ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট দাখিল
স্টাফ রিপোর্টার
গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের প্রায় ২৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে দুদক। একই সঙ্গে আদালতের কাছে মামলার আসামি পারভীন মাহমুদ ব্যতীত ড. ইউনূসসহ ১৩ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাওয়া হয়েছে। গতকাল দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান আদালতে চার্জশিট জমা দেন। দুদকের সহকারী পরিচালক (প্রসিকিউশন) মো. আমিনুল ইসলাম। পরে গুলশান আনোয়ার প্রধান মানবজমিনকে বলেন, ১৩ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাওয়া হয়েছে। আগামী ৩রা মার্চ মামলার তারিখ ধার্য রয়েছে। সেদিন এ বিষয়ে শুনানি হবে।
চার্জশিটভুক্ত ১৪ আসামি হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও পরিচালক এসএম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী, এডভোকেট মো. ইউসুফ আলী, এডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান, শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক কামরুল হাসান ও প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম। সূত্রে জানা যায়, দুদকের অনুমোদিত চার্জশিটে আসামি ছিলেন ১৩ জন। নতুন করে একজন আসামি যুক্ত হয়েছে। তিনি হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক কামরুল হাসান।
অভিযোগ পত্রে বলা হয়, গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলামসহ গ্রামীণ টেলিকমের বোর্ড সদস্যদের উপস্থিতিতে ২০২২ সালের ৯ই মে গ্রামীণ টেলিকমের ১০৮তম বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় একটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়।
গ্রামীণ টেলিকমের বোর্ডসভায় ব্যাংক হিসাব খোলার সিদ্ধান্তের একদিন আগেই ব্যাংক হিসাব খোলা হয় এবং সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্ট এপ্রিলে হলেও, এগ্রিমেন্টে ৮ই মে খোলা ব্যাংক হিসাব দেখানো হয়, যা বাস্তবে অসম্ভব। ওই বোর্ডসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক মিরপুর শাখা থেকে গ্রামীণ টেলিকমের ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় ১০ই মে ৪৩৭ কোটি ১ লাখ ১২ হাজার ৬২১ টাকা স্থানান্তর করা হয়। পরে ২২শে জুন গ্রামীণ টেলিকমের ১০৯তম বোর্ডসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অতিরিক্ত ১ কোটি ৬৩ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৯ টাকা দেয়ার অনুমোদন হয়। ঢাকা ব্যাংক গুলশান শাখার অ্যাকাউন্ট থেকে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লোকাল শাখার অ্যাকাউন্টে ১৭ই মে ১০ কোটি টাকা, ২৫শে মে ১৪ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার ৩৯১ টাকা এবং ৩০শে মে ১ কোটি ৬৩ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৯ টাকাসহ মোট ২৬ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু কর্মচারীদের লভ্যাংশ বিতরণের আগেই তাদের প্রাপ্য অর্থ তাদের না জানিয়েই সিবিএ নেতা কামরুজ্জামানের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মিরপুর শাখার অ্যাকাউন্টে ২৫শে মে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং ২রা জুন ৫০ লাখ টাকা স্থানান্তর করা হয়। গ্রামীণ টেলিকমের সিবিএ নেতা মাইনুল ইসলামের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক মিরপুর শাখার অ্যাকাউন্টে ২৬শে মে ২ কোটি টাকা এবং ২রা জুন ১ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়। গ্রামীণ টেলিকমের সিবিএ নেতা ফিরোজ মাহমুদ হাসানের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক মিরপুর শাখার অ্যাকাউন্টে ২৬শে মে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং ২রা জুন ৫০ লাখ টাকা স্থানান্তর করা হয়।
আইনজীবী মো. ইউসুফ আলীর কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলনের ধানমণ্ডি শাখার অ্যাকাউন্টে ৪ কোটি টাকা এবং সিটি ব্যাংক গুলশান শাখার অ্যাকাউন্টে ৫ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়। আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী ও জাফরুল হাসান শরীফের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের গুলশান নর্থ শাখায় যৌথ অ্যাকাউন্টে ২৯শে মে ৬ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়, যা তাদের প্রাপ্য ছিল না বলে অভিযোগে জানায় দুদক।
অভিযোগে আরও বলা হয়, মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ট্রেড ইউনিয়নের নেতা কামরুল ইসলামের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ২৯শে মে চেকের মাধ্যমে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ হিসেবে নেন। আত্মসাতের উদ্দেশ্যে স্থানান্তরিত বাকি ৭২ হাজার টাকা ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে ফ্রিজ করা আছে। এডভোকেট ফি হিসেবে প্রকৃতপক্ষে হস্তান্তরিত হয়েছে মাত্র ১ কোটি টাকা। বাকি ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বোর্ড সদস্যদের সহায়তায় গ্রামীণ টেলিকমের সিবিএ নেতা এবং আইনিজীবীসহ সংশ্লিষ্টরা অসৎ উদ্দেশ্যে জাল-জালিয়াতির আশ্রয়ে গ্রামীণ টেলিকম থেকে অর্থ স্থানান্তর করে আত্মসাৎ করেছেন।
গত রোববার শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করে স্থায়ী জামিন পান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরপরের দিনই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের দায়ের করা মামলায় ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা চার্জশিট অনুমোদন দেন।