শতাধিক পণ্যে ভ্যাট-শুল্ক বৃদ্ধির অধ্যাদেশ নিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির অবস্থান

শতাধিক পণ্যে ভ্যাট-শুল্ক বৃদ্ধির অধ্যাদেশ নিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির অবস্থান

রাজধানীর বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়

বাংলাকন্ঠ রিপাের্ট:

সরকার কর্তৃক গ্যাস, বিদ্যুৎ, গুঁড়ো দুধ, ওষুধ, সিম, ইন্টারনেটসহ শতাধিক নিত্যপণ্য ও সেবায় শুল্ক, কর ও ভ্যাট বাড়িয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের জারি করা দুটি অধ্যাদেশ প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। একইসঙ্গে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাক সেল পুনরায় চালু করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

শনিবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান সংগঠনটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন।

তিনি বলেন, ‘‌সম্প্রতি মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর জন্য দুটো অধ্যাদেশ জারি করার ফলে মূল্যস্ফীতি ও ব্যবসায়ের খরচ বাড়বে, যা সাধারণ মানুষের জীবনমানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সরকার তার রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য করের আওতা বাড়াবে, এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু কর বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারকে স্মরণ রাখতে হবে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান যাতে নেমে না যায় ও তাদের ভোগান্তি যাতে না বাড়ে।’

তিনি আরো বলেন, ‘‌সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর কর, ভ্যাট বৃদ্ধি করেছে। তাহলে এখন মানুষ খাবে কি? মানুষের জীবিকার নিরাপত্তা কোথায়? সরকারকে বলব আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) যে শর্ত দিয়েছে, সেটা মানতে কেন আপনাদের বাধ্য থাকতে হবে? এ অভ্যুত্থানের সরকারকে অবশ্যই আইএমএফের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিতে হবে। সারা দেশে এ কর বাড়ানোর কারণে মুদ্রাস্ফীতি ও মূল্যস্ফীতি দুটিই বাড়বে। যা আমাদের জীবনমানকে দুর্বিষহ করে তুলবে। আমরা সরকারকে অনুরোধ করব, এমন কোনো উদ্যোগ যেন সরকার গ্রহণ না করে যেটির জন্য মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পায় এবং জনগণের জীবনে নাভিশ্বাস তৈরি হয়।’

টিসিবির ট্রাক সেল বন্ধের প্রতিবাদ জানিয়ে আখতার বলেন, ‘‌সম্প্রতি টিসিবির মাধ্যমে ট্রাকে করে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি বন্ধ করার প্রক্রিয়াটি নাগরিকদের জন্য‌অবমাননাকর। আমরা দেখেছি এ দেশের নাগরিক কীভাবে ট্রাকের পেছনে ৫ টাকা, ১০ টাকা কমে চাল, ডাল, তেল, চিনি কেনার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে। আমরা কল্পনা করতে পারি না জনগণের প্রতি কতটা দায়হীন অনুভব করলে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’

টিসিবির ট্রাক সেল বন্ধের প্রতিবাদ জানিয়ে আখতার বলেন, ‘‌সম্প্রতি টিসিবির মাধ্যমে ট্রাকে করে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি বন্ধ করার প্রক্রিয়াটি নাগরিকদের জন্য‌ অবমাননাকর। আমরা দেখেছি এ দেশের নাগরিক কীভাবে ট্রাকের পেছনে ৫ টাকা, ১০ টাকা কমে চাল, ডাল, তেল, চিনি কেনার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে। আমরা কল্পনা করতে পারি না জনগণের প্রতি কতটা দায়হীন অনুভব করলে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’

বিগত সরকার ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‌সরকারের শ্বেতপত্রে যে তথ্যগুলো প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে দেখেছি বিগত সরকার গত ১৫ বছরে ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে পাচার করেছে। এক পদ্মা সেতু তৈরি করতে ৩ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। ২৩৪ বিলিয়ন ডলার দিয়ে ৭৮টি পদ্মা সেতু করা যেত। পাচার হওয়া এ টাকা দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে সরকারকে। এর মাধ্যমে জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে এবং অতিরিক্ত ভ্যাট-শুল্কের বোঝা বহন করতে হবে না।’

সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফের ঋণের চুক্তির শর্ত পুনর্বিবেচনা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান আখতার হোসেন।

এ সময় জাতীয় নাগরিক কমিটি সরকারের কাছে কয়েকটি বিকল্প প্রস্তাব তুলে ধরে। সেগুলো হলো: প্রত্যক্ষ করের আওতা বাড়ানো, দুর্নীতি বন্ধ, অর্থ পাচার রোধ ও খেলাপি ঋণ আদায়।

Share your comment :