নিউমার্কেটে ‘সাধ্যের মধ্যে’ ঈদের কেনাকাটা

নিউমার্কেটে ‘সাধ্যের মধ্যে’ ঈদের কেনাকাটা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
বেসরকারি চাকরিজীবী তানিয়া রতনা। নিউ মার্কেটে এসেছেন ঈদের কেনাকাটা করতে। পছন্দের কাতান শাড়ি দেখে দাম করতেই বিক্রেতা বললেন, পাঁচ হাজার। দামাদামি করে মাত্র ১৫০০ টাকায় পছন্দের কাতান শাড়িটি কিনলেন তিনি ।

রোববার সরেজমিনে রাজধানীর নিউমার্কেট, গাউসিয়া মার্কেট দেখা যায়, দরদাম করে, ক্রেতা বিক্রেতার সরব উপস্থিতিতে সরগরম ঈদ বাজার। শুধু গাউসিয়া মার্কেট নয় ঢাকা নিউমার্কেট, চাঁদনী চক, ইস্টার্ন মল্লিকা কমপ্লেক্স, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড ও তার আশেপাশের এলাকার মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলোতে রয়েছে একই দৃশ্য।

নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত কেনাকাটার জন্য ভিড় করছেন সকলে। ক্রেতারা বলছেন, সাধ্যের মধ্যে কেনাকাটা করা যায় বলে এখানে আসা।

ঈদের আর মাত্র ১০ দিন বাকি থাকায় বৃষ্টি, রোদ, ভ্যাপসা গরম ও রোজার ক্লান্তিকে উপেক্ষা করে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্রেতা বিক্রেতার সরব উপস্থিতিতে মুখরিত থাকে দোকানগুলো।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ছুটির আগেই মানুষ কেনাকাটা করে। সময়ের সাথে চাহিদা বাড়ছে। আর ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী মেয়েদের পাকিস্তানি, ইন্ডিয়ান বিভিন্ন ড্রেসের পাশাপাশি, দেশীয় সুতি পোশাক আমদানি করা হয়েছে।

নিউমার্কেটের তৃতীয় তলা ও নুরজাহান মার্কেটের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় ছেলেদের শার্ট, টিশার্ট, জিন্স, ট্রাউজারসহ নানা ধরনের পোশাক বিক্রি হচ্ছে। পাঞ্জাবি ও পায়জামা বিক্রি হচ্ছে সাইন্সল্যাবের আশেপাশের দোকানগুলোতে। বড়দের পাঞ্জাবি ১০০০ থেকে শুরু করে ৪ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া ছোটদের ৫০০ থেকে শুরু করে ২০০০ টাকার মধ্যে পাঞ্জাবি পায়জামা বিক্রি হচ্ছে।

ধানমণ্ডি হকার্স মার্কেটের ‘শাড়ি বাজার’ দোকানের স্বত্বাধিকারী ইমরান জানান, “আমরা আমাদের দোকানে সব সময় লেটেস্ট কালেকশন রাখি। এবারের ঈদে মসলিন অরগাঞ্জা, কাঞ্জিরম, কাতান, জর্জেট, শিফন শাড়ি ভালোই বিক্রি হচ্ছে। মানুষের চাহিদা বিবেচনা করে এবার কাপড় নামিয়েছি। চাহিদাও বেশ ভালো।

চাঁদনীচক মার্কেট এর “রফিক টেক্সটাইল” এর মালিক জানান, “একদামের দোকান আমাদের। ক্রেতাদের তাই দরদাম করে লস হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আমরা সীমিত লাভে অন্যান্যদের থেকে কম দামেই বিক্রি করি। শেষ সময়ে বিক্রি বেড়েছে। আরও বাড়বে আশা করি। “

অন্যদিকে নিউমার্কেটের ফুটপাত গুলোতে ও দেখা গেছে উপচে পড়া ভিড়। মার্কেট থেকে কিছুটা কম দামে জিনিস কিনতে ক্রেতা বিক্রেতারা ফুটপাত দখল করে বেচাকেনা করছেন। ফুটপাতে বাচ্চাদের বাহারী রঙের বার্বি ফ্রক গুলো ৩০০-৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন তৈরি পোশাক, গজ কাপড়, ওয়ান পিস, জুতা, ব্যাগসহ জুয়েলারি কমদামে কিনতে ফুটপাতগুলোতে তাই ভিড় করছেন নিম্ন আয়ের ক্রেতা-বিক্রেতারা।

তবে পণ্যের দাম নিয়ে কিছুটা অভিযোগ করছেন, ক্রেতারা৷ তুলনামূলক বেশিরভাগ কাপড়ের দাম চড়া বলে পছন্দ হলেও কিনতে পারছে না অনেকে।

কেনাকাটা করতে আসা রওশান আরা বলেন, “সব পোশাকের দাম বেশি। পাকিস্তানি যে জামা পছন্দ করে কিনতে এসেছিলাম তা ৪ হাজার টাকার উপরে দাম। সুতি পোশাকের দাম সাধ্যের মধ্যে আছে কিন্তু ঈদে তো একটু সুন্দর জামা লাগে। আরও কিছু দোকান দেখবো দামে না হলে তখন অন্যটা নিয়ে বাড়ি যাবো “

ইয়াসিন ইসলাম নামের আরেক ক্রেতা বলেন, “আমাদের সাধ্যের বাইরে দাম। ফুটপাত থেকে বেশির ভাগ জিনিস কিনছি। আর মার্কেট থেকে মেয়ের জামা। সব মিলিয়ে টুকটাক কিনছি। “

এছাড়া হাজারী বাগের বাসিন্দা লিজা আক্তার জানান, আসলে কেনাকাটা এই মার্কেটে অনেকটাই হাতের নাগালে, তবে সেটা নির্ভর করবে আপনি কতটা যাচাই বাছাই করে কিনতে পারবেন। বিশেষ করে এখানকার দোকানদারদের সাথে দামাদামি করে কিনতে পারলে সেটা ভালো হয় , না হলে ঠকতে হয়। সব দোকনদার এক নয়। অনেকে দাম বেশি চায় আবার বাচ্চারা পছন্দ করলে সেটার দাম কমাতে চায় না।

নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বুথ করেছে গাউসিয়া মার্কেটের সামনে। মাইকিং এর মাধ্যমে তারা সতর্কতা ও আশ্বাস দিচ্ছেন যে কোন পরিস্থিতিতে তারা সাথে আছেন জনগণের সেবায়।

এআর-৩১/৩/২৪

Share your comment :