“পেটে খিদা না থাকলে এই গরমে বাইরে আসতাম না”

“পেটে খিদা না থাকলে এই গরমে বাইরে আসতাম না”

রওশন আরা রত্না

দেশের বিভিন্ন বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। এর তীব্রতা আরও বাড়তে পারে জানিয়ে শুক্রবার থেকে সারা দেশে ৭২ ঘণ্টার জন্য তাপপ্রবাহ সতর্কবার্তা বা হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অফিস। শনিবার আগামী ৭ দিন সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। রোববার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.৩, রাজধানীতে তাপমাত্রা ৪০ এর ঘর ছুঁয়েছে ফলে হিট অ্যালার্ট জারি করতে হয়েছে।

খুব বেশি প্রয়োজন না হলে বাসা থেকে বের হচ্ছেন না রাজধানীবাসী। চাকরিজীবীরাও অফিসের ভেতরে বেশি সময় অবস্থান করছেন।

কিন্তু যাদের ক্ষুধা মেটাতে রোদ বৃষ্টি তুচ্ছ,তারা জানেই না হিট অ্যালার্ট কী। তাদের কাছে ক্ষুধা নিবারনই জীবনের আসল সজ্ঞা। পথেঘাটে ঘুরে বেড়ানো সীমিত আয়ের মানুষ। কাঠফাটা রোদ মাথায় নিয়েই সড়কে নেমে পড়েছেন জীবিকার তাগিদে। গরমে প্রাণ যায় যায় অবস্থায়ও চিন্তা দিনের বাজারের টাকা রোজগার করে ঘরে ফেরার। এই খেটে খাওয়া মানুষের কথা “পেটে খিদা না থাকলে এই গরমে বাইরে আসতাম না” এভাবেই কষ্টের কথা বললেন রাজধানীর একজন ফুটপাথের হকার।

রবিবার দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তাপপ্রবাহে অন্যান্য দিনের তুলনায় তাদের কাজে ক্লান্তি বেড়েছে। এছাড়া গরমে সড়কে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি কম থাকায় রোদ উপেক্ষা করে কাজে নেমেও প্রত্যাশা অনুযায়ী আয় করতে পারছেন না। এক জায়গায় বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। সড়কের পাশে ছোট কোনও গাছ বা ভবনের ছায়া খুঁজতে হচ্ছে।
মিরপুর ১০ নম্বরে ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করেন খলিল, জানালেন কষ্টের কথা, তিনি বলেন, ‘বারবার পানি দিয়ে সবজিগুলাকে তাজা রাখতে হচ্ছে। পানি দিলেও সঙ্গে সঙ্গে শুকায়া যাচ্ছে। যে রোদ, চোখ মেলা যায় না। এলাকা এলাকা ঘুরেও কেনার লোক পাওয়া যাচ্ছে না। অন্য সময় এক জায়গায় দাঁড়ায়া থাকলে আসা-যাওয়া করা মানুষের কাছেই বেশিরভাগ সবজি বিক্রি হয়ে যায়। এখন কেউ বাসা থেকে নিচে নামে না।’

কামরাঙ্গীরচর এলাকার রিকশাচালক আনোয়ার বলেন, ‘লোক কম, রাস্তায় রিকশাও কম। আর কিছু টাকা পাইলে চলে যাবো। গরমে টেকা যায় না।’ গরমে ক্লান্তি দূর করতে রিকশার সিটের নিচে পানির বোতল রেখে দিচ্ছেন অধিকাংশ চালক। যাত্রীর অপেক্ষায় থাকা মিলন বলেন, ‘একটা যাত্রী নামায়া দেয়ার পর আধা লিটার পানি লাগে শরীরটা জুড়াতে। একটু আগে ২০ টাকা দিয়ে লেবুর শরবত খেলাম। কোনও কিছুতেই গরম কমে না। এক জায়গায় দাঁড়ায়া থাকলেই ঘামাই।’

ফুটপাথে কাঁচা আম ও আতা ফল বিক্রেতা সাজু বলেন, ‘সকাল ৯টায় কাওরান বাজার থেকে আম-আতা নিয়ে বের হইছি। বেলা ১টা বাজে, মাত্র ৪০০ টাকার মতো বিক্রি করতে পারছি। এতক্ষণ রাস্তার মোড়ে ছিলাম, লোক পাই না দেখে এলাকার ভেতরে যাচ্ছি। যদি কিছু বিক্রি হয়।’ তীব্র তাপপ্রবাহে শ্রমজীবী মানুষের পাশাপাশি নানা কাজে বাহিরে বের হওয়া মানুষেরাও হাঁসফাঁস করছেন। সবাই খুঁজছেন একটু ছায়া। তাই যে যেখানে ছায়া পাচ্ছেন সেখানেই আশ্রয় নিচ্ছেন।

হাজারীবাগের বাসিন্দা জামাল শেখ জানান, তিনি গাউছিয়া মার্কেটে ফুটপাথে খেলনা বিক্রি করেন, গরমের কারনে বেচাকেনা কমে গেছে, কাস্টমার কম আসে তাছাড়া বেশিক্ষণ দাড়ায়া থাকতে পারিনা, বারবার পানি খাওয়া লাগে। এই এলাকায় এখন ঠিকমত পানিও পাওয়া যায় না। এই ভাবে গরম পড়লে সংসার চালানো কঠিন হয়ে যাবে। পেটে খিদা না থাকলে এই গরমে বাইরে আসতাম না।

এছাড়া গরমকে কেন্দ্র করে ডাব ও ভ্রাম্যমাণ শরবতের ভ্যানে বিক্রি বেড়েছে। প্রায় পথচারী থেমে পান করছেন শরবত। কেউ কেউ বাসা বাড়ির জন্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ডাব। তবে ডাবের দাম সবার নাগালের মধ্যে না থাকায় খেটে খাওয়া মানুষের একমাত্র ভরসা ফুটপাতের চায়ের দোকানে একটু জিরিয়ে নেয়া আর এক গ্লাস পানি ও এক কাপ চা। এছড়া অনেক রিকসাচালক নিজেই বোতলে পানি রাখছেন। কেননা মিনারেল পানি তাদের নাগালের বাইরে।

এআর-২১/০৪/২৪

Share your comment :