পুলিশে স্থবিরতার নেপথ্যে যেসব কারণ

পুলিশে স্থবিরতার নেপথ্যে যেসব কারণ


খোরশেদ আলমগীর, ঢাকা

৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর মারাত্মক ইমেজ সংকটে পড়া পুলিশের কর্মকান্ড ও শৃংখলা ফেরাতে আইজি, অতিরিক্ত আইজি, ডিএমপি কমিশনার ও পুলিশ সুপারসহ অন্যান্য পদে নতুন করে বদলি এবং পদায়ন শুরু করে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় সংস্কারের কাজ চলমান থাকলেও নানান কারণে আস্থার সংকট কাটিয়ে এখনো পুরোদমে সক্রিয় হতে পারেনি বাহিনীটি। মূলত নিজেদের আভ্যন্তরীন দাবি-দাওয়া আদায় ও পদ পদবির বিষয়গুলো সূরাহা না হওয়ার কারণেই স্থবিরতা কাটিয়ে উঠে মাঠের কাজে মনোযোগী হয়ে ফিরতে পারছে না বাহিনীর সদস্যরা।


জানা গেছে, বিপ্লব পরবর্তী চলমান সংস্কার কার্যক্রমের মধ্যেই প্রত্যেক জেলার পুলিশ লাইনের কনস্টেবলরা বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করে। বিশেষ করে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে সুবিধাভোগী অতিরিক্ত আইজি, ডিআইজি, এসপি ও সমমানের কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে সেসময়ে পদবঞ্চিত ও হয়রানির শিকার হওয়াদের বিভিন্ন বিভাগে ডিআইজি ও পুলিশ সুপার হিসেবে পদায়নের কাজ এখনো চলছে। ফলে বিভিন্ন জেলায় নতুন পুলিশ সুপার হিসেবে পদায়নের পর আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটাই উন্নতির দিকে গেলেও বাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বাহিনীর অভ্যন্তরে গুটি কয়েক কর্মকর্তা এখনো বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের চাপে রাখতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে।


সূত্র জানায়, বিসিএস ক্যাডার পুলিশ কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের কমিটি গঠন নিয়ে দুই পক্ষে তুমুল বাগ্বিতন্ডা ও হট্টগোলের রেশ ধরেই গত সপ্তাহে (২৯.০৯.২৪) বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়। অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান সভাপতি পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান অতিরিক্ত আইজি মনিরুল ইসলামকে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর এবং সাধারণ সম্পাদক নারায়ণগঞ্জের সাবেক পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল আত্মগোপনে যাওয়ার পর নতুন কমিটি গঠনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সেদিন রাতে আলোচনায় বসে শীর্ষ কর্মকর্তারা। শুরুতেই কর্মকর্তাদের একটি অংশ সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের অনুরোধ জানান।

এসোসিয়েশনের সভাপতি পদে অতিরিক্ত আইজি পদের কর্মকর্তার বিধান থাকায় ১২তম ব্যাচের ক্যাডার ও র‌্যাবের মহাপরিচালক শহিদুল ইসলামের নাম প্রস্তাব করলে ১৭ তম ব্যাচের কর্মকর্তারা তা সমর্থন করেন। তবে ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাগণ এতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে।

১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা বলছেন দীর্ঘদিন পদোন্নতি না হওয়ায় তারা এখনো ডিআইজি হিসেবে রয়ে গেছেন। নিয়মিত পদোন্নতি হলে এতোদিনে তারাও সবাই অতিরিক্ত আইজি হয়ে যেতেন। এখন নতুন সরকার যেহেতু দ্রুত সংস্কার কাজ করছে সেহেতেু তাঁরাও যেকোনো দিন অতিরিক্ত আইজি হয়ে যাবেন। এজন্যই এসোসিয়েশনের সভাপতি পদে তাদের ব্যাচের থেকে হলে কোনো সমস্যা নেই।

মূলত ১৫তম ব্যাচের ডিআইজি নাজমুল ইসলাম খান এসোসিয়েশনের সভাপতি হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করার কারণেই তৈরি হয় বিতর্ক। এ নিয়ে ১২ ও ১৫ তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে হট্টগোল শুরু হয়। তখন নিজেদের দাবি তোলেন ১৭ তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। তাঁদের দাবি, ডিআইজি পদমর্যাদার কাউকে সভাপতি যদি করা হয় তাহলে সেটা ১৭ তম ব্যাচ থেকে করা হোক।

কারণ দীর্ঘদিন পদোন্নতি না হওয়ায় ১৭তম ব্যচের কর্মকর্তারাও ডিআইজি হিসেবে অনেকেই রয়েছেন। দ্রুত পদোন্নতি হলে তারাও এডিশনাল আইজি হয়ে যাবেন। তাই ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা যেহেতু এসোসিয়েশনের সভাপতি হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন সেহেতু ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারাও এ পদে নির্বাচন চান। তবে ৩০ বছরের ইতিহাসে সরাসরি নির্বাচনে কখনো কমিটি গঠন করা হয়নি।


পুলিশ সদর দপ্তরের মিলনায়তনে সৃষ্ট বিভাজন এক পর্যায়ে উভয় পক্ষই একে অপরের দিকে তেড়ে যায়। উত্তেজনাকর পরিস্থিতির একপর্যায়ে সব পক্ষ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলামের কাছে যান। কিন্তু আইজিপিও কোনো সমাধান দিতে না পারায় সভা ও কমিটি গঠন সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। পরে আবার সভা ডাকা হবে বলে জানানো হয়।


সভায় অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে নিজ নিজ ব্যাচ থেকে দাবি তোলেন ২১, ২২ ও ২৪ তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। ফলে এ পদেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সাধারণত এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তারা সাধারণ সম্পাদক হন।


জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৫ তম ব্যাচের এক ডিআইজি বাংলাকন্ঠকে বলেন, ‘দুটি ব্যাচ দুই সভাপতি প্রার্থীকে সমর্থন করে। তখন আমাদের সহকর্মীদের মধ্যে চিৎকার ও বাগ্বিতন্ডা হয়। এই অবস্থায় কমিটি গঠন প্রক্রিয়া অসমাপ্ত রয়েছে।’


একইভাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৭ তম ব্যাচের একজন কর্মকর্তা বাংলাকন্ঠকে বলেন, ‘একজন ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে সভাপতি হিসেবে চেয়েছেন ১৫ তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। যদি নিয়মবহির্ভূতভাবে ডিআইজি পদের কর্মকর্তাই সভাপতি হতে পারেন, তাহলে আমাদের ব্যাচের কর্মকর্তাও তো তা হতে পারেন। কিন্তু এটা তো পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নিয়ম নয়।’

Share your comment :