মেজরিটি-মাইনরিটি ধাক্কাধাক্কি শেষ করে মাটিতে মিশিয়ে দিতে চাই: জামায়াত আমির

মেজরিটি-মাইনরিটি ধাক্কাধাক্কি শেষ করে মাটিতে মিশিয়ে দিতে চাই: জামায়াত আমির

বাংলাকণ্ঠ রিপোর্ট:
জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা দেশে মেজরিটি-মাইনরিটি ধাক্কাধাক্কি শেষ করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে চাই। যারা দেশের নাগরিক তারা সমমর্যাদার ভিত্তিতে দেশের নাগরিক। যদি দেশে মসজিদ পাহাড়া দিতে না হয় তবে মন্দির, প্যাগোডা, চার্চ, মঠও পাহাড়া দিতে হবে না; এই সমাজে তা নিশ্চিত করা হবে।’
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে রংপুর মিঠাপুকুর কলেজ মাঠে জামায়াতে ইসলামী মিঠাপুকুর শাখা আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
শফিকুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বলেছিল তাদের দল ক্ষমতায় না থাকলে অন্য ধর্মের মানুষকে দেশে কচুকাটা করা হবে। আমি বলতে চাই, অন্য ধর্মের মানুষরা কি এ দেশে জন্ম নেয়নি, তারা কি হযরত আদম (আঃ) ও বিবি হাওয়ার বংশধর নয়? এই জুজুর ভয় দেখিয়ে তারা গত ৫৩ বছর অন্য ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধরনের ক্ষতিসাধণ করেছে। আমি চাই এটি নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে নিরপেক্ষ তদন্ত করা হোক। সর্বপ্রথম জামায়াতে ইসলামী তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। আমরা সেই কুখ্যাত ব্যক্তিকে চিনতে চাই, এটি নিয়ে শ্বেতপত্র চাই, বর্ণচোরাদের জাতি জানতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না থাকলে দুই দিনে দেশে ৫ লাখ মানুষ খুন হবে। কই দেশে তো ৫ লাখ দূরের কথা পাঁচজনও খুন হয়নি। এটাই আমাদের সৌন্দর্য। আমরা দেশবাসীকে শান্ত ও ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানিয়েছিলাম। তারা ধৈর্য ধারণ করেছে।’

জামায়াতের আমির আরও বলেন, ‘আমরা আগামীর বাংলাদেশ তরুণদের হাতে তুলে দিতে চাই। তরুণরা আগামীর বাংলাদেশের চালক হবে। আমরা এমন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যে রাষ্ট্রে অধিকার চাইতে হবে না, রাষ্ট্র নাগরিকের অধিকার দিতে বাধ্য থাকবে। আমরা বৈষম্যহীন, দখলদারমুক্ত, চাঁদাবাজমুক্ত বাংলাদেশ গড়ব, ইনশাআল্লাহ।’
তিনি বলেন, ‘বিগত দিনে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা নিজেদের দেশের মালিক ও জনগণকে ভাড়াটিয়া মনে করতেন। সেই সময় দেশে জুলুম, অত্যাচার, খুন, গুম, ধর্ষণের সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে রাস্তায় নেমেছিল তাদের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ সরকার সবচেয়ে বেশি জুলুম করেছে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে। সেনাবাহিনী ও জামায়াতে ইসলামী আপোষহীন ও দেশপ্রেমিক। তাই বিডিআরের পিলখানায় ৫৭ জন সেনা অফিসারকে হত্যা করে তারা জামায়াতে ইসলামীর গায়ে হাত দিয়েছিল। দেশের স্বার্থ সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামী কারো লাল চোখকে পরোয়া করে নাই। এ জন্য জামায়াতকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মানবিক সমাজ গড়তে চাই। এমন সমাজ তৈরি করতে হবে যেখানে নৈতিক ও জাগতিক শিক্ষা দেওয়া হবে। শিক্ষার পাঠ শেষ হওয়ার আগে শিক্ষার্থীরা দেশ গড়ার কাজে চলে আসবে। মূল্যহীন সার্টিফিকেট নিয়ে খালু-মামার কাছে ছোটাছুটি করতে হবে। এমন শিক্ষা যুবকদের তুলে দিতে চাই, যেখানে প্রত্যেকের হাত দেশ গড়ার কাজে নিয়োজিত থাকবে।’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা এমন দেশ গঠন করব যেখানে মায়েরা ইজ্জত ও নিরাপত্তা সঙ্গে করে তারা সমাজের উন্নয়নের জন্য অবদান রাখবেন। এখন তারা দেশের জন্য অবদান রাখেন ঠিকই, কিন্তু আমরা ইজ্জত ও নিরাপত্তা দুটিই দেই না। আমরা নারীদের জোর করে বোরখা পড়াব না। এখানে অন্য ধর্মের মানুষও বসাবস করে, বোরখা তাদের জন্য না। মুসলমানদের মধ্যেও কাউকে জোর করে বোরখা পড়ানো হবে না। তবে তাদের ইসলামের সৌন্দর্য সম্পর্কে বলা হবে।’
জামায়াতে ইসলামী মিঠাপুকুর শাখার আমীর আসাদুজ্জামান শিমুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদের সদস্য মাহবুবুর রহমান বেলাল, রংপুর জেলা আমীর গোলাম রব্বানী, সেক্রেটারী মাওলানা এনামুল হক। পথসভায় মিঠাপুকুরসহ আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে জামায়াতে ইসলামী ও অঙ্গসংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন।
এএ/

Share your comment :