সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগের নামে কী হয়েছে, জানালেন আসিফ নজরুল

সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগের নামে কী হয়েছে, জানালেন আসিফ নজরুল

বাংলাকণ্ঠ রিপোর্ট:
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে অনাচার হয়েছে। এ জন্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।
আমরা একটা ফাইনাল ড্রাফট করব।
‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ, ২০২৪’ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্য এমন মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামীম হাসনাইন ও বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল, অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন, জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়শেনের সভাপতি আমিরুল ইসলাম, ড. রেজওয়ান খায়ের, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
আসিফ নজরুল বলেন, সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারকদের প্রচণ্ডভাবে ক্ষমতাশালী করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটা যদি নষ্ট করা যায় তাহলে দেশের যে কোনো সরকার এসে সব ধরনের মানবাধিকার হরণ করার অবাধ সুযোগ পেয়ে যাবে। গত ১৫ বছর এ কাজটা করা হয়েছে। উচ্চ আদালত মানবাধিকার হরণ করার, মানুষকে নির্যাতন করার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। এমনকি এমন দুর্ঘটনা দেখেছি, আপিল বিভাগ দিনের পর দিন জামিনের শুনানি ডিলে (দেরি) করেছে খাদিজাকে বিচার ছাড়াই জেলে রাখার জন্য। জঘন্য সব ঘটনা ঘটেছে। এই উচ্চ আদালতের অনাচার, আদালত ব্যবস্থার মাধ্যমে নিপীড়ন নির্যাতনের সবচেয়ে সমস্যাসংকুল বিধানটা হচ্ছে আদালতের বিচারক নিয়োগ আইন। উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের নামে কী হয়েছে বহু উদাহরণ আছে।
আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, আমাদের উচ্চ আদালতে এমন বিচারক নিয়োগ পেয়েছে, যে নিম্ন আদালতে বিচারক হওয়ার পরীক্ষায় ফেল করেছে। উচ্চ আদালতের এমন বিচারক আছে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হতে পারেনি। ল’ কলেজ থেকে পাস করেছে। এমন বিচারক আছে কোনোদিন কোর্টে প্র্যাকটিস করে নাই। ভয়াবহ সব ঘটনা ঘটে গেছে!
আলোচকদের মতামতের বিষয়ে তিনি বলেন, সবাই বলেছেন উচ্চ আদালতের নিয়োগ ভালো হতে হবে। বর্তমান সিস্টেম কাজ করছে না। আমাদের কিছু করতে হবে। সেটা আইনের মাধ্যমে। এটা কতাটা সংবিধানসম্মত ও আরও দক্ষভাবে করা যায়, সে জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আমরা একটা ফাইনাল ড্রাফট করব।
বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, শুধু উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে অনাচার হয় না, ওনাদের আপিল বিভাগে দেওয়ার ক্ষেত্রে অনাচার হয়, বেঞ্চ গঠনের ক্ষেত্রে অনাচার হয় এবং প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে অনাচার হয়। প্রত্যেকটা জিনিস অ্যাড্রেস করার চেষ্টা করব। অন্তত ভালো কিছু আইন করে যাই। ভালো কিছু নিয়োগ দিয়ে যাই।
অন্তর্বর্তী সরকারের সময় ২৩ বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, আমাদের বার বার বলা হচ্ছে—হাইকোর্টে যারা বিচারক ছিল তারা প্রচণ্ডভাবে একটি দলের প্রতি অনুগত ছিল। তাদের অনেকে অনাচার করেছে। ৯০ ভাগের ক্ষেত্রে অভিযোগ ছিল। বার বার বলা হচ্ছিল, কিছু বিচারক নিয়োগ দিতে। আমরা আইনের জন্য অপেক্ষা করতে পারছিলাম না। জুডিসিয়াল ক্যু হওয়ার পর্যন্ত আশঙ্কা ছিল। দ্রুত করতে বলা হয়েছে। এ জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ভুল থাকতে পারে। সবাই মিলে করেছি। প্রধান বিচারপতির অফিস, অ্যাটর্নি জেনালের অফিস, তিন জন উপদেষ্টা ইনভলব ছিলেন। আমাদের ভুল হতে পারে। কিন্তু আমাদের সময় ছিল না। নেক্সট টাইম যখন নিয়োগ হবে, আমরা যদি ভালো আইন করতে পারি। ৩০-৪০ জন বিচারক নিয়োগ দিতে পারি, ওনারা ২০-৩০ বছর দেশকে সার্ভ করবেন। কিছুই না করার চেয়ে কিছু করা ভালো।
এএ/

Share your comment :