নিজের মুসলিম পরিচয় রক্ষায় সরব নিউইয়র্কের মেয়রপ্রার্থী মামদানী
- ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:৫৭
নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানী শুক্রবার এক আবেগঘন ভাষণে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীদের “বর্ণবাদী ও ভিত্তিহীন হামলা”র বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন। আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে আগাম ভোটগ্রহণ, আর নির্বাচনে মামদানীর জয়ের সম্ভাবনাই বেশি বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
ব্রঙ্কসের এক মসজিদের বাইরে দেওয়া বক্তব্যে মামদানী বলেন, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীরা নির্বাচনী প্রচারণায় ঘৃণা উস্কে দিচ্ছে। তিনি জানান, তাদের ইসলামবিরোধী মন্তব্য শুধু তাঁকে নয়, নিউইয়র্কে বসবাসরত প্রায় এক মিলিয়ন মুসলমানকেও প্রভাবিত করছে।
মামদানী বলেন, “নিউইয়র্কে মুসলমান হিসেবে বেঁচে থাকা মানেই অপমান সহ্য করা, কিন্তু অপমান আমাদের আলাদা করে না—যা আমাদের আলাদা করে তা হলো, আমরা সেই অপমান সহ্য করি।” নভেম্বরের ৪ তারিখের সাধারণ নির্বাচনের দুই সপ্তাহেরও কম সময় আগে তিনি এই কথা বলেন।
বর্তমানে নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য মামদানী জানান, তিনি তাঁর নির্বাচনী প্রচারণা মূলত জীবনযাত্রার ব্যয়-সাশ্রয় নিয়ে কেন্দ্রীভূত রাখতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সাম্প্রতিক দিনগুলোতে দেখা যাচ্ছে, “ইসলামভীতি এখন প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে একমাত্র মূল কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
তাঁর এই বক্তব্য এমন সময়ে এল, যখন তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী, সাবেক নিউইয়র্ক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো এক রেডিও অনুষ্ঠানে উপস্থাপক সিড রোজেনবার্গ বলেন, “আরেকটি ৯/১১ হামলা হলে মামদানী হয়তো উল্লাস করবেন,” এমন প্রশ্নে তিনি হেসে সায় দেন।
রোজেনবার্গের ওই মন্তব্যের পর কুওমো উত্তর দেন, “এটাও একটা সমস্যা।”
এ নিয়ে মুসলিম অধিকার সংগঠন কেয়ার অ্যাকশন–এর নির্বাহী পরিচালক বাসিম এলকারা বলেন, “একজন মুসলিম নির্বাচিত কর্মকর্তা আরেকটি ৯/১১ হামলায় ‘উল্লাস করবেন’—এমন মন্তব্যে সম্মতি জানিয়ে কুওমো নৈতিক সীমা অতিক্রম করেছেন।”
তিনি আরও বলেন, “ঘৃণামূলক বক্তব্যে অংশ নিয়ে কুওমো প্রমাণ করেছেন, তিনি সেই ধরনের রাজনীতিক—যিনি মানুষের মধ্যে ঐক্য নয়, বরং ভয় ছড়াতে চান।”
শুক্রবার মামদানী জানান, রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াও টেলিভিশন বিতর্কে তাঁকে ‘বিশ্ব জিহাদের সমর্থক’ বলে অপবাদ দিয়েছেন। এছাড়া কিছু সুপার পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটির বিজ্ঞাপনে তাঁকে সন্ত্রাসী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে কিংবা তাঁর খাবার খাওয়ার ভঙ্গিকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তাঁর এক খালার কথা মনে পড়ে, যিনি ৯/১১ হামলার পর থেকে হিজাব পরা অবস্থায় সাবওয়েতে উঠা বন্ধ করে দিয়েছিলেন নিরাপত্তাহীনতার কারণে। তাঁর এক কর্মীর গ্যারেজে ‘টেররিস্ট’ শব্দটি স্প্রে করে লেখা হয়েছিল। এমনকি তাঁকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, “বাঁচতে চাইলে নিজেকে মুসলমান বলে জানানো উচিত নয়।”
এদিকে শুক্রবার মার্কিন কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট নেতা হাকিম জেফ্রিজ আনুষ্ঠানিকভাবে মামদানীর প্রতি সমর্থন ঘোষণা করেন। তিনি নিউইয়র্কের অষ্টম কংগ্রেসনাল জেলার প্রতিনিধি, যার মধ্যে ব্রুকলিনের ইস্ট ফ্ল্যাটবুশ, কনি আইল্যান্ড ও ব্রাউনসভিল অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত।
মামদানী ইতিমধ্যেই নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোচুল, কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজ এবং স্বাধীন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সের মতো শীর্ষ ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন পেয়েছেন। তবে ইসরায়েলবিরোধী অবস্থানের কারণে নিউইয়র্কের সিনেটর চাক শুমারের মতো প্রভাবশালী নেতারা এখনো তাঁর পক্ষে অবস্থান নেননি।
তবুও, গত জুনে অনুষ্ঠিত ডেমোক্র্যাটের প্রাইমারি নির্বাচনে মামদানী বিপুল ভোটে জয়ী হন।
বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস দুর্নীতির অভিযোগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ালেও এবার কুওমোকে সমর্থন জানিয়েছেন। যদিও অ্যাডামসের নাম ব্যালটে রয়ে গেছে।
সাম্প্রতিক এএআরপি এবং গোদেম পোলিং এন্ড অ্যানালিটিক্স জরিপে দেখা গেছে, মামদানী বর্তমানে ভোটারদের মধ্যে ৪৩.২ শতাংশ সমর্থন নিয়ে এগিয়ে আছেন।
তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কুওমো পেয়েছেন ২৮.৯ শতাংশ এবং রিপাবলিকান কার্টিস স্লিওয়া ১৯.৪ শতাংশ।
জরিপ অনুযায়ী, দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি ভোটার জীবনযাত্রার ব্যয়কে প্রধান উদ্বেগ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এরপরই রয়েছে জননিরাপত্তা ও বাসস্থানের খরচ সংক্রান্ত উদ্বেগ।