ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে কোটা বিরোধী আন্দোলন

ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে কোটা বিরোধী আন্দোলন

বাংলাকন্ঠ রিপোর্ট
সরকারী চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো আন্দোলনে উত্তাল হয়ে পড়েছে দেশের অধিকাংশ সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাস। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে পড়ে। অবরােধ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন আঞ্চলিক সড়ক-মহাসড়কগুলো। ফলে সারা দেশে এক রকম সড়ক যোগােযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট:

ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ রাবি শিক্ষার্থীদের
রাবি প্রতিনিধি
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখাসহ চার দফা দাবিতে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোড থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

এর আগে, সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে বিক্ষোভ সমাবেশে করেন তারা। এ সময় বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীদের দলে দলে জড়ো হতে দেখা যায় এ আন্দোলনে।

জাবি শিক্ষার্থীদের ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ
জাবি প্রতিবেদক
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। এর প্রতিবাদে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ৩০ মিনিট অবরোধ করে রাখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্প্রতিবার (০৪ জুলাই) দুপুর সোয়া ১২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গিয়ে অবরোধ করেন তারা।

অবরোধে শিক্ষার্থীরা- ‘লেগেছে রে লেগেছে রক্তে আগুন লেগেছে, লাখো শহীদের চেতনা, বৃথা যেতে দেবো না, মেধাবীদের কান্না আর না আর না, সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে, আঠারোর পরিপত্র বহাল চাই বহাল চাই’ ইত্যাদি কোটাবিরোধী স্লোগান দিতে থাকে। এসময় দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনে থাকার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী তৌাহিদ মো. সিয়াম বলেন, আপিল বিভাগ আজ শুনানি না দিয়ে ছাত্রসমাজের সঙ্গে টালবাহানা করেছে। আমরাও বলে দিতে চাই আমাদের দাবি পূরণ না হলে পুরো দেশ অচল করে দেওয়া হবে। সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে আজকে মাত্র ৩০ মিনিট অবরোধ করা হয়েছে। এর পর থেকে লাগাতার অবরোধ চলবে।

নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম ইমন বলেন, সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখা হয়েছে। কোটা বৈষম্য বহাল রেখে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রহসন করার কারণে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করতে বাধ্য হচ্ছি।

পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহফুজ মেঘ বলেন, হাইকোর্ট আজকে কোটা পুনর্বহালের রায় বহাল রেখেছে, তারই প্রতিবাদে আমরা রাস্তা অবরোধ করেছি। যেহেতু এখনো শুনানি দেয়নি, সেটার উপর আশা রেখে জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে আমরা এখনো অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য কর্মসূচি দেইনি। তবে আজকের এই কর্মসূচি থেকে জানাতে চাই, যদি এই কোটা প্রথা বহালের টালবাহানা করা হয় তাহলে আমরা কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে সারাদেশ অচল করার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. আলমগীর কবির বলেন, কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদের কর্মসূচি হিসেবে সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ন্যায় এখানেও শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করেছে। তবে এম্বুলেন্সগুলো বিকল্প রাস্তা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর দিয়ে পার করে দেওয়া হচ্ছে।

কুবি শিক্ষার্থীদের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ

কুবি প্রতিনিধ

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের সদর দক্ষিণ উপজেলার কোটবাড়ী এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর সাড়ে ১২টায় শুরু হওয়া এই অবরোধে ঢাকা ও চট্টগ্রামমুখী দুই লেনে গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে করে অন্তত ১০ কিলোমিটার যানজট লেগেছে।

বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১২টার দিকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশী শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। এতে শাহবাগ মোড়ের চারপাশের রাস্তা বন্ধ রয়েছে।

এর আগে সকাল ১১ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন আন্দোলনকারীরা। মিছিলটি রাজু ভাস্কর্য হয়ে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয়।

এর আগে ২ ও ৩ জুলাই কোটা পদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছিলেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে পাঁচ বছর আগে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরির নিয়োগে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে গত ৫ জুন রায় দেন হাইকোর্ট। এ রায়ের ফলে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা ফিরে আসে।

পরে এ রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। কিন্তু গত ৯ জুন প্রাথমিক শুনানির পর আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠানো হয়।

২০১৮ সালে কোটা পদ্ধতি বাতিল করার আগ পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষণ করা হতো। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ছিল ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ কোটা।

Share your comment :