ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে স্বর্ণ পাচারচক্রের মুল হোতারা

ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে স্বর্ণ পাচারচক্রের মুল হোতারা

ডেস্ক রিপোর্ট:
দেশের সীমান্ত ও বিমানবন্দর ঘিরে ক্রমেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে স্বর্ণ চোরাচালান চক্র। স্বর্ণ পাঁচার কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছেনা তার অন্যতম কারণ হচ্ছে চক্রের মুল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। পাঁচারকারীরা স্বর্ণ পাঁচারের জন্য পায়ের জুতা, জুতার সোল, প্যান্ট-শার্টের গোপন জায়গা, শরীরের কোমর ও পায়ুপথসহ বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে মাঝেমধ্যে দু-একটি চালানসহ দু-একজন পাঁচারকারী ধরা পড়লেও স্বর্ণ পাঁচারকারীচক্রের মূল হোতারা বা গডফাদাররা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

সোনা উদ্ধারের পর তাৎক্ষণিকভাবে ধরা পরা ব্যক্তিদের কাছ থেকে সহযোগীদের নাম জানা গেলেও মূল ব্যক্তিদের নাম জানা যায় না। বিভিন্ন স্থান থেকে সোনা ধরা পড়ার খবর গণমাধ্যমে উঠে আসে। মাঝে মাঝে এত সোনা ধরা পড়ে বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জব্দ করে যে স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে কোথা থেকে আসে আর কারা জড়িত? তারা কেন ধরা পড়ে না? বিজিবি প্রায়শ:ই পাঁচারকারীসহ বিপুল পরিমান স্বর্ণ আটক করলেও থেমে নেই পাঁচার। কারণ অধিকাংশ পাঁচারের সংবাদ পাওয়া যায় না। ভারতে সোনার চাহিদা এবং দাম বেশি হওয়ায় সীমান্ত পথে স্বর্ণ পাঁচার করছে আন্তর্জাতিক ও দেশি পাঁচারকারীরা।

গত ২০ এপ্রিল দুপুরে খুলনা মহানগরীর লবণচরা থানার জিরো পয়েন্ট এলাকা থেকে ১২টি স্বর্ণের বারসহ মাসুম বিল্লাহ নামে সোনা পাঁচারকারী চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভারতে পাঁচারের উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে ১২টি স্বর্ণের বার বাসে করে সাতক্ষীরায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছেÍএমন সংবাদের ভিত্তিতে নগরীর জিরো পয়েন্ট এলাকায় টুঙ্গীপাড়া এক্সপ্রেসের একটি বাস থামিয়ে তল্লাশি চালায় পুলিশ।

একপর্যায়ে ঐ বাসের যাত্রী মাসুম বিল্লাহর জুতার নিচে সুকৌশলে লুকিয়ে রাখা স্বর্ণের বারগুলো উদ্ধার করা হয়। ১২টি স্বর্ণের বারের ওজন ১১৬ গ্রাম, যার আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। গত ২২ এপ্রিল যশোরের বেনাপোলের গোগা সীমান্ত থেকে ২১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সদস্যরা চয়ন নামে এক যুবককে আটক করে। এ সময় তার জুতার ভেতর থেকে ছয় পিস সোনার বার উদ্ধার করা হয়। সে ভারতে পাঁচারের জন্য ঐ সোনা নিয়ে যাচ্ছিল। যার বাজারমূল্য প্রায় ৭২ লাখ টাকা।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ঝিনাইদহ, যশোর ও চুয়াডাঙ্গার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এখন স্বর্ণ চোরাকারবারিদের অন্যতম রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অভিযানে প্রায়ই উদ্ধার হচ্ছে কোটি কোটি টাকার কেজি কেজি স্বর্ণবার ও অলংকার। এরপরও থেমে নেই স্বর্ণ চোরাকারবারিরা। প্রতিনিয়ত কৌশল বদল করে তারা স্বর্ণ পাঁচার অব্যাহত রাখছে বলে জানা গেছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মতে, বিদেশ থেকে স্বর্ণ দেশে আসার পর মূলত দুটি জায়গায় যায়। প্রথমত, বাংলাদেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা এটা কিনে নেন। দ্বিতীয়ত, ভারতে পাঁচার করা হয়। বিশ্বে স্বর্ণের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভোক্তা দেশ ভারত। সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ২৪ জুলাই বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় স্বর্ণের চোরাচালান আটক করেছিলেন শুল্ক গোয়েন্দারা।

এদিন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটের কার্গো হোল্ড থেকে ১২৪ কেজি স্বর্ণ জব্দ করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানায়, দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে আসা বারগুলো প্রধানত শাহজালাল ও চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করে। যেসব বাংলাদেশি স্বর্ণ বহন করেন দুবাই থেকেই তাদের ও তাদের একজন স্বজনের ফোন নম্বর, পাসপোর্টের কপি, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, এনআইডির ফটোকপি রেখে দেওয়া হয়।

প্রবাসীরা প্লেন থেকে নামার পর প্রথমে যান কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাউন্টারে। সেখানে গিয়ে বারের ট্যাক্স দিয়ে রসিদ নেন। বার বৈধ করার সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশি ডিলারের প্রতিনিধি বিমানবন্দরের আশপাশ থেকে রসিদসহ স্বর্ণ বুঝে নেন। বিশ্বস্ত এক সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের হাজারী লেন ও নিউমার্কেট এলাকার বেশ কয়েকজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের সঙ্গে জড়িত এবং তারা চট্টগ্রামকে রুট ব্যবহার করে মিয়ানমার থেকে ভারতে স্বর্ণ পাঁচার করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

চোরাচালানের স্বর্ণ প্রথমে চট্টগ্রামে আসে এবং পরে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সহায়তায় ঢাকার তাঁতিবাজার হয়ে ভারতে পাঠানো হয়। কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের কিছু স্বর্ণ ব্যবসায়ী মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিভিন্ন সময়ে সোনাসহ আটক ব্যক্তিরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক সোনা পাঁচারকারীদের কাছে বাংলাদেশ এখন একটি নিরাপদ রুট।

মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা সোনা বাংলাদেশ হয়ে চলে যাচ্ছে প্রতিবেশী দেশের বাজারে। পাঁচার হওয়া সোনার কিছু অংশ মাঝেমধ্যে ধরা পড়ছে ঢাকার হজরত শাহজালাল ও চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরেও। নাম না প্রকাশের শর্তে এক সিআইডি কর্মকর্তারা বলছেন, চোরাচালানের টাকা দিয়ে কেউ করেছেন বাড়ি, কেউ কিনেছেন গাড়ি, কেউ বানিয়েছেন বিপণিবিতান, কেউ আবার গরুর খামার করেছেন।

এআর-১6/০৫/২৪

Share your comment :