
শেয়ার কারসাজিতে শাস্তি পেলেন ৩ ব্যক্তি
- ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৩৭
-11638.jpg)
গত বছরের ৮ আগস্ট ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সেইসঙ্গে দেশের শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিন ধরে চলা অস্থিরতা দূর করার পদক্ষেপ ও অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিচ্ছে সরকার। এরই জেরে শেয়ারবাজারে শেয়ার কারসাজির অভিযোগে একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে শাস্তি দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এবার শেয়ার কারসাজির অভিযোগে তিন ব্যক্তিকে মোট ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে সংস্থাটি। সম্প্রতি কমিশনের একটি সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিএসইসি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
দণ্ডপ্রাপ্ত এই তিন ব্যক্তি হলেন— মো. সাইফ উল্লাহ, মো. এ জি মাহমুদ এবং এস এম মোতাহারুল জানান। তারা আলোচিত শেয়ার ব্যবসায়ী মো. আবুল খায়ের হিরুর সহযোগী হিসেবে পরিচিত। অতীতেও তাদের বিরুদ্ধে একাধিকবার শেয়ার কারসাজির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় জরিমানা করা হয়েছে।
এই তিন ব্যক্তি পাঁচ বীমা কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করেছেন। কোম্পানিগুলো হলো: গ্লোবাল ইনস্যুরেন্স পিএলসি, ইসলামী ইনস্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেড, সেন্ট্রাল ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, পিপলস ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এবং রিপাবলিক ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
বিএসইসি'র তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালের ১৯ থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত, অর্থাৎ ১০ দিনের মধ্যে, তারা নিজেদের মধ্যে যোগসাজশ করে 'সিরিজ ট্রেডিং'-এর মাধ্যমে এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়িয়েছেন। এই ১০ দিনে গ্লোবাল ইনস্যুরেন্সের শেয়ারের দাম ২৩.৯২ শতাংশ, ইসলামী ইনস্যুরেন্সের ২৫.২৮ শতাংশ, সেন্ট্রাল ইনস্যুরেন্সের ৩৪.৬৫ শতাংশ, পিপলস ইনস্যুরেন্সের ৩৭.৩৫ শতাংশ এবং রিপাবলিক ইনস্যুরেন্সের শেয়ারের দাম ১৪.৭৪ শতাংশবাড়ানো হয়।
কমিশন বলছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা শেয়ার আইন লঙ্ঘন করে ইচ্ছাকৃতভাবে একটি কৃত্রিম বাজার তৈরি করেছিলেন, যা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করার একটি অপচেষ্টা। এই ধরনের কর্মকাণ্ড পুঁজিবাজারের উন্নয়নের পরিপন্থী এবং এর ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দেওয়া ব্যাখ্যা কমিশনের কাছে গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়নি, তাই আইন অনুযায়ী তাদের জরিমানা ধার্য করা হয়েছে।
কারসাজিতে নেতৃত্ব দেওয়া মো. সাইফ উল্লাহকে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অন্যদিকে মো. এ জি মাহমুদ ও মো. সাইফ উল্লাহকে যৌথভাবে ৪২ লাখ টাকা এবং এস এম মোতাহারুল জানানকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। সব মিলিয়ে মোট জরিমানার পরিমাণ ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
এই কারসাজির নেতৃত্বে ছিলেন মো. সাইফ উল্লাহ। তাকে সহযোগিতা করেন মো. এ জি মাহমুদ, যিনি সম্পর্কে তার শ্যালক। মোতাহারুল জানান তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। তাদের সবারই সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্স লিমিটেডে বিও অ্যাকাউন্ট রয়েছে।
এর আগেও তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগ ছিল। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে প্রভাতি ইনস্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজির জন্য মো. সাইফ উল্লাহকে ১৫ লাখ এবং মো. এ জি মাহমুদকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। এছাড়াও, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইনস্যুরেন্স, ইনডেক্স অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ এবং জনতা ইনস্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজিতেও তাদের বিরুদ্ধে জরিমানা আরোপ করা হয়।