সিপিডির আলোচনা:স্থবির ব্যাংকিং ব্যবস্থা অর্থনীতির জন্য সহায়ক নয়
বাংলাকন্ঠ রিপোর্ট:
ব্যাংকিং খাতে দুরাবস্থার শুরু ২০১১ সালে, চূড়ান্ত দুরাবস্থা ধারণ করে ২০১৭ সালে। বর্তমানের এই স্থবির ব্যাংকিং ব্যবস্থা অর্থনীতির জন্য সহায়ক নয়।
এ অবস্থায় কিছু ব্যাংকের সারভাইব সম্ভব নয়, প্রয়োজনে কিছু ব্যাংক বন্ধ করে দেওয়া উচিত বলে মনে করছে সেন্টার পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
রোববার (১৭ নভেম্বর) মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘বাংলাদেশে ব্যবসায়িক পরিবেশ সংস্কার: অন্তর্বর্তী সরকারের এজেন্ডা‘ শীর্ষক সংলাপে সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম তার উত্থাপিত প্রবন্ধে এসব কথা বলেন।
খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম তার প্রবন্ধে বাংলাদেশে ব্যবসা করার জন্য ১৭টি সমস্যা চিহ্নিত করেন। যার মধ্যে রয়েছে—দুর্নীতি, আমলাতন্ত্রের অদক্ষতা, বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীলতা, মুদ্রাস্ফীতি, আর্থিক সীমাবদ্ধতা, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, নীতির অস্থিতিশীলতা, দুর্বল শ্রমশক্তি, উচ্চ করহার, উদ্ভাবনের জন্য র্যাপ্ত ক্ষমতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ঝুঁকিপূর্ণ জন্বাস্থ্য এবং শ্রমনীতির সীমাবদ্ধতা।
এসব সমস্যা সমাধানে তিনি সমন্বিত ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থা জোরদার, সঠিক গবেষণালব্ধ হাইওয়ে নির্মাণ, অংশীজনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, সড়ক উন্নয়ন, কাঁচামালের সঠিক ব্যবহারের নিশ্চত করা, বন্দরে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ব্যবস্থাপনা গতি নিয়ে আসে ও বন্দরের সঙ্গে রেল-জলপথ সংযোগের উন্নয়নের তাগিদ দেন।
প্রযুক্তি নির্ভর পর্যবেক্ষণ জোরদার ও বাজার নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থার তাদিগ দিয়ে প্রথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীতকরণ এবং প্রথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ভোকেশনাল শিক্ষা সন্নিবেশিত করার তাগিদ দেন খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
দুর্নীতিকে মূল সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুর্নীতি সর্বদাই প্রধান সমস্যা। যদিও অপর্যাপ্ত অবকাঠামোর সমস্যা ধীরে ধীরে হ্রাস পেয়েছে। বছরের পর বছর অদক্ষ আমলাতন্ত্র একটি প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিরতা একটি বড় কারণ হয়ে উঠেছে। মুদ্রাস্ফীতি সবসময় বড় চিন্তার কারণ। অন্যদিকে নীতির অস্থিতিশীলতা একটি মাঝারি স্তরের সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে।
সিপিডির এই গবেষণা পরিচালক আরও বলেন, ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা, দুর্নীতি, প্রবৃদ্ধির হিসাবে গরমিলের কারণে অর্থনীতিকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হচ্ছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অর্থনীতির বড় অনিশ্চয়তা এখন উৎপাদন খাতে।
বিভিন্ন খাতের সমস্যা ও সংস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এনবিআর বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে, যার মধ্যে রয়েছে পরিচালনা, সাংগঠনিক এবং ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা। এসব সীমাবদ্ধতার ফলে ট্যাক্স জালিয়াতি কমানোর চেষ্টা চলছে। বর্তমান ভ্যাট ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি এবং মূল ব্যবসায়িক প্রক্রিয়াগুলো প্রধানত ম্যানুয়াল।
মুক্ত আলোচনায় নিট তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, সব অনিটের মূলে রয়েছে দুর্নীতি। দুর্নীতি দূর করা গেলে সব অনিয়মকে থামানো যাবে। এ জন্য আগে দুর্নীদিত কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
তিনি বলেন, রপ্তানিকরণে পিএসআইয়ের (প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেকশন) জন্য ঘুষ দিতে হয়ে। এই ঘুষ কমানোর জন্য আবার ঘুষ দেওয়া লাগে। এটা দূর করতে হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, বাংলাদেশে অস্থিরতার কারণে তৈরি পোশাক খাতের উৎপাদন ও রপ্তানি যখন ব্যহত হচ্ছে, তখন প্রতিবেশী প্রতিযোগি দেশ তাদের তৈরি পোশাক শিল্পের বিকাশের সুযোগ দেখছে। তারা তখন মনে করছে, এক বিলিয়ন ডলার রপ্তানি বৃদ্ধি করা গেলে পাঁচ লাখ লোকের কর্মসংস্থান করতে পারবে।
প্রতিযোগী দেশ বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের অস্থিরতার সুযোগ নিচ্ছে, এ বিষয়ে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ হেল রাকিব বলেন, পারসেপশন যার যেমন আছে সে তেমন উপস্থাপন করবে, এটা স্বাভাবিক। তবে আমরা আশাবাদী আমাদের অবস্থা তারা ধরতে পারবে না। আমাদের সেলিং পয়েন্ট খুবই ইউনিক। যদি নীতি এবং অবকাঠামোগত সার্পোট পাই, যদি টাইম লাইনটা পূরণ করা যায় তাহলে আমাদের ১০০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি এখন আর স্বপ্ন নয়; এটা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত অধ্যাপক লুৎফে সিদ্দিকী। অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু, এফআইসিসিআইয়ের সভাপতি জাভেদ আখতার, ডিসিসিআইয়ের সভাপতি আশরাফ আহমেদ ও বিটিএমইএ’র সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল।
এএ/
Share your comment :