ফের চালু হচ্ছে বেক্সিমকো টেক্সটাইল

বেক্সিমকো

আবারও চালু হতে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা বেক্সিমকো টেক্সটাইলস লিমিটেডের কারখানাগুলো। জাপানি সংস্থা রিভাইভাল প্রজেক্ট লিমিটেড, জনতা ব্যাংক এবং বেক্সিমকো গ্রুপের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় লিজ চুক্তির আওতায় চালু হতে যাচ্ছে কোম্পানিগুলো।

শ্রম মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, এই উদ্যোগ বাংলাদেশ সরকারের নীতিগত সমর্থন পেয়েছে, যার লক্ষ্য দেশের অন্যতম বৃহত্তম টেক্সটাইল কার্যক্রমের পুনরুদ্ধার, একইসঙ্গে প্রায় ২৫,০০০ কর্মীর জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি।

রিভাইভাল প্রজেক্ট লিমিটেড শুরুতে বিদেশি ব্যাংক থেকে ২ কোটি ডলারের ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির ব্যবস্থা করবে, যা বৈশ্বিক পোশাক শিল্প জায়ান্ট ইনডিটেক্স এর ক্রয়াদেশ বাস্তবায়নে বেক্সিমকো টেক্সটাইলসকে মূলধন জোগাবে। কয়েক মাস ধরে বেতন বকেয়া থাকার প্রতিবাদে শ্রমিক বিক্ষোভের পর ফেব্রুয়ারি থেকে অচল হয়ে থাকা প্রতিষ্ঠানটি এরপর অর্ডার পূরণের জন্য পোশাক উৎপাদন করবে।

বেক্সিমকো গ্রুপ আনুষ্ঠানিকভাবে রিভাইভালের সম্মত রাজী হয়েছে জানিয়ে বেক্সিমকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান কায়সার চৌধুরী বলেন, "১০ মাস ধরে আমাদের অক্লান্ত চেষ্টার পর কারখানা চালুর বিষয়ে অগ্রসর হতে পারছি। সরকারও বুঝতে পারছে যে, কারখানাগুলো চালু রাখা দরকার। এবিষয়ে সরকারের নীতিগত সম্মতি রয়েছে।"

প্রায় ১৫টি কারখানা নিয়ে গঠিত বেক্সিমকো টেক্সটাইল লিমিটেড—গণঅভ্যুত্থানে পতিত প্রধানমন্ত্রী হাসিনার বেসরকারিখাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন, বর্তমানে যিনি কারাগারে রয়েছেন।

বেক্সিমকো টেক্সটাইল পুনরায় চালুর সুবিধার্থে, জনতা ব্যাংক প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করবে। লিজ বা ইজারার চুক্তি অনুযায়ী, রিভাইভাল প্রজেক্ট কোম্পানিটির সম্ভাব্য আয় থেকে একটি সার্ভিস চার্জ পাবে, আর বাকি মুনাফা দিয়ে বকেয়া ঋণ পরিশোধ করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক রপ্তানি-সংক্রান্ত ব্যাংকিং নীতিগুলো শিথিল করবে এবং রিভাইভাল প্রজেক্ট লিমিটেডকে ঋণ সুবিধা দেবে, যেখানে অর্থ মন্ত্রণালয়েরও সমর্থন থাকবে।

সভায় বাংলাদেশ ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), রিভাইভাল প্রজেক্ট লিমিটেড এবং বেক্সিমকো টেক্সটাইলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

ত্রিপক্ষীয় লিজ চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে বেক্সিমকো টেক্সটাইলের কারখানাগুলো পুনরায় চালু করার বিষয়টি সমন্বয় করছে শ্রম মন্ত্রণালয়, যা ২২ জুলাই শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামানের সভাপতিত্বে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় অনুমোদিত হয়। সভায় বাংলাদেশ ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), রিভাইভাল প্রজেক্ট লিমিটেড ও বেক্সিমকো টেক্সটাইলের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

জনতা ব্যাংকের ঋণ ২৩ হাজার কোটি টাকা

সরকার এর আগে বকেয়া বেতন পরিশোধের জন্য বেক্সিমকোকে সুদমুক্ত ৫৮৫ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে। এছাড়া কেবল জনতা ব্যাংকের কাছেই ২৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। অন্যান্য ব্যাংকসহ ব্যাংকখাতে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের।

কারখানাগুলো পুনরায় চালু করতে রিভাইভাল জাপান সরকারের কাছে 'এক্সপ্রেস অব ইন্টারেস্ট' বা আগ্রহপত্র দাখিল করার পর বেক্সিমকো গ্রুপও এ বিষয়ে 'লেটার অব কমফোর্ট' দিয়েছে।

এছাড়া, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে জাপান কোম্পানিটি— ডেলয়েটকে নিরীক্ষক সংস্থা হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে এবং ফলো-আপ ম্যানেজমেন্টে জাপানিজ অভিজ্ঞ টিমের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছে।

বিনিয়োগ করা হবে ২ কোটি ডলার

অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর এবং ইকোমিলি-এর প্রেসিডেন্ট ড. ফারহান এস করিম জানান, রিভাইভাল জাপান ও ইকোমিলির পক্ষ থেকে বেক্সিমকো টেক্সটাইল চালু করতে ২ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী  বুয়েট ইনভেস্টমেন্ট নেওয়ার্ক -এর মাধ্যমে এটি ১০ কোটি ডলারে উন্নীত করাও সম্ভব হবে। "তবে বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা ফিরিয়ে আনা, দক্ষ কর্মী নিয়োগ ও টেকসই উৎপাদন নিশ্চিত করতে ২-৩ বছর সময় লাগবে"- বলে জানান তিনি।

বেক্সিমকোর এমডি ওসমান কায়সার চৌধুরী বলেন, ব্যাংকগুলোর সাথে নতুন ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল নিয়ে আলোচনা করার জন্য রিভাইভাল জাপানের কাছে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় আছে। যদি সফল হয়, তবে চুক্তিটি এই মাসের মধ্যে সই হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, "এলসি খোলার পর তার পেমেন্ট পেতে ১২০ দিন সময় লাগে। এই সময়ে শ্রমিকদের বেতনসহ অন্যান্য খরচের জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল লাগবে। ব্যাংক এ বিষয়ে সম্মতি দিলে আগামী বছরের মধ্যেই এ ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হবে।"