
ভারতে বাধার মুখে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক
- ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪:০২

ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্কারোপ করেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর ফলে প্রতিবেশি দেশটির পোশাক শিল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের জন্য মার্কিন বাজারে এক বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) রপ্তানিকারকরা সম্প্রতি ভারতের অদৃশ্য এক অশুল্ক বাধার মুখে পড়েছেন, যা বৈশ্বিক বাজারে নতুন সুযোগ কাজে লাগানোর পথে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত কয়েক মাস ধরে দিল্লি, বেঙ্গালুরুসহ ভারতের বিভিন্ন শহরে অবস্থিত বিদেশি বায়ারদের আঞ্চলিক অফিসে কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠানো পোশাকের স্যাম্পল ভারতের কাস্টমস পরীক্ষার নামে দীর্ঘ সময় ধরে আটকে রাখছে, কখনোবা একেবারেই ছাড় করছে না। কখনও তিন সপ্তাহ পর্যন্ত দেরি করা হচ্ছে, আবার অনেক সময় একেবারেই আটকে দেওয়া হচ্ছে। যার ফলে স্প্যারো গ্রুপের মতো রপ্তানিকারকরা বাধ্য হচ্ছেন স্যাম্পল বিমানে লোক মারফত পাঠাতে, যা কুরিয়ার খরচের তুলনায় প্রায় ২০ গুণ বেশি ব্যয়বহুল।
গত বছর প্রায় ৩০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে স্প্যারো গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন, "এটা নন-ট্যারিফ ব্যারিয়ার (অশুল্ক বাধা) ছাড়া কিছু না। বাধ্য হয়ে আমাদের ফ্লাইটে হ্যান্ড ক্যারি করতে হচ্ছে।"
এমন এক সময়ে এ বাধা তৈরি করা হলো, যখন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির পরিবর্তনের ফলে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রচুর অর্ডার আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে, আবার গত আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কয়েক মাস যাবত দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কেও শীতলতা বিরাজ করেছে।
রপ্তানিকারকরা আশঙ্কা করছেন, এ প্রতিবন্ধকতা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তুলনামূলক শুল্ক সুবিধাকে ম্লান করে দিতে পারে। কারণ মাঙ্গো, লিভাইস ও মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সারের মতো ব্র্যান্ডগুলো সময়মতো নমুনা অনুমোদন না পেলে অর্ডার দেয় না।
ফলাফল; প্রতি ৫ কেজি ওজনের স্যাম্পলের প্যাকেট পাঠাতে আগে যেখানে খরচ হতো পাঁচ হাজার টাকা, সেখানে এখন সময়মতো পৌঁছাতে বিমানে লোক মারফত পাঠাতে খরচ হচ্ছে প্রায় এক লাখ টাকা।
শোভন ইসলাম বলেন, "গত কয়েক মাস ধরে ভারতে তিনটি বিদেশি ক্রেতার অফিসে কুরিয়ারে পোশাকের নমুনা পাঠানো জটিল হয়ে পড়েছে, যা গত দুই মাস ধরে আরও বেড়েছে। ভারতীয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নানা অজুহাতে এগুলো আটকে রাখছে বা ছাড় করছে না। ফলে আমাদের বাধ্য হয়ে বিমানে লোক মারফত পাঠাতে হচ্ছে। এতে ৫ কেজির একটি নমুনা পাঠানোর খরচ পাঁচ হাজার টাকা থেকে বেড়ে প্রায় এক লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।"
এই সমস্যা উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রপ্তানিকারককে প্রভাবিত করছে। একাধিক রপ্তানিকারক ও বায়ারদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, এখন ভারতে নমুনা পাঠাতে আগের তুলনায় তিন থেকে চার গুণ বেশি সময় লাগছে।
তাদের অভিযোগ, ভারত সরকার লিখিতভাবে কোনো নিষেধাজ্ঞা না দিলেও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে এয়ার কুরিয়ারে পাঠানো এসব নমুনা আটকে দিচ্ছে, তারা এটি করছে বাংলাদেশের রপ্তানিকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য।
ভারতে পুমা, মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সার, এইচঅ্যান্ডএম, লিভাইস ও ম্যাঙ্গোর মতো শীর্ষস্থানীয় বেশকিছু বায়ার ও ব্র্যান্ডের অফিসে নিয়মিত স্যাম্পল পাঠাতে হয় বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের। যেখানে ভারতে বা তৃতীয় কোনও দেশে রপ্তানি করার জন্য অনুমোদন নিতে হয়। সাধারণত পোশাক তৈরি করার আগে একবার স্যাম্পল পাঠিয়ে অনুমোদন নিতে হয়, আর পণ্য তৈরির পর ফাইনাল শিপমেন্ট করার আগে দৈবচয়নের ভিত্তিতে নমুনা নির্বাচন করে সেগুলো পাঠিয়ে অনুমোদন নিতে হয়। আবার স্টোরগুলোতে কাস্টমারকে পণ্য দেখানোর জন্যও কিছু নমুনার প্রয়োজন হয়, যা সেলসম্যান স্যাম্পল হিসেবে পরিচিত।
নমুনা অনুমোদন না হলে পণ্য তৈরি হলেও তার চালান পাঠান যায় না। ফলে বাড়তি খরচ করে হলেও রপ্তানিকারকদের আকাশপথ বা বিকল্প উপায়ে স্যাম্পল পাঠাতে হচ্ছে।
ভারতে অধিকাংশ তৈরি পোশাকের নমুনা পাঠানো এখন বিলম্বিত হচ্ছে। রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে ভারতে পাঠানো অধিকাংশ নমুনার কুরিয়ার চালান ভারতীয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বিলম্বিত করছে, আটকে দিচ্ছে কিংবা পণ্যমূল্যের সীমাবদ্ধতা আরোপ করছে। যেখানে ৩–৫ দিনে চালান পৌঁছানোর কথা, এখন তা পৌঁছাতে সময় লাগছে ১৫–২০ দিন, আর কিছু চালান একেবারেই আটকে দেওয়া হচ্ছে।
রপ্তানিকারক ও কুরিয়ার কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এয়ারের মাধ্যমে কুরিয়ারে নমুনা পাঠাতে সময় লাগে ৪ কর্মদিবস, অন্যদিকে জাহাজের মাধ্যমে পাঠাতে সময় লেগে যায় তিন সপ্তাহের মত।
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সিনিয়র সহ-সভাপতি ইনামুল হক খান বাবলু বলেন, "বায়ার ও রপ্তানিকারক উভয়ের কাছ থেকেই আমরা অভিযোগ পেয়েছি যে, এয়ার কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠানো স্যাম্পল ভারতের কাস্টমসে আটকে দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানানোর পরিকল্পনা করছি।"