চবি কর্মচারী ইয়াসিরের নেতৃত্বে চলছে ভুয়া ভর্তি, নেপথ্যে কে?
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) প্রতিনিধি :
‘আমি লিকু বলছি, তাকে চাকরিটা দিয়ে দেন’— টেলিফোনের এমন তদবিরে চাকরিও হয়ে যায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব-২ গাজী হাফিজুর রহমান লিকু সেজে এভাবেই প্রতারণা করে যাচ্ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী ইয়াসির আরাফাত। ৩০ বছর বয়সী এই যুবক চটগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব নিয়ামক দপ্তরের উচ্চমান সহকারী। সে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী প্রক্টর আহসানুল কবির পলাশের শ্যালক ও উপাচার্যের সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী মো. সাহাবুদ্দিনের চাচাতো ভাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী হয়েও প্রতারণায় জড়িয়ে পড়া এই যুবক ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে ধরা পড়ার পর জানা গেল, ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বাধীন প্রতারকচক্রটি প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব গাজী হাফিজুর রহমান লিকুর পরিচয় দিয়ে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছাড়াও সরকারি অন্যান্য নিয়োগদাতা কর্তৃপক্ষকে ফোন করে তার মনোনীত ব্যক্তিদের চাকরি দেওয়ার জন্য তদবির করাসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ফোন করে চিকিৎসা ফি কমানো ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের রোগী দেখার সিরিয়াল দেওয়ার কাজ করে আসছিলেন। এভাবে তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।
এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন অভিনব প্রতারণায় নিয়োগ পাওয়ার ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে ক্যাম্পাসে। সংশ্লিষ্ট অনেকে বলছেন, টেলিফোনে প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব পরিচয় দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে এমন নিয়োগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও হয়েছে কিনা— সেটা তদন্ত হওয়া জরুরি। গোয়েন্দা পুলিশের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী ইয়াসির আরাফাত স্বীকার করেছেন ভুয়া লিকু তিনি চবি উপাচার্যকেই নিয়োগের জন্য ফোন করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব নিয়ামক মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘ইয়াসির আরাফাত হিসাব নিয়ামক দপ্তরের উচ্চমান সহকারী। আমরা তার বিষয়টি শুনেছি। তার এমন প্রতারণার নেপথ্যে সাবেক এক সহকারী প্রক্টরের যোগসাযোজ রয়েছে বলে শুনা যাচ্ছে। আমরা তদন্ত করে দেখছি। তার বিরুদ্ধে যা ব্যবস্থা নেওয়ার কর্তৃপক্ষ নেবে।’
এদিকে গোয়েন্দা পুলিশ ইয়াসির আরাফাত ছাড়াও এরই মধ্যে আনিস নামে প্রতারকচক্রের আরও একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
সোমবার (৪ মার্চ) ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব-২ পরিচয়ে প্রতারণা করা ভুয়া লিকু বিভিন্ন লোকজনকে টেলিফোন করেন। বলেন, আমি লিকু বলছি, তাকে চাকরিটা দিয়ে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ে বা কোনো প্রতিষ্ঠানে। এভাবে কিন্তু লিকুর পরিচয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিও হয়ে গেছে একজনের।’
ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বাধীন প্রতারকচক্রের অপর সদস্য আনিসও ভুয়া লিকু সেজে বিভিন্নভাবে প্রতারণা করে আসছিলেন। একটি সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক আঞ্জুমান আরা বেগম সম্প্রতি নারী কোটায় সংরক্ষিত আসনে এমপি হতে শুরু করেছিলেন দৌড়ঝাঁপ। তদবির করতে তিনিও গিয়ে পড়েন এই ভুয়া লিকুর খপ্পরে। খোয়ান ৬২ লাখ টাকা।
আঞ্জুমান আরা বেগম স্থানীয় রাজনীতি করেন। তার ইচ্ছা তিনি নারী কোটায় এমপি হবেন। সেজন্য তিনি আনিস নামে একজন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আনিস বলেন, ‘আপা আপনার সঙ্গে কি লিকুর কোনো যোগাযোগ বা ম্যাসেজ আসেনি?’ জবাবে আঞ্জুমান আরা বলেন, ‘হ্যাঁ ম্যাসেজ তো আসছে। তাতে লেখা ছিল—দ্রুতই নিয়োগ দেওয়া শেষ হয়ে যাবে। দ্রুত ৬২ লাখ টাকা পাঠান। প্রথমে ১২ লাখ টাকা দিতে হবে উন্নয়ন ফান্ডে। বাকি টাকা দিতে হবে অ্যাকাউন্টে।’ তখন আনিস বলেন, ‘ভাই তো টাকা দিতে বলেছে, টাকা দেন।’
এরপর আঞ্জুমান আরা বেগম দুজনের মাধ্যমে সুমন ও আনিসের নামে নগদ ও বিকাশের মাধ্যমে মোট ৬২ লাখ টাকা পাঠিয়ে দেন। এরপর আর ওই নম্বর খোলা পাওয়া যায়নি।
Share your comment :