গাবতলী বাস টার্মিনাল ভেঙে হেমায়েতপুরে হবে বহুতল টার্মিনাল

গাবতলী বাস টার্মিনাল ভেঙে হেমায়েতপুরে হবে বহুতল টার্মিনাল

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল ভেঙে হেমায়েতপুরে নির্মাণ করা হবে প্রথম বহুতল আন্তজেলা বাস টার্মিনাল। নগরীর যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ঢাকার উপকণ্ঠে এ ধরনের পরিকল্পিত চারটি টার্মিনালের মধ্যে এটিই প্রথম।

বাস টার্মিনাল স্থানান্তরের এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে গাবতলীর ব্যস্ততম বাস টার্মিনালটি হেমায়েতপুরে সরিয়ে নেওয়া হবে। প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী, এ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫১০ কোটি টাকা। আগামী বছরই এ টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

চার বছরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষে টার্মিনালটি যাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে জমা দিয়েছে ডিএনসিসি। অনুমোদন শেষে প্রকল্পটির জন্য বিদেশি ঋণ পেতে প্রস্তাবটি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে পাঠানো হবে। প্রকল্পটি ঢাকার ট্রাফিক সমস্যা সমাধানে সরকারের বৃহত্তর কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো, নির্ভরযোগ্য, নিরাপদ ও আরামদায়ক গণপরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, ব্যক্তিগত পরিবহনের ওপর বর্ধিত নির্ভরতা কমানো।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) হেমায়েতপুরে ৪৪ একর জায়গাজুড়ে অত্যাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন এই টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। সে অনুযায়ী, এই জায়গায় ছয় তলা বিশিষ্ট দুটি টার্মিনাল ভবন নির্মাণ করা হবে, যেখানে ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার বাস রাখা যাবে। এর সঙ্গে থাকবে একটি ডিপো।

এ ছাড়াও প্রাইভেট কার বা ব্যক্তিগত গাড়ি রাখার জন্য থাকবে দুটি তলা। প্রতিটি তলায় ৪৬টি করে গাড়ি রাখা যাবে। ছয় তলা বিশিষ্ট টার্মিনালটির চারটি তলা থাকবে যাত্রীবাহী বাসের জন্য। প্রতিটি তলায় ৪৩২টি করে বাস রাখা যাবে। এ ছাড়া ডিপোতে আরও এক হাজার বাস রাখা যাবে।

এর আগে রাজধানীর বাস চলাচল সুষ্ঠু ও নিয়মতান্ত্রিক কাঠামোয় আনতে দুই সিটি করপোরেশনের দুই মেয়রের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠিত হয়। কমিটি ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ দ্বারা পরিচালিত একটি সম্ভাব্যতা পর্যালোচনার পর আন্তজেলা বাস টার্মিনালগুলো স্থানান্তরের জন্য চারটি সম্ভাব্য স্থান নির্বাচন করে। হেমায়েতপুরের পাশাপাশি অন্য তিনটি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ভাটুলিয়া, কাঁচপুর এবং বাঘাইর এলাকা নির্বাচন করা হয়।

সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল সরানোর কাজও অনেকদূর এগিয়েছে। খুব শিগগিরই টার্মিনালটি কাঁচপুরে সরিয়ে নেয়া যাবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান। বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঢাকায় চারটি নতুন আন্তনগর বাস টার্মিনাল নির্মাণের পাশাপাশি গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনাল শহর থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। রাজধানীর প্রবেশ ও বহির্মুখী যাতায়াতের জন্য গাবতলীকে ঢাকার অন্যতম ব্যস্ত এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আশা করছেন, টার্মিনালটি স্থানান্তর করা হলে বিমানবন্দর সড়কে যানজট অনেক কমে যাবে। হেমায়েতপুরের প্রস্তাবিত জায়গাটি এমআরটি লাইন ৫ স্টেশন এবং ডিপো এলাকার সঙ্গেই অবস্থিত। ফলে গণপরিবহন ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে। গাবতলীর বর্তমান টার্মিনাল এলাকাটির একাংশ সিটি বাস টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহৃত হবে। জানা গেছে, রাজধানীর ভিতরে আন্তজেলা ও শহরতলির বাস চলাচল বন্ধে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করে।

এতে দেখা যায়, প্রতিদিন ঢাকার রাস্তায় যত গাড়ি চলে, তার ২৪ শতাংশ আন্তজেলা ও শহরতলির বাস। শহরের ভিতর রয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ বাসের কাউন্টার। এসব কাউন্টার যানজটের হটস্পট। এরই আলোকে ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে পাঁচটি আন্তজেলা টার্মিনাল ও তিনটি বাস ডিপো নির্মাণের পরিকল্পনা করে সরকার। সমীক্ষা অনুযায়ী, ঢাকার প্রবেশমুখে পাঁচটি বাস টার্মিনাল গড়ে তুলতে ব্যয় হবে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা।

অন্যদিকে তিনটি বাস ডিপো তৈরি করতে খরচ হবে আরও প্রায় ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। সমীক্ষায় আরও বলা হয়, ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে সবচেয়ে বড় আন্তজেলা বাস টার্মিনালটিই হবে সাভারের হেমায়েতপুরে। চুয়াডাঙ্গা, যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, মেহেরপুর, নড়াইল, নবাবগঞ্জ, পাবনা, রাজবাড়ী ও রাজশাহী থেকে আসা আন্তজেলা বাস থামবে হেমায়েতপুর টার্মিনালে।

গাবতলীর বাস টার্মিনালের বর্তমান স্থানেই এমআরটি লাইন-২ এমআরটি লাইন-৫ এর উত্তর রুট এবং এমআরটি লাইন-৫ এর দক্ষিণ রুটের মেট্রোরেলের স্টেশন হবে। বলা যায়, এই তিনটি রুট ছুঁয়ে যাবে বর্তমান গাবতলী বাস টার্মিনালকে।

এআর-১৭/০৫/২৪

Share your comment :