
মানুষকে ‘কামড়ালে’ কুকুরের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড!
- ০১ অক্টোবর ২০২৫, ১৩:৪৬

দীর্ঘদিন ধরেই কুকুর নিয়ে সংকটে ভারত। প্রায়ই কুকুরের কামড়ে মানুষের নিহত হওয়ার সংবাদ পাওয়া যায়। এবার বেওয়ারিশ কুকুরের আক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে তৈরি হওয়া আতঙ্ক মোকাবিলায় কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে ভারতের উত্তর প্রদেশ সরকার। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কোনো কুকুর বিনা প্ররোচনায় যদি কোনো মানুষকে একবার কামড়ায়, তবে তাকে ১০ দিনের জন্য একটি পশু কেন্দ্রে রাখা হবে। আর যদি একই কুকুর দ্বিতীয়বারের মতো এমন আক্রমণ করে, তবে তাকে সারা জীবনের জন্য সেই কেন্দ্রেই বন্দি থাকতে হবে, যাকে কার্যত ‘যাবজ্জীবন কারাদণ্ড’ হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, সম্প্রতি রাজ্যের মুখ্য সচিব অমৃত অভিজাত গ্রামীণ ও নগর এলাকার সমস্ত নাগরিক সংস্থাকে এই নির্দেশনা জারি করেছেন। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি বেওয়ারিশ কুকুরের কামড়ে আহত হয়ে জলাতঙ্ক বিরোধী টিকা নেন, তবে ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হবে এবং সংশ্লিষ্ট কুকুরটিকে নিকটস্থ অ্যানিমেল বার্থ কন্ট্রোল কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে।
এতে বলা হয়, প্রথমবার কামড়ানোর পর কুকুরটিকে পশু কেন্দ্রে এনে নির্বীজকরণ করা হবে (যদি আগে না করা হয়ে থাকে)। এরপর ১০ দিন পর্যবেক্ষণে রেখে তার আচরণ লক্ষ্য করা হবে। ছেড়ে দেওয়ার আগে কুকুরটির শরীরে একটি মাইক্রোচিপ বসানো হবে। এই চিপে কুকুরটির সমস্ত তথ্য সংরক্ষিত থাকবে এবং এর মাধ্যমে তার অবস্থানও শনাক্ত করা যাবে। যদি সেই মাইক্রোচিপযুক্ত কুকুরটি আবার বিনা প্ররোচনায় কাউকে কামড়ায়, তবে তাকে স্থায়ীভাবে কেন্দ্রের ভেতরেই রাখা হবে।
আক্রমণটি প্ররোচনাবিহীন ছিল কিনা, তা নির্ধারণের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে। প্রয়াগরাজ মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের ভেটেরিনারি অফিসার ডা. বিজয় অমৃত রাজ জানিয়েছেন, এই কমিটিতে একজন পশুচিকিৎসক, একজন প্রাণী বিষয়ক অভিজ্ঞ ব্যক্তি এবং একজন মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের সদস্য থাকবেন। তিনি আরও বলেন, ‘কেউ যদি কুকুরকে পাথর ছুঁড়ে মারে, তবে সেই কামড়কে বিনা প্ররোচনার আক্রমণ হিসেবে বিবেচনা করা হবে না।’
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত কুকুরদের মুক্তির একমাত্র উপায় হলো, যদি কোনো ব্যক্তি সেটিকে দত্তক নিতে রাজি হন। তবে সেক্ষেত্রে দত্তক গ্রহণকারীকে একটি হলফনামায় স্বাক্ষর করতে হবে। সেখানে তিনি প্রতিশ্রুতি দেবেন যে, কুকুরটিকে আর কখনও রাস্তায় ছাড়া হবে না। দত্তক নেওয়া কুকুরের মাইক্রোচিপের তথ্যও সংরক্ষণ করা হবে এবং যদি তাকে রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া হয়, তবে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই নির্দেশিকাটি এমন এক সময়ে এল, যখন এক মাস আগে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট দিল্লি ও সংলগ্ন জাতীয় রাজধানী অঞ্চলের সব বেওয়ারিশ কুকুরকে আশ্রয়কেন্দ্রে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে তীব্র প্রতিবাদের মুখে পরে আদালত সেই আদেশ সংশোধন করে জানায়, শুধুমাত্র আক্রমণাত্মক বা জলাতঙ্ক আক্রান্ত কুকুর ছাড়া বাকিদের নির্বীজকরণ, টিকাকরণ এবং পরে তাদের নিজ নিজ এলাকায় ছেড়ে দিতে হবে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ভারতে সবচেয়ে বেশি বেওয়ারিশ কুকুরের আবাস উত্তর প্রদেশে।