
এশিয়ায় ক্রিপ্টোতে রমরমা
- ২১ আগস্ট ২০২৫, ১৫:০৯

যত দিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে ক্রিপ্টোকারেন্সির জনপ্রিয়তা। সেইসঙ্গে বাড়ছে এর শেয়ারমূল্যও। এশিয়ার ধনী পরিবার ও ফ্যামিলি অফিসগুলো ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। ডিজিটাল সম্পদের প্রতি আশাবাদ, মূলধারায় গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাজারে অনুকূল নিয়ন্ত্রক নীতিমালার কারণে এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
ফ্যামিলি অফিস বা পারিবারিক অফিস বলতে এমন একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে বোঝানো হয়, যা ধনী পরিবারের জন্য সম্পদ ব্যবস্থাপনা, বিনিয়োগ, কর পরিকল্পনা ও উত্তরাধিকারসংক্রান্ত কাজ পরিচালনা করে।
বিভিন্ন ওয়েলথ ম্যানেজাররা জানিয়েছেন, ক্রিপ্টো নিয়ে ধনীদের আগ্রহ বেড়েছে। তারা বেশি বেশি প্রশ্ন করছেন, এক্সচেঞ্জগুলোতে লেনদেন বেড়েছে এবং ক্রিপ্টো ফান্ডের চাহিদা তুঙ্গে। ফলে এশিয়ার উচ্চ নেট-মূল্যের বিনিয়োগকারীরা এখন এই খাতে আরও সম্পৃক্ত হতে চাইছেন।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক নেক্সটজেন ডিজিটাল ভেঞ্চারের প্রতিষ্ঠাতা জেসন হুয়াং বলেন, ‘মাত্র কয়েক মাসেই আমরা ১০ কোটি ডলারের বেশি সংগ্রহ করেছি। আমাদের বিনিয়োগকারীরা, যাদের অধিকাংশই ফ্যামিলি অফিস এবং ইন্টারনেট বা ফিনটেক উদ্যোক্তা, তারা এখন ডিজিটাল সম্পদকে একটি বৈচিত্র্যময় পোর্টফোলিওর অংশ হিসেবে দেখছেন।’
তিনি আরও জানান, গত বছর তার প্রথম ফান্ড বন্ধ করে দেন, যা দুই বছরেরও কম সময়ে ৩৭৫ শতাংশ রিটার্ন দেয়। এরপর গত মে মাসে তিনি নেক্সট জেনারেশন ফান্ড-২ নামে নতুন ক্রিপ্টো ইকুইটি ফান্ড চালু করেন।
সুইজ ব্যাংক ইউবিএস জানিয়েছে, কিছু বিদেশে থাকা চীনা ফ্যামিলি অফিস তাদের পোর্টফোলিওতে প্রায় ৫ শতাংশ পর্যন্ত ক্রিপ্টো এক্সপোজার বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।
ইউবিএস চায়নার ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের প্রধান লু জিজিয়ে বলেন, ‘দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের অনেকেই এখন ভার্চুয়াল মুদ্রা সম্পর্কে শিখছে এবং এতে অংশ নিচ্ছে।’
ক্রিপ্টোর প্রতি এই আগ্রহের পেছনে রয়েছে ক্রিপ্টোকারেন্সির উচ্চ রিটার্ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে সদ্য অনুমোদিত ‘জিনিয়াস অ্যাক্ট’-এর মতো অনুকূল নিয়ন্ত্রক সিদ্ধান্ত।
চলতি মাসে বিটকয়েনের দাম রেকর্ড ভেঙে ১ লাখ ২৪ হাজার ডলার অতিক্রম করেছে। হংকংয়ের সদ্য পাস হওয়া স্টেবলকয়েন আইন এই আগ্রহ আরও উসকে দিয়েছে।
ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ জেমিনির এশিয়া-প্যাসিফিক প্রধান সাদ আহমেদ বলেন, ‘এই গতি তৈরি হয়েছে এবং এটি সম্ভবত এই সম্পদ শ্রেণির পরিপক্বতার ফল।’
ওয়েলথ ম্যানেজাররা বলছেন, কয়েক বছর আগেও যাঁরা সামান্য বিটকয়েন রাখতে চাইতেন, এখন তাঁরা এটিকে পোর্টফোলিওর আবশ্যিক উপাদান হিসেবে দেখছেন এবং সর্বোচ্চ লাভ নিশ্চিত করার উপায় খুঁজছেন।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক লাইটহাউস ক্যান্টন জানিয়েছে, কিছু উন্নতমানের ফ্যামিলি অফিস এখন বেসিস ট্রেড ও আরবিট্রাজের মতো বাজার-নিরপেক্ষ (মার্কেট-নিউট্রাল) কৌশল ব্যবহার করছে।
ফিডেলিটি ইন্টারন্যাশনালের ডিজিটাল অ্যাসেটের অ্যাসোসিয়েট ইনভেস্টমেন্ট ডিরেক্টর গিসেল লাই বলেন, অনেকেই এখন বিটকয়েনকে পোর্টফোলিওতে ঝুঁকি কমানোর উপায় হিসেবে দেখছেন। কারণ বিটকয়েনের দাম সাধারণ শেয়ার বা বন্ডের দামের সঙ্গে খুব বেশি মিল রাখে না, তাই এটা বড় ধরনের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সময় সাহায্য করতে পারে।
ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জগুলোর মধ্যেও লেনদেন বেড়েছে। হংকংয়ের হ্যাশকি এক্সচেঞ্জ জানিয়েছে, ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত তাদের নিবন্ধিত ব্যবহারকারীর সংখ্যা বছরে ৮৫ শতাংশ বেড়েছে।
সূত্র: রয়টার্স