
অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে কোম্পানির শেয়ার
- ৩১ আগস্ট ২০২৫, ১০:১৪

দীর্ঘদিন ধরেই শেয়ারবাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। সরকারের নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও ফিরছে না গতি। তবে মাঝে মাঝেই শেয়ারের টানা উত্থানে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরতে শুরু করলেও আবার কমে যায় গতি। ফলে দোটানায় ভুগছেন বিনিয়োগকারীরা। এর মধ্যেই কোনো ধরনের মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে চলছে ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক লিমিটেড (আইএসএন)-এর শেয়ারের দাম। বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও কোম্পানিটির শেয়ারের এমন লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি বাজার বিশ্লেষকদের চিন্তায় ফেলেছে।
‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ও পারফরম্যান্স বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করার মতো নয়। সমাপ্ত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই ২০২৪ থেকে মার্চ ২০২৫) শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১৭ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ২০ পয়সা। ২০২৪ সালে কোম্পানিটি মাত্র ০.২০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে, যা শেয়ারবাজারে ডিভিডেন্ড প্রদানকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম সর্বনিম্ন।
মালিকানার দিক থেকেও উদ্বেগজনক পরিস্থিতি। কোম্পানির মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের অংশীদারিত্ব মাত্র ২১.৪৭ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছে ৯.৭৯ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে ৬৮.৭৪ শতাংশ। অর্থাৎ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছেই শেয়ারটি সিংহভাগ রয়েছে।
কোম্পানিটি কেবল লোকসানিই নয়, এর রিজার্ভও নেগেটিভ। কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ১০ কোটি ৯২ লাখ টাকা। বিপরীতে রিজার্ভ রয়েছে নেগেটিভ ৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। কোম্পানিটির সম্পদ মূল্য শেয়ারপ্রতি মাত্র ২ টাকা ৭৫ পয়সা। অথচ শেয়ারটির দাম ৯৩ টাকা!
এমন দুর্বল পারফরম্যান্স সত্ত্বেও, গত তিন সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ১৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ৭ আগস্ট শেয়ারের দাম ৪২ টাকা ২০ পয়সা ছিল, যা বৃহস্পতিবার ১০৫ টাকা ৭০ পয়সায় এসে ঠেকেছে।
এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানতে ডিএসই গত সপ্তাহে দুইবার কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠায়। জবাবে কোম্পানি জানায়, এই মূল্যবৃদ্ধির পেছনে তাদের কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। তবে বাজারে গুঞ্জন রয়েছে, কোম্পানিটির মালিকরাও এই কারসাজির সঙ্গে জড়িত।
যার কারণে স্টক এক্সচেঞ্জের হস্তক্ষেপের পরেও এই কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়া বন্ধ হয়নি। বরং এই সপ্তাহে এটি আরও ৪৫.৬০ শতাংশ বেড়েছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ডিএসইতে দুর্বল পারফরম্যান্স করা শেয়ারগুলোর দাম হু হু করে বাড়ছে। এই প্রবণতা বিনিয়োগকারীদের পছন্দের মানদণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেছে। এই সপ্তাহে শীর্ষ ১০ লাভজনক কোম্পানির তালিকায় দুটি 'জাঙ্ক স্টক' (প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ) এবং চারটি 'বি' ক্যাটাগরির শেয়ার জায়গা করে নিয়েছে।
কিছু কোম্পানি বছরের পর বছর ধরে উৎপাদন বন্ধ রেখেছে এবং কোনো তথ্যও প্রকাশ করেনি। তা সত্ত্বেও, যখন সামগ্রিক বাজার টানা তিনদিন নিম্নমুখী ছিল, তখন তাদের শেয়ারের দাম অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়েছে। যেসব কোম্পানি নিয়মিত ব্যবসা করছে, মুনাফা করছে এবং ডিভিডেন্ড দিচ্ছে, তাদের শেয়ারের তুলনায় এই দুর্বল শেয়ারগুলো বর্তমানে অনেক ভালো পারফর্ম করছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, দুর্বল পারফরম্যান্স করা বা বন্ধ থাকা কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম বেড়ে যাওয়া এটাই প্রমাণ করে যে, নতুন কমিশন কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলেও তারা এখনো শেয়ারবাজারে সক্রিয় রয়েছে।