বেইলি রোড অগ্নিকাণ্ডের বিচার হলে ভবিষ্যতে প্রাণহানি ঘটবে না : তাপস
নিজস্ব প্রতিবেদক :
আইনের আওতায় সুনির্দিষ্টভাবে ব্যক্তি ও সংস্থার দায়ভার নির্ধারণ করে বেইলি রোড অগ্নিকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন করা হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রাণহানি আর ঘটবে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
বুধবার (৬ মার্চ) সকালে সাদেক হোসেন খোকা সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্রের (কমিউনিটি সেন্টার) ৪র্থ তলায় স্থাপিত অত্যাধুনিক ‘সাউথ পয়েন্ট নগর ব্যায়ামাগার’ উদ্বোধন শেষে গণমাধ্যমের সাথে প্রশ্নোত্তর পর্বে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এ মন্তব্য করেন।
ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “আমরা দেখি, কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে, এক সংস্থা আরেক সংস্থার বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে দায় চাপানোর চেষ্টা করে। তদন্ত হয়, দায়সারা তদন্ত। আইনের আওতায় সুনির্দিষ্ট দায়ভার নির্ধারণের তদন্ত কিন্তু আমরা সচরাচর দেখি না। সুতরাং, আমি সকলকে অনুরোধ করব, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে এই দুর্ঘটনার দায়ভার নিশ্চিত করার এবং আদালতের মাধ্যমে এর বিচার সম্পন্ন করার। একটি নজির যদি আমরা সৃষ্টি করতে পারি, তাহলেই সকলের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য হবে, প্রয়োগ হবে। এতে করে কারো মুখের কথায় ঢালাওভাবে অন্যের ওপর দায়ভার চাপানোর অপচেষ্টা যেমনি রোধ হবে তেমনি এ ধরনের দুর্যোগ, দুর্ঘটনা থেকে আমরা পরিত্রাণ পাবো এবং এ ধরনের প্রাণহানি আর ঘটবে না।”
সারাবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও আইন অনুযায়ী দায়ভার নির্ণয় এবং প্রয়োগ করা আবশ্যক জানিয়ে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “সারাবিশ্বেই আইন দ্বারা এগুলো নির্ধারিত রয়েছে। আইন বলে, যে যে কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে সে সে কারণের জন্য যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত তাদেরকেই আইনের আওতায় আনা হবে। এটাকে আইনের ভাষায় বলে ভাইকেরিয়াস লায়াবিলিটি (Vicarious Liability)। সারাবিশ্বেই ভাইকেরিয়াস লায়াবিলিটি ও ডিউটি অব কেয়ার এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট দায়ভার আইনে দেওয়া আছে। যেহেতু বাংলাদেশ কমনওয়েলভুক্ত দেশ, সুতরাং, স্বাভাবিকভাবেই ব্রিটিশ উপনিবেশের এই আইন এখানে প্রয়োগযোগ্য।”
আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী দায়ভার নির্ধারণের ধারাবাহিক প্রক্রিয়া কিভাবে নির্দিষ্ট করা আছে তা উল্লেখ করে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “আমরা যদি দেখি, তাহলে প্রতীয়মান হয় — সেখানকার সিঁড়িটা পর্যাপ্ত প্রশস্ত ছিলো না। একটি ৯/১০ তলা ভবন নির্মাণে কতগুলো সিঁড়ি থাকবে এবং সিঁড়ির প্রশস্ততা কত হবে তা ইমারত বিধিমালায় সুনির্দিষ্ট করা আছে। এখন প্রশ্ন হলো, এই বিধিমালা প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রথম দায়ভার কার? প্রথম দায়ভার হলো একজন স্থপতির। কারণ, সারাবিশ্বে আইনের আওতায় বলা আছে — যিনি পেশার সেবা দেবেন তাকে যথাযথভাবে আইন, নীতিমালাগুলো পরিপালন করতে হবে। তাহলে বিধিমালা অনুযায়ী সিঁড়িসহ কী কী সুযোগ-সুবিধা থাকতে হবে, কতটুকু জায়গা ছাড়তে হবে, জরুরি প্রয়োজনে কিভাবে বহি:র্গমন হবে ইত্যাদি বিষয়গুলো নকশা প্রণয়নকারী স্থপতি নির্ধারণ করবেন। দ্বিতীয় দায়ভার হলো সে সংস্থার, যে সংস্থা এই নকশাটা অনুমোদন করেছে। নকশা অনুমোদনকালে আইন, বিধিমালা পরিপালন করা হয়েছে নাকি? যদি সেখানে কোনো ব্যত্যয় বা অবহেলা বা কোনো গাফিলতি থাকে, তাহলে সেই কর্তৃপক্ষকে দায়ভার নিতে হবে। তৃতীয়ত, একটি ভবন নির্মাণে অনেক কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র বা অনুমতি নিতে হয়। এ ধরনের ছাড়পত্র প্রদানে যদি কোনো সংস্থার অবহেলা বা গাফিলতি থাকে, তাহলে আইন অনুযায়ী তাদের দায়ভার নির্ণয় করা হবে। এছাড়াও আইনের ভাষায় অকুপায়ার্স লায়াবিলিটি’র আলোকে সংশ্লিষ্ট ভবন মালিক, ভবন ব্যবহারকারী ব্যক্তি বা রেস্তোরাঁ মালিকদেরও দায়ভার রয়েছে। সুতরাং, আইনের আওতায় দায়ভার নিশ্চিত করতে হবে এবং এ সকল বিষয়ই তদন্তে আসা উচিত।”
সাউথ পয়েন্ট নগর ব্যায়ামাগারে আধুনিক সকল সুবিধা সন্নিবেশ করা হয়েছে জানিয়ে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “যৌথ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে এই ব্যামাগার পরিচালিত হবে, যাতে করে স্বল্পমূল্যে নগরবাসী এখানে শরীরচর্চা করতে পারে। এখানে স্টিম বাথ, সওনা বাথসহ আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা ও যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা রয়েছে। ১০ হাজার বর্গফুট জায়গার মধ্যে পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য আলাদাভাবে ব্যায়াম করার সুযোগও এখানে রয়েছে।”
অনুষ্ঠানে ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, “এক সময় সুঠাম দেহের অধিকারী বডি বিল্ডারদের প্রাণকেন্দ্র ছিলো ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পুরান ঢাকা।
ঢাকাকে সেই পুরনো ধারায় সারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন উদ্যোগ নিয়েছে। কারণ, যারা শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত হয় তাদেরকে মাদক কখনো আসক্ত করতে পারে না। আর মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়া প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার অঙ্গীকার। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে। তাই মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে এই ব্যায়ামাগার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।”
অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফি, ৪১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং করপোরেশনের সমাজকল্যাণ ও কমিউনিটি সেন্টার বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি সারোয়ার হাসান আলো, ৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. সুলতান মিয়া, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর মিনু রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, সচিব আকরামুজ্জামানসহ করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পরে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস শ্যামপুর বরইতলা থেকে আলমবাগ পর্যন্ত জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান কার্যক্রম পরিদর্শন এবং ৪১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সারোয়ার হাসান আলো’র সৌজন্যে এলাকার ২ হাজার বাসিন্দার মাঝে পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষ্যে ভোজ্য পণ্য বিতরণে অংশ নেন।
বিনামূল্যে বিতরণ করা পণ্য সামগ্রীর মধ্যে চাল, মশুর ডাল, সয়াবিন তেল, চিনি, লবণ, সেমাই, খেজুর, আলু ইত্যাদি সামগ্রী রয়েছে।
Share your comment :