ইসরায়েলের ওপর ক্ষুব্ধ ৩ মুসলিম দেশ
- ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:০৮
বছরের পর বছর ধরেই ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ড অবৈধভাবে দখল করে যাচ্ছে দখলদার ইসরায়েল। তবে হঠাৎ ইসরায়েলের বিষয়ে চরম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কাতার, সৌদি আরব ও জর্ডান। দ্বিরাষ্ট্র সমাধানকে সামনে রেখে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধবিরতির মধ্যেই ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ড পুরোপুরিভাবে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে যুক্ত করে নেওয়ার ভয়ংকর এক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছে দখলদাররা। এমন বিষয় সামনে আসতেই মূলত কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের তিন দেশ।
ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীর আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নেসেটে একটি বিল প্রাথমিকভাবে পাস করেছে ইসরায়েল। বিলটি পূর্ণাঙ্গভাবে পাস হলে ফিলিস্তিনি এই ভূখণ্ডটি ইসরায়েলের মানচিত্রে সংযুক্ত হবে এবং সেখানে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব কার্যকর হবে। আর এমনটা ঘটলে শান্তিপূর্ণভাবে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনা কার্যত শেষ হয়ে যাবে।
নেসেটের এক বিবৃতিতে বলা হয়, জুদিয়া ও সামারিয়া (পশ্চিম তীরের) অঞ্চলে ইসরায়েল রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব প্রয়োগ করার জন্য বিলটি প্রাথমিকভাবে অনুমোদিত হয়েছে। এখন বিষয়টি আরও আলোচনার জন্য নেসেটের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটিতে যাবে।
অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করা নিয়ে একটি বিলে প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে দেশটির পার্লামেন্ট নেসেট। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড কার্যত দখল বা সংযুক্তিকরণের সমান এ পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইনের সরাসরি লঙ্ঘন বলে মনে করা হচ্ছে।
১২০ সদস্যের নেসেটে গত মঙ্গলবার ২৫–২৪ ভোটে বিলটি অনুমোদিত হয়। বিলটি আইন হিসেবে কার্যকর হওয়ার আগে মোট চার ধাপের ভোটাভুটির প্রথম ধাপ এটি।
তবে, ইসরায়েলি পার্লামেন্টে এ বিল পাস হওয়ায় ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও হামাসের পাশাপাশি তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কাতার, সৌদি আরব ও জর্ডান।
ফিলিস্তিনি ভূমি ইসরায়েলি মানচিত্রে সংযুক্ত করার চেষ্টা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, জেরুজালেম ও গাজা উপত্যকা এবং পশ্চিম তীরের অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড একটি অবিচ্ছিন্ন ভৌগোলিক এলাকা। এর ওপর ইসরায়েলের কোনো সার্বভৌমত্ব নেই।
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, এসব বিল দখলদার ঔপনিবেশিক শক্তির কুৎসিত চেহারা প্রকাশ করেছে। দখলদার ইসরায়েলের পশ্চিম তীরের ভূমি দখলের জোরাল চেষ্টা অবৈধ বলে আমরা ঘোষণা করছি।
সবচেয়ে কড়া ভাষায় এ পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা বলেছে, এটি ফিলিস্তিনি জনগণের ঐতিহাসিক অধিকারের প্রকাশ্য লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি চ্যালেঞ্জ।
সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি দখলদার কর্তৃপক্ষের পরিচালিত সব ধরনের বসতি সম্প্রসারণ ও দখলদারী তারা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছে।
জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও নেসেটের ভোটের ব্যাপারে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এক্সে দেওয়া বিবৃতিতে তারা বলেছে, এটি আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এটি দুই রাষ্ট্র সমাধানের ভিত্তি নষ্ট করবে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের অবিচ্ছেদ্য আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও ১৯৬৭ সালের ৪ জুনের সীমারেখার ভিত্তিতে জেরুজালেমসহ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অধিকারে হস্তক্ষেপ।
এদিকে শুধু মুসলিম দেশগুলোই নয়, ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রও। নেসেটে সদ্য পাস হওয়া বিলটিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ‘গাজা শান্তি পরিকল্পনার জন্য হুমকি’ বলে বিবেচনা করছে দেশটি।
বুধবার ওয়াশিংটন থেকে ইসরায়েলের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বিমানে ওঠার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময় করার সময় এক প্রশ্নের উত্তরে রুবিও বলেন, তারা (ইসরায়েল) নেসেটে একটি বিল পাস করেছে, কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে আমাদের পক্ষ থেকে এই বিলকে কোনো সমর্থন দেওয়া হবে না। কারণ, আমরা এই বিলটিকে গাজায় শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছি।
এছাড়া, বিলটির বিরোধিতা করেছেন খোদ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার দল লিকুদ পার্টির এমপিরা। এ ভোটকে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্টের লক্ষ্যে বিরোধী দলের উসকানি হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
বর্তমানে দখলকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ৭ লাখের বেশি ইসরায়েলি জোরপূর্বক বসতি গড়ে বাস করছে। আন্তর্জাতিক আইনে এসব বসতি ‘অবৈধ’ বলে ঘোষণা করা হয়েছে।