চট্টগ্রামে বেপরোয়া কিশোর গ্যাং
ডেস্ক রিপোর্ট:
চট্টগ্রামে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং। কথিত রাজনৈতিক ‘বড় ভাইদের’ ছত্রছায়ায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তারা। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ‘লাঠিসোঁটা ও অস্ত্র নিয়ে’ তাদের প্রকাশ্য মহড়া ও দৌড়াদৌড়ি নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ কোনো প্রতিবাদ করলে তাদের মারধর করা হচ্ছে। খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ সব ধরনের অপরাধেই জড়িয়ে পড়ছে তারা।
এসব অপরাধীর অনেকে আবার মাদকাসক্ত। কেউ কেউ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায়ও জড়িত। রমজানে অভিযান চালিয়ে নগরীর ৬ কিশোর গ্যাংয়ের ৩৩ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব-৭। কিন্তু তাতেও এদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতা রুখতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ-(সিএমপি) প্রতিটি থানায় মতবিনিময় সভা শুরু করেছে। ইতোমধ্যে চান্দগাঁও থানায় মতবিনিময় সভা সম্পন্ন হয়েছে। কিশোর অপরাধী ও তাদের মদদদাতাদের তালিকা তৈরিরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ জানায়, সিএমপিতে দুই শতাধিক কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। একেক দলে রয়েছে ১০ থেকে ১৫ জন। তাদের প্রশ্রয় দিচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একাধিক কাউন্সিলর ও রাজনৈতিক দলের নেতা। গত ছয় বছরে সাড়ে ৫শর বেশি অপকর্মে কিশোর গ্যাং জড়িত বলে পুলিশের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এর মধ্যে খুনের ঘটনা ঘটেছে ৩০টির বেশি।
৫ এপ্রিল নগরীর আকবর শাহ থানার ফিরোজশাহ কলোনি ঈদগাঁও মাঠ সংলগ্ন জে লাইনে কিশোর গ্যাংয়ের হামলার মুখে পড়েছিলেন দন্ত চিকিৎসক কোরবান আলীর ছেলে আলী রেজা। ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেও হামলার শিকার হন কোরবান আলী। তার মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল তিনি মারা যান। এ ঘটনায় ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও কয়েকজনকে আসামি করে আকবর শাহ থানায় মামলা করা হয়েছে। হামলাকারীরা স্থানীয় যুবলীগ নেতা গোলাম রসুল নিশানের অনুসারী বলে অভিযোগ করেছেন আলী রেজা। সোমবার কিশোর গ্যাংয়ের অত্যাচার ও হুমকি থেকে বাঁচার জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের দারস্থ হয়েছেন হিলভিউ সোসাইটির এমএ ওয়াদুদ নামে এক বাসিন্দা। তিনি কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করেন।
রোববার বিকালে ডবলমুরিং থানার মনসুরাবাদ এলাকায় কিশোর গ্যাং-এর হামলার শিকার হন চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের ক্যামেরাপারসন সেলিম উল্লাহ। এ ঘটনায় ডবলমুরিং থানায় মামলা করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ডবলমুরিং থানা পুলিশ ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে।
২০১৮ সালের জানুয়ানিতে কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র আদনানকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে কিশোর গ্যাং সদস্যরা। পরে পুলিশ কিশোর গ্যাং ও তাদের মদদদাতাদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করলে নগরীতে কিছুটা কমেছিল কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র জানায়, নগরীতে ছিনতাইয়ের কবলে পড়েছেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, যারা তাদের টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নিয়েছে তাদের বেশিরভাগের বয়স ১৪ থেকে ১৮ এর মধ্যে। সন্ধ্যার পর নগরীর স্টেশন রোড, বিআরটিসি মোড়, কদমতলী, চকবাজার, মেডিকেল হোস্টেল, শিল্পকলা একাডেমি, সিআরবি, খুলশি, ফ’য়স লেক, ডেবারপার, চান্দগাঁও শমসের পাড়া, ফরিদের পাড়া, আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনি, সিডিএ, ছোটপুল, হালিশহর, বন্দর কলোনি ও পতেঙ্গার বেশ কয়েকটি এলাকায় মাদক বেচাকেনা, মোটরসাইকেল ও সাইকেল ছিনতাই করছে তারা।
প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, সিএমপির ১৬ থানার ওসিকে পুলিশ কমিশনার নির্দেশনা দিয়েছেন কিশোর অপরাধী ও তাদের মদদদাতাদের তালিকা তৈরি করতে। এছাড়া ১৪৫ জন বিট কর্মকর্তাকে তাদের বিটের নির্ধারিত এলাকায় কিশোর গ্যাং ও তাদের মদদদাতাদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন থানা এলাকায় কারা কিশোর গ্যাং কালচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, কিশোরদের মধ্যে কারা মাদক বিক্রি, মাদক পাচার ও ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত তাদেরও তালিকা করতে বলা হয়েছে।
সিএমপির এডিসি (গণসংযোগ) তারেক আজিজ বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবারও (আজ) সিএমপির অপরাধ পর্যালোচনা সভা রয়েছে। ওখানেও কিশোর গ্যাংয়ের ব্যাপারে আলোচনা হবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন থানায় থানায় কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে সচেতনমূলক প্রোগ্রাম করা হচ্ছে।
এআর-২৩/০৪/২৪
Share your comment :