নিউইয়র্কে বাংলাদেশি খুনের ঘটনায় ন্যায়বিচার নিয়ে সংশয়ে পরিবার
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ উইন রোজারিও নিহত হওয়ার ঘটনায় ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়ে উৎকণ্ঠায় আছে পরিবার। তাঁদের অভিযোগ, এখনো পুলিশ বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।
গত ২৭ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কুইন্স এলাকায় পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ উইন রোজারিও নিহত হন। কুইন্সে নিজেদের বাসায় এ ঘটনা ঘটে।
ছেলে হত্যার বিচারের দাবিতে গত বুধবার নিউইয়র্ক শহরের ম্যানহাটানে সিটি হলের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন উইন রোজারিওর বাবা ফ্রান্সিস রোজারিও। সেখানে তিনি বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তা সালভাতর অ্যালঙ্গি এবং ম্যাথিউ সিয়ানফ্রোকো আমার মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলেকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করেছে। আমি এর ন্যায়বিচার চাই। শিগগিরই তাঁদের বরখাস্ত করে সঠিক বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
তবে এখন পর্যন্ত ন্যায়বিচারের কোনো আশা দেখছে না পরিবার।
ফ্রান্সিস রোজারিও প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংবাদ সম্মেলনের দুই দিন পরও এখন পর্যন্ত প্রশাসন বা পুলিশের পক্ষ থেকে কেউ আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। ছেলে হত্যার ঘটনায় ন্যায়বিচার পাব কি না, কোনো আশ্বাস পাচ্ছি না।’
উইন রোজারিও হত্যা মামলা তদন্ত করছে অফিস অব স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন (ওএসআই)। ঘটনার দিন উইন পরিবারের বাড়িতে অভিযানে অংশ নেওয়া দুই পুলিশের শরীরে থাকা ক্যামেরায় যে ভিডিও ধারণ হয়েছে, তা গত ৩ মে জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়েছে। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিসিয়া জেমস তা প্রকাশ করেন। অভিযানে অংশ নেওয়া দুই পুলিশ সদস্যের পরিচয়ও প্রকাশ করা হয়।৩ মিনিট ৪ সেকেন্ড ও ৩ মিনিট ৫ সেকেন্ডের ওই দুই ভিডিওতে দেখা গেছে, মায়ের বুক থেকে কেড়ে নিয়ে, মা এবং ছোট ভাইয়ের অনুরোধ ও অনুনয় উপেক্ষা করে ১৯ বছরের উইন রোজারিওকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে দুই পুলিশ কর্মকর্তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন উইনের মা নোটান ইভা কস্টা। তিনি বলেন, ‘তাঁরা দুই মিনিটেরও কম সময়ে আমার বুক থেকে ছেলেকে কেড়ে নিয়ে আমার চোখের সামনে গুলি করে হত্যা করেছেন। আমি এর বিচার চাই। দুই পুলিশকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে হবে। দ্রুত সময়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’
৮ মে সেই সংবাদ সম্মেলনে কান্নারত মাকে জড়িয়ে ধরেন উইন রোজারিওর ভাই উৎস রোজারিও। তিনি বলেন, ‘আমার ভাইকে হত্যা করার পর নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট আমি এবং আমার মায়ের সঙ্গে এমন আচরণ করেছে, যেন আমরা অপরাধী। আমার ভাইকে মেরে ফেলার পর তাঁরা আমাদের থানায় নিয়ে যান। আমার পরনে হাফপ্যান্ট ছিল, কাপড় পরতে দেননি। ফোনটা নেওয়ার পর্যন্ত সময় দেননি।’
উৎস আরও বলেন, ‘তাঁরা আমাদের সঙ্গে এমন আচরণ করেছিলেন যেন আমার ভাইকে চোখের সামনে খুন হতে দেখে আমরাই ভুল করেছি। তাঁরা আমার মাকে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন। ৪৮ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আমাদের ঘরে ফিরে যেতে দেওয়া হয়নি। এমনকি তাঁরা আমার বাবা-মায়ের ওষুধও নিতে দেননি।’ সংবাদ সম্মেলনে উইন রোজারিওর বাবা ফ্রান্সিস রোজারিও বলেন, ‘উইনকে হত্যার পর পুলিশ আমার স্ত্রী ও ছেলেকে থানায় নিয়ে গিয়ে আইনজীবী ছাড়াই তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। আমরা ন্যায়বিচার পাব কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, কীভাবে আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে।
তারপরও আমরা কোনো বিচার পাচ্ছি না। আমার স্ত্রী বা ছেলে অসুস্থ বোধ করলে পুলিশের সহযোগিতার জন্য ৯১১ নম্বরে কল দিতে ভয় পাই। পুলিশ এসে যদি আবার কোনো কিছু করে বসে!’
উইন পরিবারের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন নিউইয়র্ক সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের ডোনা লিবারম্যান, নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে নির্বাচিত প্রথম বাংলাদেশি কাউন্সিল সদস্য শাহানা হানিফ, কাউন্সিলর ক্রিস্টাল হাডসন, স্যান্ডি নার্স, অ্যালেক্সা অ্যাভিলেস এবং পিয়েরিনা সানচেজ।
এআর-১১/০৫/২৪
Share your comment :