ফ্যাসিবাদ আবার ঘুরে দাঁড়ানোর পাঁয়তারা করছে: মামুনুল হক

ফ্যাসিবাদ আবার ঘুরে দাঁড়ানোর পাঁয়তারা করছে: মামুনুল হক

বাংলাকণ্ঠ রিপোর্ট:
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক বলেছেন, রক্ত দিয়ে যে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, আবার রক্ত দিয়ে সেই বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। খুনিদের বিচার করতে হবে।
তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করার জন্য যদি আরেকটি সংগ্রাম করার প্রয়োজন হয়, বাংলার মানুষ সে সংগ্রাম করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) বরিশাল নগরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যার বিচারের দাবি এবং নৈরাজ্যবাদ প্রতিরোধে এই গণসমাবেশের আয়োজন করা হয়।
মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক বলেন, বীর শহীদদের আত্মত্যাগ, কোরবানি আর জীবনদানের মাধ্যমে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে। এসব শহীদদের স্মরণ করে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। পাশাপাশি স্পষ্ট ভাষায় খুনি হত্যাকারী, বিদায়ী পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে খুনি মন্ত্রিসভার সদস্য, তাদের দলীয় সাঙ্গপাঙ্গ, হেলমেট লীগ, হাতুড়ি লীগের সদস্য এবং প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা রাষ্ট্রীয় বাহিনীর পরিবর্তে যারা আওয়ামী দলীয় বাহিনীতে নিজেদের পরিণত করেছে সেসব অত্যাচারী খুনিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার জন্য জোর দাবি জানাই।
এসময় তিনি ছাত্র-জনতা এবং দেশের আলেম সমাজসহ সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, মনে রাখতে হবে বিজয় আর স্বাধীনতা অর্জন করা যত কঠিন, তার থেকেও বড় কঠিন ও বড় দায়িত্ব এই বিজয় এবং স্বাধীনতাকে রক্ষা করা। আজ বাংলার আকাশে শকুনের আনাগোনা দেখা যায়। বাংলাদেশের বিজয়কে ছিনতাই করে ছাত্র-জনতার রক্ত দিয়ে গড়া এই মহান বিপ্লবকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য আবার নতুন ষড়যন্ত্রের দানা বাঁধতে আমরা দেখছি। অন্য আরেকটি দেশের আশ্রয়ে, প্রশ্রয়ে এবং তাদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদদে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ব্যর্থ করার জন্য আবার ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু বাংলার ২০ কোটি জনতাকে সেই ষড়যন্ত্রকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে।
তিনি বলেন, যে ফ্যাসিবাদকে এ দেশের ছাত্র-জনতা বিতাড়িত করেছে, সেই ফ্যাসিবাদ আবার নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর পাঁয়তারা করছে। প্রশাসনের মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে থাকা আওয়ামী দুর্বৃত্তদের দোসররা আবার নতুন করে ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করছে।
খেলাফত মজলিসের এ মহাসচিব বলেন, শেখ হাসিনার বিভাজনের রাজনীতির ষড়যন্ত্রকে প্রত্যাখ্যান এবং ব্যর্থ করে দিয়ে বাংলাদেশের আপামর রাজনৈতিক দল এবং ছাত্র-জনতা অভূতপূর্ব যে ঐক্য গড়ে তুলেছিল সেটিই ছিল আগস্ট বিপ্লবের সফলতার মূল সূত্র, মূল রহস্য। সেই ঐক্যই ছিল শেখ হাসিনা ও তার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বাঙালি জনতার মূল হাতিয়ার। সেই ঐক্য ধরে রাখতে হবে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সেদিন চেষ্টা করেছিল আরও খুন করতে, হত্যা করতে। সে আর্মি, বিজিপি, র‌্যাব, পুলিশকে অর্ডার দিয়েছিল, নির্দেশ দিয়েছিল—চালাও গুলি যত হত্যা করতে হয় হত্যা কর। রক্তের সাগর প্রবাহিত করেও ক্ষমতার মসনদে সে থেকে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। ধন্যবাদ জানাই দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে, তারা পরিষ্কার করে দিয়েছিল, আমরা এ দেশের মানুষের বিরুদ্ধে একটি বুলেটও ছুড়তে পারবো না। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী দেশের জনতার পাশে এসে দাঁড়ানোর কারণে শেখ হাসিনার স্বপ্নটা ধুলোয় মিশে গিয়েছিল। পালিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের এক ইঞ্চি মাটি ব্যবহারের সুযোগ পায়নি, আকাশপথে উড়াল দিয়ে সে তার প্রভুর ঘরে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, প্রমাণ হয়েছে জনতার শক্তির সামনে স্বৈরাচারী শক্তি যত বড়ই হোক না কেন কোনোদিন চিরস্থায়ী হয়ে টিকে থাকতে পারে না, শেখ হাসিনাও পারেনি।
এসময় তিনি মোদী সরকারের সমালোচনা করে বলেন, শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছ, সে খুন-হত্যা মামলার আসামি। হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষের হত্যাকাণ্ডের একজন আসামিকে প্রশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তোমরা অবস্থান গ্রহণ করেছ। বাংলাদেশের আদালত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। সেই আসামিকে বাংলাদেশে হস্তান্তর কর।
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে বলতে চাই—খুনি শেখ হাসিনাসহ তার দোসরদের বিচারের ব্যবস্থা করুন। যদি সেটা করতে না পারেন ইতিহাস আপনাদেরও ক্ষমা করবে না। আপনাদের বড় দায়িত্ব হলো সেই খুন এবং হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচার নিশ্চিত করা। আর আপনাদের আরেকটি বড় দায়িত্ব হলো বাংলাদেশের স্থিতিশীলতাকে রক্ষা করা। এজন্য ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা বলতে চাই, অতিসত্বর সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ করে বাংলাদেশবিরোধী প্রতিটি ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করার ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ নিন।
এএ/

Share your comment :