি করে। যদি আমরা তার ২০%ও ধরতে পারি, তাহলে বিশাল বাজার খুলে যাবে আমাদের জন্য,” — বলেন আন্দি টামসিল।
বিকল্প বাজার হিসেবে মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিকেও নজর দিচ্ছে ইন্দোনেশিয়া। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছে জাকার্তা।
সবশেষে ডেনি লিওনার্দো আশাবাদী, তার পারিবারিক ব্যবসা টিকে থাকবে। তবে দ্রুত সম্প্রসারণ সম্ভব হবে না বলেও জানান তিনি।
“আমি আশাবাদী যে, আমার কোম্পানি টিকে থাকবে। কিন্তু বৃদ্ধির ব্যাপারে আমি ততটা আশাবাদী নই,” — বলেন তিনি।