ডিসেম্বর থেকে ৩ মে পর্যন্ত রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ছোটবড় ৩৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে
নিজস্ব প্রতিবেদক:
ভ্রমণে যাত্রীদের কাছে বরাবরই নিরাপদ বাহন রেল। কিন্তু এখন নানা দুর্ঘটনায় নিরাপদ রেল ক্রমেই অনিরাপদ হয়ে উঠছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রেলসম্পদ। বিপর্যয় ঘটছে শিডিউলের। দুর্ভোগ ও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। সঙ্গে বাড়ছে আতঙ্ক ও শঙ্কা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুর্ঘটনাগুলোর প্রায় সবই হিউম্যান ফেইলিউরের (মানবসৃষ্ট ভুল) কারণে সংঘটিত হচ্ছে। তবে এসব দুর্ঘটনার নেপথ্যে পাঁচটি মূল কারণ আছে বলে মনে করেন রেলসংশ্লিষ্টরা। এগুলো হচ্ছে সিগন্যালিংয়ে ত্রুটি, ভুল সিগন্যাল, নিয়ন্ত্রণকক্ষের ভুল নির্দেশনা, সিগন্যাল ওভারশুট, পয়েন্ট সেট করার আগে সিগন্যাল ছাড়াই ট্র্যাপ পয়েন্ট অকুপাইড করা। তা ছাড়া দায়িত্বরত পয়েন্টসম্যান ভুল পয়েন্ট সেট করার কারণেও দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে রেলওয়ে-সূত্রে জানা যায়।
গত ৩ মে সকালে জয়বেদপুর স্টেশনে টাঙ্গাইল কমিউটার ও ৯৮১ নম্বর পণ্যবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় ট্রেনের আটটি কোচ ও ট্যাংক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গুরুতর আহত হন দুজন। তবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনে লোকোমাস্টারের দক্ষতায় বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়ার ঘটনাও আছে।
রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, দক্ষ জনবল কমে যাওয়া, অবসরে যাওয়া কর্মীদের দিয়ে কাজ করানো, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে অনভিজ্ঞ জনবল নিয়োগ দেওয়াসহ নানা কারণে এমন দুর্ঘটনা ঘটছে। রেলওয়ে-সূত্রে জানা যায়, গত ডিসেম্বর থেকে ৩ মে পর্যন্ত রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ছোটবড় ৩৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে তিনটি, ফেব্রুয়ারিতে তিনটি, মার্চে দুটি, এপ্রিলে ছয়টি এবং ৩ মে পর্যন্ত একটি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে।
অতীতে ট্রেনের চাকা সরে যাওয়া কিংবা ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা বেশি ঘটত। এখন ট্রেনে বড় দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে আছে দুটি রেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ, পেছন থেকে ধাক্কা দেওয়া বা ক্রসিংয়ের সময়ে অন্য ট্রেনের ওপর চালিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা। এসব দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যাও বেশি হচ্ছে। ট্রেন উদ্ধারে হচ্ছে বিলম্ব। এতে বিঘ্ন ঘটে সেবার মানে। বিপর্যয় ঘটে শিডিউলে। সর্বশেষ ১৭ মার্চ গুণবতী-হাসানপুর সেকশনে বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনায় একসঙ্গে ২৫টি ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় হয়।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ কমার্শিয়াল অফিসার মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘রেল দেশের যাত্রীদের কাছে নিরাপদ বাহন। এটা এখনো আছে। তবে দুর্ঘটনা তো দুর্ঘটনাই, যা বলেকয়ে আসে না। দুর্ঘটনা যে কোনো কারণেই ঘটতে পারে। দুর্ঘটনা হলেও হতাহতের সংখ্যা অনেক কম। কিন্তু আমরা রেলে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।’
তিনি বলেন, ‘এখানে নানা ক্ষেত্রে জনবলের সংকট আছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়সংখ্যক জনবল না থাকায় জরুরি কাজটি যথাসময়ে করা সম্ভব হয় না। জনবল সংকটের বিষয়টি চলমান প্রক্রিয়া। আশা করি পর্যায়ক্রমে এসব সমস্যার সমাধান হবে।’
এআর-১২/০৫/২৪
Share your comment :