কর্তৃত্ববাদী শাসন নিরাপদ রাখতে ভয়ার্ত পরিবেশ তৈরি করা হয়
নিজস্ব প্রতিবেদক:
কর্তৃত্ববাদী শাসনকে নিরাপদ রাখতে সমাজে ভয়ার্ত পরিবেশ তৈরি করে রাখা হয়। কর্তৃত্ববাদী এই সরকারকে হটাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।
শনিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং কর্তৃত্ববাদী শাসন’ শীর্ষক সেমিনারটির আয়োজন করে নাগরিক ঐক্য।
সেমিনারে নির্মাণকাজে ব্যয় বাড়ানোর নামে জনগণের টাকা লুটপাট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বক্তারা। রাষ্ট্রের টাকা কিছু গোষ্ঠী লুটপাট করছে বলেও মন্তব্য করেন।
কর্তৃত্ববাদী শাসকেরা নিজেদের বেশি দেখে অন্যের কথা ভাবে না উল্লেখ করে সেমিনারে আয়োজিত সংগঠন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘মেট্রোরেল নির্মাণে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে বেশি টাকা খরচ হয়েছে। ভারতের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ খরচ হয়েছে।’ নির্মাণকাজে ব্যয় বাড়ানোর নামে জনগণের টাকা লুটপাট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি আরও বলেন, ‘এমন কর্তৃত্ববাদী সরকার পৃথিবীতে কমই আছে। কর্তৃত্ববাদী এই সরকারকে হটাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।’
২০১৪ সালের পরবর্তী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সরকারকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বড় প্রতিপক্ষ বলে সেমিনারে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার এত বড় প্রতিপক্ষের সরকার দেশের ইতিহাসে আসে নাই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যা যা ছিল সবকিছু তারা (আওয়ামী লীগ) লঙ্ঘন করেছে। তারাই আবার বলে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মালিক!’
সংবিধান অনুযায়ী সরকারকে সেবক বলা হয়েছে, প্রভু বলা হয়নি বলেও উল্লেখ করেন আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘সরকারের কোনো টাকা থাকে না। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী জনগণের টাকা নিয়ে আপনারা আমাদের সেবা করবেন। সংবিধানে আপনাদের সেবক বলেছে, প্রভু বলে নাই, টাকা পাচারকারী বলে নাই, ভুয়া নির্বাচনকারী বলে নাই।’ সরকারের নানা ধরনের অনিয়ম নিয়ে সংসদে তথাকথিত বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের কথা না বলায় এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে জবাব না চাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
ন্নয়নকাজে নির্মাণ ব্যয় বেশি হওয়া এই নিয়ে সেমিনারে প্রশ্ন তোলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নির্মাণ ব্যয় বেশি কারণ মাটি নাকি নরম। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে মাটি নরম নাই? একমাত্র বাংলাদেশেই নরম? নরম মাটিতে কত বেশি খরচ হতে পারে। আমরা যে অধিগ্রহণের নামে লাখ লাখো কোটি টাকা কারচুপি করি, সেটার সঙ্গে মাটি নরমের সম্পর্ক কী? আমরা যে খবর পাই, বালিশের দাম এক হাজার টাকা, এটা কি মাটি নরম হওয়ার কারণে হয়েছে? আমরা যে খবর পাই, লাখো কোটি টাকা পাচার হয়েছে, এর সঙ্গে মাটি নরমের কী সম্পর্ক?’ প্রধানমন্ত্রীকে এই স্বাভাবিক ও যৌক্তিক প্রশ্ন করার সাহস সংসদে তথাকথিত বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের নাই।’
মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেছেন, কর্তৃত্ববাদী শাসনকে নিরাপদ রাখতে সমাজে ভয়ার্ত পরিবেশ তৈরি করে রাখা হয়। সেই পরিবেশ তৈরি করার জন্য গুম, খুনকে শাসকশ্রেণি হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে।
দেশ অর্থনীতির দেউলিয়াপনার সামনে পড়ে গেছে উল্লেখ করে নূর খান বলেন, রাষ্ট্রের টাকা সবাই লুটপাট করছে না। কিছু গোষ্ঠী লুটপাট করছে। এই সংখ্যা বড়জোর ২০/৩০টি হবে। তিনি আরও বলেন, যেখানে গণতন্ত্র থাকে সেখানে মানবাধিকার সমুন্নত থাকে। আর যেখানে গণতন্ত্র থাকে না, সেখানে মানবাধিকার সমুন্নত থাকে না।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়সার, প্রেসিডিয়াম সদস্য মমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
এআর-১১/০৫/২৪
Share your comment :