মিয়ানমারে আটকা শতাধিক জেলের মুক্তি অনিশ্চিত

নাফ

নাফ নদ বাংলাদেশের টেকনাফ ও মিয়ানমার–এর মধ্যে প্রাকৃতিক সীমানা। এই নদ একদিকে অনেক জেলেদের জীবিকার উৎস, অন্যদিকে সীমান্তের রাজনীতি ও অনিশ্চয়তার প্রতীক। সাম্প্রতিক সময়ে আরাকান আর্মির আগ্রাসনে নদীটি পরিণত হয়েছে মৃত্যুফাঁদে। অস্পষ্ট সীমান্তের সুযোগে তারা বাংলাদেশি জেলেদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে; কেউ ফিরছেন নির্যাতনের ক্ষত নিয়ে, কেউ আর ফিরছেন না। টেকনাফ থেকে শাহপরীর দ্বীপ হয়ে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত শতাধিক পরিবার এখন এই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।

ইউএনও কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ১১৬ জন জেলেকে অপহরণ করেছে আরাকান আর্মি। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জানায়, চলতি বছরের ৯ মাসে ২৩৫ জনকে তুলে নেওয়া হয়েছে—এর মধ্যে ১২৪ জন ফিরে এসেছেন, আর ১১১ জন এখনো মিয়ানমারে আটক।

স্থানীয় জেলেদের অভিযোগ, মাছ ধরার সময় বা ফেরার পথে অস্ত্রের মুখে ধরে নিয়ে যায় বিদ্রোহীরা। শুধু মানুষ নয়, ট্রলারভর্তি মাছ, জাল ও সরঞ্জামও ছিনিয়ে নেয়। যারা ফিরে এসেছেন, তারা জানিয়েছেন, আটকের পর মারধর ও খাদ্যাভাবে নির্মম দিন কাটাতে হয়। অনেক সময় আটক জেলেদের কৃষিকাজেও ব্যবহার করা হয়।

বিশ্লেষক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ জানিয়েছে, তিন কারণে বাংলাদেশি জেলেদের আটক করছে আরাকান আর্মি:
১. জান্তা সরকারের হামলার আশঙ্কায় টহল জোরদার করে সীমান্তে জেলেদের আটক।
২. খাদ্যসংকটে মাছ ও সরঞ্জাম লুট।
৩. জেলেদের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ ও প্রভাব বিস্তার।

পরিবারগুলো দিশেহারা: অনেক জেলে পরিবারের উপার্জনক্ষম সদস্য বন্দি থাকায় তারা চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে। কারও সন্তানদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে, কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন প্রিয়জনের অপেক্ষায়। শাহপরীর দ্বীপ, সেন্টমার্টিন ও টেকনাফ উপকূলজুড়ে এখন এই কান্না ও অনিশ্চয়তা।

স্থানীয় প্রশাসনের সীমাবদ্ধতা: টেকনাফের ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, অন্য দেশের সীমানায় অভিযান চালানো সম্ভব নয়। জেলেদের সচেতন করা হচ্ছে এবং ফেরত আনার চেষ্টা চলছে। তবে সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ কঠিন—অনেক ঘটনা মৌখিকভাবে জানা যায়।

মূল সমস্যা সীমান্ত চিহ্নিত না থাকা। জেলেরা অনেক সময় অনিচ্ছায় মিয়ানমারের সীমায় ঢুকে পড়েন। কেউ আবার ইচ্ছাকৃতভাবে যান, কারণ সেখানে মাছ বেশি মেলে। জেলেদের ভাষায়, একটি বোটের সমুদ্রযাত্রায় ২০ লাখ থেকে দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ হয়—মাছ না পেলে লোকসান পোষানো কঠিন, তাই ঝুঁকি নেন তারা।

জেলেদের দাবি, দ্রুত আটক সবার মুক্তি নিশ্চিত করা হোক এবং সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হোক, যেন জীবিকার জন্য জীবন দিতে না হয়।