‘নেতানিয়াহুকে শাস্তি পেতে হবে’

নেতানিয়াহু

গত ২৩ মাসের অধিক সময় ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় গণহত্যা ও ভয়াবহ হামলা চালাচ্ছে দখলদার ইসরায়েল। এর পাশাপাশি লেবানন, জর্ডান, সিরিয়া, ইয়েমেন ও ইরানেও হামলা চালিয়েছে দেশটি। তবে এসব নারকীয় হামলার বিরুদ্ধে পশ্চিমারা কোনো কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়ায় দ্বিগুণ উৎসাহে গণহত্যা চলাচ্ছে ইসরায়েল। এবার কাতারের রাজধানী দোহায় হামলা চালিয়েছে নেতানিয়াহুর বাহিনী। তবে দোহায় বিমান অভিযান পরিচালনার নির্দেশ প্রদানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু; আর এ কারণে তাকে শাস্তি পেতে পেতে হবে বলে মন্তব্য করেছে কাতার।

গতকাল মঙ্গলবার ইসরায়েলের বাণিজ্যিক রাজধানী তেল আবিবে এক সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, কাতারের রাজধানী দোহায় ইসরায়েলের বিমান বাহিনীর সাম্প্রতিক হামলা বৃথা যায়নি, বরং এই হামলার মাধ্যমে কাতারকে ‘বার্তা’ দেওয়া হয়েছে।

নেতানিয়াহু এই বক্তব্য দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর দোহায় এক সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি বলেন, “ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী তার বেপরোয়া নীতির কারণে প্রতিটি ব্যর্থতার পর সেই ব্যর্থতাকে ঢাকা এবং ন্যায্যতা প্রদানের চেষ্টা করেন। আমরা তার এই স্বভাবের সঙ্গে পরিচিত।”

“আজ তিনি যে বার্তা দিয়েছেন, তার প্রতিক্রিয়ায় আমরাও তাকে একটি জরুরি বার্তা দিতে চাই; আর তা হলো— দোহায় হামলার নির্দেশ দেওয়ার মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন করেছেন এবং এজন্য তিনি শাস্তি এড়িয়ে যেতে পারবেন না।”

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সুপারিশে ২০১২ সাল থেকে কাতারে বসবাস করছেন হামাসের শীর্ষ নেতারা। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান যুদ্ধে মধ্যস্থতাকারী ৩ দেশের মধ্যে কাতার অন্যতম। বাকি দুই দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র ও মিসর।

২০২৫ সালের ৩১ জুলাই ইরানে ইসরায়েলের হামলায় নিহত হন হামাসের রাজনৈতিক শাখার শীর্ষ নির্বাহী ইসমাইল হানিয়া। একই বছর ১৬ অক্টোবর গাজায় নিহত হন তার উত্তরসূরী ইয়াহিয়া সিনওয়ার। হানিয়া ও সিনওয়ার নিহত হওয়ার পর হামাসের শীর্ষ নেতার পদে আসেন খলিল আল হায়া।

খলিল আল হায়া এবং হামাসের অন্যান্য জ্যেষ্ঠ নেতাদের হত্যা করতে গত ৯ সেপ্টেম্বর কাতারের রাজধানী দোহায় একটি ভবনে বোমা বর্ষণ করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। মাত্র ১৫ মিনিট স্থায়ী হওয়া সেই  হামলায় ৬ জন নিহত হন, কিন্তু সৌভাগ্যবশত বেঁচে যান খলিল আল হায়া ও হামাসের অন্যান্য জ্যেষ্ঠ নেতারা।

এ ঘটনায় বিশ্বের প্রায় সব দেশ ইসরায়েলের নিন্দা জানিয়েছে।

গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে কাতারের কূটনৈতিক তৎপরতা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে মাজেদ আল আনসারি বলেন, “কাতার বর্তমানে তার জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষা, বিশ্বাসঘাতক ইসরায়েলি হামলার জবাব, ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের হামলা আর না ঘটে— সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং হামলার জন্য দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার ওপর সর্বোচ্চ মনোযোগ দিচ্ছে।”

“আমরা এখন যে পরিস্থিতির মোকাবিলা করছি, সেখানে অন্যান্য সব রাজনৈতিক বিবেচনা এখন গৌন।”

সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি