গোমতী নদীর বাঁধে ভাঙন:কুমিল্লায় খোলা আকাশের নিচে হাজারো মানুষ
বাংলাকণ্ঠ রিপোর্ট:
ভারত থেকে আসা উজানের ঢলে ভেঙে পড়েছে কুমিল্লার গোমতী নদীর বাঁধ। এতে নদীর আশপাশের অন্তত ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছেন লাখো মানুষ। এদের মধ্যে অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিলেও অনেকেই সেখানে ঠাঁই না পেয়ে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সকালে ভেঙে পড়া গোমতীর বাঁধ এলাকা জেলার বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের বুড়বুড়িয়া এলাকায় এ দৃশ্য দেখা গেছে।
সরজমিনে দেখা গেছে, বাঁধের ওপর খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নেওয়া এসব মানুষের কেউ কেউ সড়কের পাশে শুয়ে আছেন। এদের মধ্যে অসুস্থ, বয়োবৃদ্ধ, গর্ভবতী নারীসহ অনেক শিশু রয়েছেন। স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়েই আশ্রয় নিয়েছেন এসব মানুষ। অনেকেই অটোরিকশাকে ঘরের মতো বানিয়ে সেখানে অবস্থান করছেন। কেউ কেউ শামিয়ানা টাঙিয়ে খাট পেতেছেন সড়কে।
বাঁধ ভাঙার বিষয়টি আগে থেকে কিছুটা আঁচ করতে পেরেছিলেন কেউ কেউ। ঘরের দামি আসবাবপত্রসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল সরিয়ে বাঁধের ওপর নিয়ে আসতে পেরেছিলেন সেসব মানুষ। যেসব পরিবারে পুরুষ ছিল না, সেসব পরিবারের নারীরা কোনোরকম জীবন বাঁচিয়ে বাঁধে ওঠেন সন্তানদের নিয়ে। ওইসব পরিবারের সবকিছুই তলিয়ে গেছে পানিতে। খোলা আকাশের নিচে একবুক দীর্ঘশ্বাসই এখন তাদের সম্বল।
খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিলেও এসব মানুষের কাছে পৌঁছায়নি কোনো ত্রাণ সহায়তা। শুকনো খাবার আর বিশুদ্ধ পানির সংকট পোহাচ্ছেন তারা। কয়েকটি সামাজিক সংগঠন ত্রাণ সহায়তা দিলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন তারা।
রাস্তায় আশ্রয় নেওয়া আশরাফুল ইসলাম বলেন, কল্পনাও করতে পারিনি, আমাদের জীবনে এত দুর্বিষহ দিন আসবে। রাত ১১টার পর বাঁধ ভাঙা নিয়ে হই চই পড়ে। তখন সামনে যা পেয়েছি নিয়ে বাঁধে উঠেছি। ঘরবাড়ি সব তলিয়ে গেছে পানিতে।
নূরুন নাহার নামের এক বানভাসি বলেন, আমাদেরকে আগে জানালে আমরা মালপত্র, ছেলে-মেয়েদের নিয়ে দূরে চলে যেতাম। এখন এমন এক বিপদে পড়লাম, না আছে এ কূল না আছে ও কূল।
আলী আহমেদ নামের নামের একজন বলেন, আমরা নিরুপায় হয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছি। এখানে আমাদের খাবার-পানি সংকটের পাশাপাশি টয়লেটের সমস্যাটাও অনেক বেশি। শত শত নারীও এখানে আছে। এখানে সবারই অনেক দুর্গতি। এর মধ্যে নারীদের একটু বেশি।
জহির উদ্দিন নামের একজন বলেন, গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাত থেকে এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো লোক এখানে আসেনি। ডিসি-এসপি দূরের কথা, থানার ওসি কিংবা ইউএনও ও আসেননি। ত্রাণ দেবে তো পরের কথা।
বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও সাহিদা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের সহায়তা করা হবে। তালিকা করা হচ্ছে।
এএ/
Share your comment :