
ঢালাও বোনাসে লাগাম
- ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩:৪৪

আর্থিক খাতে গতি ফেরাতে অভিনব পদ্ধতি হাতে নিয়েছে সরকার। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আর আর্থিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে ঢালাওভাবে কর্মচারীদের উৎসাহ বোনাস দিতে পারবে না। নতুন নির্দেশিকায় বোনাস প্রদানের ভিত্তি হবে পরিচালন মুনাফা নয়, নিট মুনাফা।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মুনাফা অর্জনের পর প্রথমে সরকারকে ডিভিডেন্ড দিতে হবে। সরকারের কাছে ডিভিডেন্ড না দিলে, বোনাস প্রদানের যোগ্যতা থাকলেও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান তা দাবি করতে পারবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর গত ৬ সেপ্টেম্বর জানিয়েছেন, কোনো ব্যাংকের মূলধন ১০ শতাংশের নিচে নেমে গেলে বা প্রভিশন লস হলে, ডিভিডেন্ড বা বোনাস দেওয়া যাবে না। তিন মাসের ঋণ অনাদায়ী থাকলে তা নন-পারফর্মিং লোন হিসেবে গণ্য হবে।
এই বক্তব্যের পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ দ্রুত একটি খসড়া নির্দেশিকা তৈরি করেছে। এতে ১৪টি রাষ্ট্রীয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বোনাস প্রদানের শর্তাবলি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
নির্দেশিকা অনুযায়ী, পরিচালন মুনাফা থেকে প্রভিশন বাদ দিয়ে নিট মুনাফা হিসাব করতে হবে। এর ভিত্তিতেই বোনাস নির্ধারিত হবে। নির্দেশিকা ২০২৪ সালের বোনাসেও প্রযোজ্য হবে। অতিরিক্ত বোনাস দিতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অনুমোদন নিতে হবে।
আগে নীতিমালা থাকলেও কিছু ব্যাংক তা মানেনি। উদাহরণস্বরূপ, সর্বোচ্চ তিনটি বোনাস দেওয়ার বিধান থাকলেও সোনালী ব্যাংক ২০২৩ সালে পাঁচটি বোনাস দিয়েছে। এর ফলে মার্চে অতিরিক্ত বোনাস ফেরত আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তবে কেউ তা পরিশোধ করেনি।
রাষ্ট্রমালিকানাধীন ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংক (সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল) পাঁচটি সূচকের ভিত্তিতে বোনাস পাবে—১. চলতি মূলধনের ওপর নিট মুনাফার হার ২. আমানতের প্রবৃদ্ধি ৩. ঋণ ও অগ্রিমের প্রবৃদ্ধি ৪. খেলাপি ঋণ আদায়ের হার ৫. অবলোপন করা ঋণ আদায়ের হার
সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব থাকবে নিট মুনাফার হারে। ভালো পারফরম্যান্স করলে সর্বোচ্চ তিনটি বোনাস পাওয়া যাবে, কম নম্বর পেলে কমে যাবে, বা একেবারেই থাকবে না। প্রতিটি বোনাস একটি মাসের মূল বেতনের সমান।
ছয়টি বিশেষায়িত ব্যাংক (বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাকাব, কর্মসংস্থান ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, আনসার-ভিডিপি ব্যাংক) চারটি সূচকের ভিত্তিতে মূল্যায়িত হবে, যেখানে আমানতের প্রবৃদ্ধি সূচক বাদ যাবে।
আইসিবির জন্য থাকবে আলাদা সূচক— যেমন শেয়ারবাজারে লেনদেন বৃদ্ধি, নিট মুনাফা, বিনিয়োগের বিপরীতে ডিভিডেন্ড এবং খেলাপি ঋণ আদায়।
বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের ক্ষেত্রে সূচক হবে— ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধের বিপরীতে প্রকৃত আদায়, নিট মুনাফা, খেলাপি ঋণ আদায় এবং ঋণ ও অগ্রিমের প্রবৃদ্ধি।