দিল্লীর মসনদ নিয়ে যা হচ্ছে
ডেস্ক রিপোর্ট:
দল হিসেবে বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও তার নেতৃত্বে এনডিএ জোট ২৯৩ আসনে জয় পেয়েছে। জোটগতভাবে প্রাপ্ত আসনের ফলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন। এ জন্য তিনি ও তার মন্ত্রিপরিষদের পদত্যাগপত্র জমা দিতে বুধবার দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রেসিডেন্ট ধ্রুপদি মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এ সময় নতুন সরকার শপথ না নেয়া পর্যন্ত তাকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মুর্মু। সে অনুযায়ী, শনিবার তৃতীয়বারের মতো শপথ নেয়ার কথা জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। এটা সম্পন্ন হলে তিনি হবেন হ্যাটট্রিক প্রধানমন্ত্রী। কংগ্রেস নেতা জওহরলাল নেহরুর পর তিনি হতে যাচ্ছেন টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। খবর- এনডিটিভি।
মোদির নেতৃত্বে ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপি ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে আসন পায় ২৮২টি। ২০১৯ সালে পায় ৩০৩ আসন। কিন্তু এবার তা বহুলাংশে কমে ২৪০-এ নেমে আসে।
ফলে দল হিসেবে বিজেপি এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়। একক সংখ্যাগরিষ্ঠ হতে হলে একটি দলকে কমপক্ষে ২৭২ আসন পেতে হয়। সে হিসেবে বিজেপির আসন আছে ৩২টি কম। এখন তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করতে হলে তাকে বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক এলায়েন্সের (এনডিএ) সদস্যদের জয় করা ৫৩টি আসনের ওপর ভর করতে হবে। এ জন্য মোদির সরকার এককভাবে স্বনির্ভর থাকবে না। তাদেরকে অন্যের ওপর নির্ভর করতে হবে। কিন্তু মোদির নতুন সরকার গঠনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট ইন্ডিয়া। তারাও সরকার গঠনের চেষ্টায় তৎপর। মোদি শপথ নেয়ার ঘোষণা দিলেও তাদের প্রতিক্রিয়া কি তা জানা যায়নি। তবে এনডিএ বা ইন্ডিয়া- উভয় জোটের কাছে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিএস) এবং বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ)। এবারের নির্বাচনে তারা পেয়েছেন যথাক্রমে ১৬ ও ১২ আসন। এই দুই দলের মিলে মোট আসন দাঁড়ায় ২৮। এ জন্য তাদেরকে বাগিয়ে নিজেদের জোটে ভেড়ানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইন্ডিয়া জোট। ভারতীয় পত্রপত্রিকায় খবর বেরিয়েছে এ জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বর্ষীয়ান নেতা শারদ পাওয়ারকে। তাছাড়া তো যোগাযোগ অব্যাহত আছেই। যদি ইন্ডিয়া জোট এ দুটি দলকে তাদের দিকে ভেড়াতে পারে তাহলে মোদির এনডিএ জোটের মোট আসন ২৯৩ থেকে কমে দাঁড়াবে ২৬৫। তখন এনডিএ সরকার গঠন করতে পারবে না। তখন ইন্ডিয়া জোটের আসন দাঁড়াবে ২৬৮টি। ফলে তাদের ২৭২ পূরণ করতে বাকি থাকবে ৪টি আসন। তারা অন্য ছোট দলগুলোর কাছ থেকে সেই ৪টি আসন নিয়ে সরকার গঠনের স্বপ্ন দেখতেই পারে। ভারতে নির্বাচনের পর চন্দ্রবাবু নাইডু ও নীতিশ কুমারকে নিয়ে তাই এত আলোচনা। এ জন্য তাদের দু’জনকে বলা হচ্ছে কিংমেকার। তারা যেদিকে ঝুঁকবেন, সরকার গঠনের সুযোগ তাদের সামনে উন্মুক্ত হবে।
উত্তর প্রদেশের বারানসি থেকে লোকসভার নির্বাচনে বিজয়ী হন মোদি। তিনি কংগ্রেসের প্রার্থী অজয় রাই’কে প্রায় দেড় লাখ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে তৃতীয়বার এমপি নির্বাচিত হন। মঙ্গলবার রাতেই তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, তৃতীয় দফায় সরকার গঠন করবে এনডিএ। নির্বাচনের ফলকে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ গণতন্ত্রের বিজয় বলে আখ্যায়িত করেছেন। বুধবার তিনি বিদায়ী মন্ত্রিপরিষদের শেষ বৈঠক আহ্বান করে তাতে সভাপতিত্ব করেন।
বিজেপি এবার লোকসভা নির্বাচনে উচ্চাকাঙ্খী টার্গেট স্থাপন করেছিল। তারা ধরে নিয়েছিল কমপক্ষে ৩৭০ আসনে তারা জিতবে। ফলে তাদের আসন হবে ৪০০+এনডিএ অংশীদাররা। কিন্তু তাদের পিছন থেকে পেরেক মেরে দিয়েছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিরোধী ইন্ডিয়া জোট। এই জোট আগের চেয়ে অনেক ভাল ফল করেছে। তারা মোট ২৩২ আসনে জয় পেয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলোতে বিজেপির অগ্রযাত্রাকে তারা থামিয়ে দিয়েছে। আমেথিতে বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ এমপি ও সাবেক মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে পরাজিত করেছেন কংগ্রেসের কিশোরীলাল শর্মা। অথচ আগের নির্বাচনে এই আসনে স্মৃতি ইরানির কাছে পরাজিত হয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। কংগ্রেস এবার বিজেপির গতি রুখে দিলেও তারা একক দল হিসেবে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে। বিজেপি পেয়েছে ২৪০ আসন। তারা ওড়িশায় ২১ আসনের মধ্যে ২০টিতে জয় পেয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশে ২৫ আসনের মধ্যে ২১টিতে, মধ্যপ্রদেশে ২৯ আসনের মধ্যে ২৯টিতেই এবং বিহারে ৪০ আসনের মধ্যে ৩০টিতে হয় পেয়েছে। তবে দক্ষিণের রাজ্য কেরালায় প্রথমবার লোকসভার আসন পেয়েছে বিজেপি। এর মধ্য দিয়ে তারা ওই রাজ্যে তাদের একাউন্ট খুলল। বিজেপি ঐতিহাসিকভাবে দক্ষিণে লড়াই চালিয়েছে। দলটি তামিলনাড়ুতে একটিও আসন পায়নি। সেখানে ক্ষমতাসীন ডিএমকে এবং ইন্ডিয়া জোট ৩৯ আসনের সবটাতেই জিতেছে।
Share your comment :