বন কর্মকর্তা হত্যা : বিচার দাবিতে মানববন্ধন
নিজস্ব প্রতিবেদক
কক্সবাজারের উখিয়া রেঞ্জের দোছড়ি বন বিটের কর্মকর্তা সাজাদুজ্জামানের নির্মম অপহত্যায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওয়ায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে ২৩টি পরিবেশবাদী সংগঠন।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ৫ দফা দাবিতে বন ভবনের সামনে এক নাগরিক সমাবেশে এই দাবি জানানো হয়। এসময় প্রয়াত বন কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামানের পরিবারের সদস্যরাও বিচারের দাবি জানান।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা), বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস), পরিবেশ উদ্যোগ, বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট, মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্র, আরণ্যক ফাউন্ডেশন, নাগরিক উদ্যোগ, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট, গ্রীন ভয়েস, বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ফরেস্টার অ্যাসোসিয়েশন, বারসিক, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্ট, সিজিইডি, পিপল ফর এনিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন, ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস, আরডিআরএস, পরিবেশ ও জলবায়ু আন্দোলন এবং জন উদ্যোগসহ ২৩টি পরিবেশবাদী সামাজিক ও নাগরিক সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে এ মানব্ন্ধন ও নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
নাগরিক সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশজুড়ে একের পর এক বন, পাহাড় ধ্বংস ও হাতিসহ নানা বন্যপ্রাণী হত্যা ও বন উজাড় রোধে যখন কিছু সৎ নিষ্ঠাবান মানুষ কাজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করে তখনি তাদের নানা নির্যাতন ও হত্যার শিকার হতে হয়। কতিপয় দুর্বৃত্ত, ভূমি দস্যু, পাহাড় ও বনখেকোদের নির্মম আক্রমণের শিকার হন এ বনকর্মকর্তারা। এর আগেও ইউসুফ উদ্দীন নামে মহেশখালী বন রেঞ্জ কর্মকর্তা পাহাড় ও বনখেকোর হাতে অপহত্যার শিকার হয়েছিল।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা)’র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, দেশের সবচেয়ে সুন্দরও জেলাটি আজ বন ও পাহাড় খেকোদের দ্বারা ধ্বংসপ্রায়। জামিনে মুক্ত ইউসুফের হত্যাকারীদের পুণরায় গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো এবং সাজ্জাদুজ্জামানের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন। একইসাথে উভয়ের পরিবারের ভরণপোষনের সব দায়িত্ব সরকারকে বহন করার জোর দাবি করেন।
এসময় নিহত সাজ্জাদুজ্জামানের বড় ভাই কামরুজ্জামান কাজল বলেন, আমার ভাইকে আর ফিরে পাবো না কিন্তু আর কোন ভাইকে যেন এভাবে মরতে না হয় তার নিশ্চয়তা চাই। হত্যাকরীদের ফাঁসির দাবি করেন। সাজ্জাদুজ্জামানের স্ত্রীর চাকরি প্রদান, সন্তানের ভবিষ্যত নিশ্চিত করা এবং মামলাটি র্যাবের নিকট হস্তান্তরের দাবি জানান তিনি।
ক্যাপসের গবেষক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, সাজ্জাদুজ্জামানকে নির্মমভাবে হত্যার পর উল্লাস করা হয়েছে যা কোন সভ্যসমাজে মেনে নেওয়া যায়না। তিনি হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান।
সংহতি বক্তব্যে প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমির হোসাইন চৌধুরী বলেন, আমার কর্মকর্তা তার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয়েছে। এর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করছি। আমরা মামলা করেছি। ১জন আসামি গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
আলমগীর কবির বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অর্থে এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান।
এসময় নাগরিক সমাবেশে বিভিন্ন পরিবেশবাদী, সামাজিক ও নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। জানা গেছে, গত ৩১ মার্চ প্রয়াত সাজাদুজ্জামান ভোররাত সাড়ে তিনটার দিকে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জ এর আওতাভুক্ত রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা এলাকায় বনের জমি রক্ষা করতে গিয়ে ভূমি দস্যুদের নির্মমতার শিকার হন। উখিয়া রেঞ্জ এর হরিণমারা অংশ থেকে পাহাড় কেটে বালু সরবরাহ করার সময় একটি মিনি ট্রাক (ডাম্পার) সাজাদুজ্জামানকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি। এ ঘটনায় আহত হন আরও একজন বন কর্মকর্তা।
Share your comment :