
৭ কলেজ নিয়ে মুখোমুখি শিক্ষক-শিক্ষার্থী, হুঁশিয়ারি
- ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪:১৯

সরকারি সাত কলেজ নিয়ে ফের তৈরি হয়েছে জটিলতা। ঢাকার সাত কলেজকে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় করে অধ্যাদেশ জারির জন্য সময় বেঁধে দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীরা। আগামী সোমবারের (২২ সেপ্টেম্বর) মধ্যে এ অধ্যাদেশ জারি না হলে কঠোর কর্মসূচি পালন করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
আজ বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা কলেজের শহিদ মিনারের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে, সাত কলেজকে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় করার পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা। এ সময় সাত কলেজকে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় করার অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে বিদ্যমান সমস্যা নিরসন করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকদের সমালোচনা করে শিক্ষার্থীরা বলেন, ২০১৭ সালের পর যে শিক্ষকরা কখনও শিক্ষার্থীদের পাশে ছিল না, এখন সাত কলেজের সমস্যা নিরসনের দিকে এগোলে তারা বাধা দেয়ার চেষ্টা করছেন। এ সময় অধ্যাদেশ ছাড়া কোনো চূড়ান্ত সমাধান হবে না বলেও উল্লেখ করেন তারা।
এছাড়া, আন্দোলনে গেলে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফলাফল খারাপ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ তোলেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
উল্লেখ্য, এর আগে রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজকে নিয়ে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ গঠনের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ব্যানারে বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সামনে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষকরা বলেন, কবি নজরুল কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজসহ এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে স্বল্প খরচে মানসম্মত উচ্চশিক্ষা দিয়ে আসছে।
তাদের মতে, এই কলেজগুলোকে সংকুচিত করা হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ কমে যাবে, যা বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় ধাক্কা হবে।
শিক্ষকরা আরও বলেন, এটি সংবিধানের ২৮(১), ২৮(২), ২৮(৪) অনুচ্ছেদ এবং জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি ৪.৩ ও ৪.৪)-এর পরিপন্থী।
তারা ইডেন কলেজের সাম্প্রতিক আন্দোলনের উদাহরণ টেনে সতর্ক করেন যে, অধ্যাদেশ প্রণয়নের আগে অংশীজনের মতামত না নিলে বড় ধরনের শিক্ষার্থী আন্দোলন তৈরি হতে পারে। রংপুরের কারমাইকেল কলেজের উদাহরণও তুলে ধরা হয়, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের উদ্যোগ আন্দোলনের মুখে বন্ধ হয়ে যায়।
সাত কলেজ স্বাতন্ত্র্য রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যাপক মাহফিল আরা বেগম লিখিত বক্তব্যে জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে সাত কলেজকে অব্যাহতি দেওয়ার পর নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু সম্প্রতি ‘ঢাকা সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে নতুন কাঠামোর খবর প্রকাশ পাওয়ায় শিক্ষক সমাজে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি মনে করেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে কলেজগুলোর সক্ষমতা হ্রাস পাবে এবং শত বছরের ঐতিহ্য নষ্ট হবে।
শিক্ষকদের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, বিদ্যমান অবকাঠামো ও মানবসম্পদকে কাজে লাগিয়ে সাত কলেজকে কলেজিয়েট বা অধিভুক্ত কাঠামোয় পরিচালনা করা হোক। এর পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগ, গবেষণা বাজেট, ল্যাব ও লাইব্রেরির সুবিধা বৃদ্ধি, আবাসন সংকট নিরসন এবং বৃত্তি সুবিধা নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা।