ইসলাম বিদ্বেষীদের নতুন ফাঁদ ঢাকেবি!

ঢাকেবি

ঢাকার সরকারি সাত কলেজকে বিলুপ্ত করে প্রস্তাবিত ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকেবি) নামে সরকার মূলত কতিপয় ইসলাম বিদ্বেষী বাম নাস্তিকদের ফাঁদে পড়েছে। প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়টির অধ্যাদেশে এদেশের ইসলাম ও ইসলামী শিক্ষার মৌলিক বিষয়গুলোকে কৌশলে বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্র স্পষ্ট। এখানে একদিকে যেমন ঐতিহ্যবাহী সাতটি কলেজকে বিলুপ্তের কথা বলা হয়েছে পাশাপাশি এগুলো থেকে আরবি, ইসলামিক স্টাডিজ এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির মত মৌলিক বিষয়গুলোকেও বাদ দেওয়ার চূড়ান্ত আয়োজন করেছে। অথচ পুরান ঢাকার কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজ প্রতিষ্ঠার অন্যতম স্পিরিটই ছিল ইসলামি শিক্ষার আলোকে আলোকিত করা। শুধু তাই ই নয়, প্রস্তাবিত খসড়ায় দেখা গেছে,  ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, পিওর কেমিস্ট্রি, ব্যবস্থাপনা, ফিনান্স এন্ড ব্যাংকিং,  সমাজবিজ্ঞান, সমাজকর্ম, ইসলাম শিক্ষা, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মত এমন কিছু মৌলিক বিষয়ের ব্যাপারেও কোনো কিছু উল্লেখ করা হয়নি। তার মানে কি এসব সাবজেক্টগুলোও বিলুপ্ত হয়ে যাবে? যদি তাই হয় তাহলে (সাহিত্য সংস্কৃতি, বিজ্ঞানের মৌলিক বিষয় এবং ইসলামি শিক্ষার মৌলিক বিষয়গুলো) বাতিল হলে বর্তমানে অধ্যয়নরতরা কিভাবে ঢাকেবি'র অন্তর্ভুক্ত হবে? কারণ  বিষয়গুলোই তো নাই!

এসব দেখে অনুমান স্পষ্ট যে কিছু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষক যারা নিজের ভার্সিটির আসল দায়িত্ব ফেলে রেখে প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভাড়ায় খাটে, ক্ষ্যাপ মারে- এমন কিছু শিক্ষকদের ফাঁদে পড়েছে  সরকার। এ সুযোগে প্রাইভেট ভার্সিটিগুলোও কৌশলে এসব শিক্ষকদের দিয়ে সাত কলেজের বিরুদ্ধে একটা ন্যারেটিভ তৈরি করে সাত কলেজকে বিলুপ্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মিস গাইড করে পুরো সিস্টেমটাকে ধ্বংস করতে উঠে পড়ে লেগেছে। এসব বামাদর্শের শিক্ষকরা গোটা শিক্ষা খাতকে হসপস লাগিয়ে আলু পোড়া খাওয়ার ধান্ধায় আছে। কারণ, সাত কলেজ বিলুপ্ত হলে এতে কতিপয় শিক্ষক কর্মকর্তা লাভবান হওয়া ছাড়া গোটা জাতির কি হবে, কেউ ভাবছে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে শিক্ষা উপদেষ্টা নিজেও সেই বামদের ট্যবলেট খেয়ে বসে আছে।

এদিকে ঢাকার সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তরিত করা হলে তাহলে সেখানে বিভাগ প্রতি ১৫০/২০০শর পরিবর্তে ২০/৩০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে করে বাকি ছেলেমেয়ে গুলো বাধ্য হয়েই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হবে। এতে করে ক্ষ্যাপ মারা ঐসব শিক্ষকদের আরো পোয়াবারো হবে। আর ভার্সিটিও শত শত কোটি টাকার ভর্তি বানিজ্য করবে।

এছাড়াও প্রস্তাবিত অধ্যাদেশের খসড়ার ২৯ ধারার মূল অংশটা পড়লে বুঝা যাবে পুরো বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে কিভাবে ধোঁয়াশার মধ্যে রেখেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়?

প্রথমত, যেসকল কলেজে ইন্টারমিডিয়েট আছে তা কিভাবে চলবে তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। পুরোটাই গোঁজামিলে ভরা। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐসব বাম শিক্ষকরা ইন্টারমিডিয়েটের ছেলে-মেয়েদের যেহেতু পড়ায় না, সেহেতু তাদের নিয়ে চিন্তা করারও সময় নাই এসব শিক্ষকদের।

দ্বিতীয়ত, ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির পড়াশোনা হবে হাইব্রিড পদ্ধতিতে যার ৪০ শতাংশ ক্লাস হবে অনলাইনে। ৪০ শতাংশ ক্লাস যদি অনলাইনে হয় তাহলে এখান থেকে কতটুকু উপকারী হবে শিক্ষার্থীরা সেটা একটা বড় প্রশ্ন। কারণ করোনাকালীন সময়ের অভিজ্ঞতা বলে দেয় আমরা কি শিখেছি। এছাড়া ক্লাস হবে দুপুর ১ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত। এখানেও সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় সুযোগ সন্ধানী, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষ্যাপ মারা শিক্ষকদের তেলেসমাতি। কারণ, তারা ভাড়ায় খাটা শেষে এখানে এসে মাতবরি করার সুযোগ পাবে, হবে মোটা দাগের উপরি ইনকাম। 

তৃতীয়, এই খসড়া অনুযায়ী বদরুন্নেসা ও ইডেনে ছেলে এবং ঢাকা কলেজে মেয়েরা ভর্তি হতে পারবে। ফলে এ কলেজগুলোর সঠিক অবস্থা কী হবে সেটাও টোটালি অস্পষ্ট। এছাড়া ছেলে/মেয়ে ভর্তির সুযোগ থাকলেও আবাসিক হল কিভাবে ব্যবহার হবে তার ব্যাখ্যাও জানা দরকার। কারণ স্কুল অব সাইন্সের অধীন যে মেয়ে জুয়োলোজি পড়তে ঢাকা কলেজে ভর্তি হবে তার আবাসিক হল কোনটা হবে সেটার ব্যাখ্যা নেই। এই হল হাইব্রিড সিস্টেমের জটিলতা।

চতুর্থত, কলেজ সম্পত্তি চলে যাবে সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধীনে। অধ্যাদেশে বলা হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে কলেজগুলোর একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হবে। এখানেও চূড়ান্ত ধোঁয়াশা ও বাটপারি মনে হল। কারণ এমনটা হলে লাভবান হবে সাত কলেজের মধ্যে যাদের সম্পত্তি কম তারা। ক্ষতিগ্রস্থ হবে ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ ও তিতুমিরের বড় কলেগুলো। তখন ঢাকা কলেজের ইন্টারমিডিয়েটের বাসে অন্য কলেজের ছেলেরা উঠতে চাইলে হিসাব কি দাঁড়াবে? কারণ এটাতো সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির সম্পত্তি। হাস্যকর।

পঞ্চমত, বর্তমান শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকদের ব্যাপারেও এখানে কোন সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নাই। এ নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা।
সবশেষ কথা হল হাইব্রিড বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকগুলো ডিপার্টমেন্টও বিলুপ্ত হবে সুক্ষ হাইব্রিড পন্থায়। কারণ সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধীনে নিয়ে যাওয়ার ফলে কলেজগুলোতে বর্তমান থাকা সাবজেক্টের অনেকগুলো অটো কমিয়ে আসবে।

মূল কথা হল বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে হাইব্রিড পদ্ধতিতে শিক্ষা আদৌও আলোর মুখ দেখবেনা। কিন্তু বিপরীতে বিদ্যুতের গতিতে আলোর মুখ দেখবে শুধু নিয়োগ প্রক্রিয়ায়। এই হাইব্রিড পদ্ধতিতে সাত কলেজকে বিলুপ্ত করার মাধ্যমে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডার গ্রাউন্ডে থাকা কিছু শিক্ষা ব্যবসায়ীর লাভ ছাড়া আর কিছুই হবে না। বাকিটা সময়ই বলে দেবে। 

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।