ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত পদক্ষেপের বিকল্প নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক:
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা এবং ব্যক্তি পর্যায়ে সবার সমন্বিত পদক্ষেপের বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন ইউএইচসি ফোরাম-ব্র্যাক সংলাপের বক্তারা।
মঙ্গলবার (৭ মে) দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ইউএইচসি ফোরাম ও ব্র্যাক ডেঙ্গু বিষয়ক এ সংলাপের আয়োজন করে।
সেমিনারে বলা হয়, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ডেঙ্গু রোগের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবের সম্মুখীন হয়েছিল। যেখানে ৩ লাখ ২১ হাজারেরও বেশি মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এবং ১ হাজার ৭০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এক সময় মৌসুমি হিসেবে বিবেচিত ডেঙ্গু এখন সারা বছরব্যাপী মহামারিতে পরিণত হয়েছে। ২০২৪ সালের মাত্র চার মাসে ২,১০০-এরও বেশি মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০২৪-২০৩০ সালের জন্য একটি জাতীয় ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কৌশল প্রণয়ন করেছে বটে কিন্তু কৌশলটি বাস্তবায়নে মনিটরিং ব্যবস্থা এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ইউএইচসি ফোরামের আহ্বায়ক এবং ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।
সেমিনারে প্যানেল আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগামের পরিচালক ডা. শেখ দাউদ আদনান, বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল অ্যান্ড মেজারমেন্টসের মহাপরিচালক ড. মালা খাতুন।
সেমিনারে আরও আলোচনা করেন ব্র্যাকের হেলথ অ্যান্ড হিউম্যানিটারিয়ান ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর মো. আকরামুল ইসলাম, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জনস্বাস্থ্য পরামর্শক ড. শাবানা রোজ চৌধুরী (ভিডিওর মাধ্যমে) উপস্থিত ছিলেন।
ইউএইচসি ফোরাম এবং ব্র্যাকের সহ-আয়োজকদের পক্ষ থেকে ড. আমিনুল হাসান এবং ড. ইমরান আহমেদ চৌধুরী স্বাগত বক্তব্য দেন।
ডেঙ্গু ছড়ানো মশাদের আচরণ ও প্রজনন ধারায় পরিবর্তন সম্পর্কিত নতুন গবেষণালব্ধ ফলাফল তুলে ধরেন ড. কবিরুল বাশার। সেখানে উল্লেখ করা হয়, এই মশাগুলো কেবল পরিষ্কার পানিতে নয়, দূষিত নর্দমার পানিতে বেঁচে থাকতে সক্ষম। কৃত্রিম আলোর তীব্রতা বাড়ায়, রাতের বেলায়ও মারাত্মক সংক্রমণ ঘটছে। এটি শুধু শহরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে। মহিলাদের মধ্যে মৃত্যুহার বেশি। এমন গবেষণালব্ধ ফলাফলগুলোকে আরও কার্যকর প্রতিরোধের জন্য বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
দেশীয়ভাবে ডেঙ্গু টেস্টের কিট উন্নয়নে নিজের অভিনব উদ্ভাবনের তথ্য তুলে ধরেন ড. মালা খান। ঘরোয়া এবং সাশ্রয়ী সমাধান হিসেবে বড় ধরনের সম্ভাবনা রয়েছে এই কিটের।
ডা. শেখ দাউদ আদনান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের নির্দেশিকা ও কৌশলের ওপর আলোকপাত করেন।
মো. আকরামুল ইসলাম ব্র্যাকের কমিউনিটি এনগেজমেন্ট কৌশলের কথা বলছেন, যা প্রতিরোধ মূলক পদক্ষেপ এবং তৃনমূল গোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবার চাহিদা পূরণে সহায়তা করবে।
ডা. শাবানা রোজ চৌধুরী ভারতের কলকাতা শহরে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় তাদের অভিজ্ঞতা একটি অনলাইন প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন তার বক্তৃতায় ডেঙ্গু মোকাবিলায় সামাজিক অংশগ্রহণের আবশ্যিকতা তুলে ধরে বলেন, প্রতিরোধ সবসময় প্রতিকারের চেয়ে উত্তম। আমাদের অবশ্যই ডেঙ্গুকে পরবর্তী মহামারি হয়ে ওঠার আগেই মোকাবিলা করতে হবে।
তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য এজেন্ডায় সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সাথে কাজ করার সংকল্প ব্যক্ত করেন এবং ইউএইচসি ফোরাম ও ব্র্যাককে অন্যান্য স্টেকহোল্ডার যেমন স্থানীয় সরকারের সাথে এই ধরনের আলোচনা করতে আহ্বান জানান।
ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম শহরে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর অভাব স্বীকার করেন এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গবেষণালব্ধ ফলাফল এবং দেশীয় কিট উদ্ভাবনের জন্য প্রশংসা করেন।
সমাপণী বক্তব্যে অধিবেশনের সভাপতি ড. হোসেন জিল্লুর রহমান জোর দিয়ে বলেন যে, কাগজে-কলমের প্রস্তুতিকে সমন্বিত বাস্তব পদক্ষেপে রূপান্তরিত করতে হবে।
তিনি জেলা, বিভাগীয় এবং শহর পর্যায়ে ডেঙ্গু হটস্পটগুলিতে বৃহত্তর স্টেকহোল্ডার সংলাপের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন এবং উদীয়মান সংকট প্রশমিত করতে এবং ভবিষ্যতের প্রাদুর্ভাব রোধ করার জন্য সমগ্র সমাজের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার আহ্বান জানান।
এআর-০৭/০৫/২৪
Share your comment :