ভারতকে পাল্টা হুঁশিয়ারি

ভারত

কোনো কিছুতেই থামছে না ভারত-পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব। দিন দিন যেন এই দ্বন্দ্ব আরও বেড়েই চলেছে। চলতি বছরের এপ্রিলে কাশ্মীরের পেহেলগামে এক সন্ত্রাসী হামলার জেরে স্মরণকালের অন্যতম ভয়াবহ এক সংঘাতে জড়ায় ভারত-পাকিস্তান। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত বলতে গেলে চরম শত্রুভাবাপন্ন এক সম্পর্ক বিরাজ করছে দুদেশের মধ্যে। এরই মধ্যে সৌদি আরবের সঙ্গে একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষা চুক্তি করে ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে ভারতকে গভীর উদ্বেগে ফেলে দিয়েছে পাকিস্তান। অন্যদিকে ভারতও চীন এবং রাশিয়ার সঙ্গে মিলে আলাদা এক বলয় তৈরির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। 

এক কথায়, দুদেশের মধ্যেই ক্ষমতার এক তীব্র প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে ইদানিং। এ অবস্থায় পাকিস্তানকে সম্প্রতি মানচিত্র থেকে মুছে ফেলারই হুমকি দিয়ে বসেছেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। তার সঙ্গে আবার সুর মিলিয়েছেন দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদীও। 

এমন হুমকি পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই চুপ করে আর বসে থাকেনি পাকিস্তানও। ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আসা অস্তিত্বের হুমকির জবাব জোরালো এক বিবৃতির মাধ্যমে দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। ভারতের উদ্দেশে জোরালোভাবে পাল্টা হুঁশিয়ারি ছুড়েছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফও।

রোববার (৫ অক্টোবর) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে টিআরটি ওয়ার্ল্ড ও জিও নিউজ। 

প্রতিবেদন অনুযায়ী, শনিবার (৪ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী জানায়, ভারতের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আসা বিভ্রান্তিকর, উসকানিমূলক ও যুদ্ধংদেহী মন্তব্যে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ভবিষ্যতে সংঘাত বাঁধলে তা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যদি আবার সংঘাত শুরু হয়, পাকিস্তান আর সংযম দেখাবে না। কোনো দ্বিধা ছাড়াই আমরা দৃঢ়ভাবে পাল্টা জবাব দেব।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনী আরও জানায়, পাকিস্তান প্রতিপক্ষের ভূখণ্ডের ‘প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পাল্টা হামলা চালানোর সক্ষমতা ও প্রস্তুতি’ রাখে। এইবার আমরা ভারতের তথাকথিত ভূগোলগত নিরাপত্তার ভ্রান্ত ধারণা ভেঙে দেব।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এ বিবৃতির একদিন না যেতেই ভারতের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দেন দেশটির প্রতিরক্ষমন্ত্রী খাজা আসিফও। রোববার (৫ অক্টোবর) ভোরে সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ভারত যদি আবারও যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়, তবে তাদের যেসব যুদ্ধবিমান ধ্বংস করা হয়েছে, সেগুলোর ধ্বংসস্তূপের নিচেই তাদের কবর দেয়া হবে, ইনশাআল্লাহ।

ভারতের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতাদের সাম্প্রতিক মন্ত্যবকে হারানো বিশ্বাসযোগ্যতাকে ফিরিয়ে আনার ব্যর্থ প্রচেষ্টা বলে অভিহিত করেছেন খাজা আসিফ। তিনি বলেন, শীর্ষ মহলের চাপেই তারা এ ধরনের মন্তব্য করছেন বলে ইঙ্গিত দেয়।

পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ৬-০ ব্যবধানে পরাজয়ের পরও, যদি তারা আবার চেষ্টা করে, তাহলে পাকিস্তানের স্কোর আরও ভালো হবে। আগেরবারের পরাজয়ের পর ভারতের জনমত এখন ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে চলে গেছে। নেতাদের কথায় সেটিই প্রতিফলিত হয়েছে।

খাজা আসিফ আরও বলেন, পাকিস্তান আল্লাহর নামে নির্মিত একটি রাষ্ট্র, আমাদের রক্ষাকারীরা আল্লাহর সৈনিক। এবার, ভারত ইনশাআল্লাহ তাদের বিমানগুলোর ধ্বংসাবশেষের নিচেই কবরস্থ হবে। আল্লাহু আকবর।

এর আগে, শুক্রবার (৩ অক্টোবর) ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী পাকিস্তানকে সতর্ক করে বলেন, দেশটি যদি মানচিত্রে তার স্থান ধরে রাখতে চায়, তাহলে তাকে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন বন্ধ করতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা অপারেশন সিঁদুর ১.০-তে যে সংযম বজায় রেখেছিলাম এবার তা রাখব না... এবার আমরা এমন কিছু করব যা নিয়ে পাকিস্তানকে ভাবতে হবে যে তারা মানচিত্রে থাকতে চায় কি না।

আগের দিন বৃহস্পতিবার গুজরাটের ভুজ সীমান্ত ঘাঁটিতে সেনাদের উদ্দেশে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ বলেন, পাকিস্তান যদি স্যর ক্রিক এলাকায় আগ্রাসন দেখানোর চেষ্টা করে, তবে এমন জবাব দেওয়া হবে যা ইতিহাস ও ভূগোল দুটোই পাল্টে দিতে পারে।