রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলে ১ বিলিয়ন ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক

রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলে ১ বিলিয়ন ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক

বাংলাকণ্ঠ রিপোর্ট:
রপ্তানিমূখী ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে গঠিত রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল বা ইডিএফ ফান্ডে এক বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলারের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, রপ্তানির চাকা সচল রাখতে গঠিত তহবিল লুটপাট করেছে সাবেক সরকার সমর্থিত ব্যবসায়ীরা। এমন প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএমফ) শর্তের কারণে ইডিএফ ফান্ড কমিয়ে আনে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরবর্তীতে কমতে কমতে বর্তমানে সেই ফান্ডের আকার আড়াই বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। যা আগে ছিল ৭ বিলিয়ন ডলার। তাই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রপ্তানির চাকা সচল রাখতে এই ফান্ডে এক বিলিয়ন ডলার দেবে বিশ্ব ব্যাংক।
সম্প্রতি ওয়াশিংটন সফর করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এবং অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সেখান থেকে দেশে ফিরে গভর্নর জানিয়েছেন, বিশ্বব্যাংক ইডিএফ ফান্ডে এক বিলিয়ন ডলার ঋণের গ্যারান্টি দেবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বিষয়টি গতকাল বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান।
এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিদর্শনে দেখা যায়, রপ্তানিতে সহায়তা করতে রিজার্ভের অর্থে গঠিত ইডিএফও লুটপাট হয়। রপ্তানির নামে এ তহবিল থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করে অনেক ব্যবসায়ী খেলাপি হয়ে পড়েছেন। অনেকে আবার এ অর্থ পাচারও করে দিয়েছেন।
করোনার সময়ে প্রায় দ্বিগুণ করে ইডিএফ ফান্ড ৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেন তৎকালীন গভর্নর ফজলে কবির। কিন্তু রিজার্ভের অর্থে গঠিত সেই ইডিএফের ঋণই আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ উঠেছে কিছু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। এমন পরিস্থিতিতে গত এক বছর ধরে ইডিএফের আকার কমানো শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত হিসেবে ইডিএফের আকার কমানোকে সামনে রেখে ৭ বিলিয়ন ডলারের তহবিল বর্তমানে আড়াই বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে পণ্য রপ্তানির জন্য কাঁচামাল আমদানিতে রপ্তানিকারকদের ব্যাক টু ব্যাক এলসির আওতায় কম সুদে ডলারে ঋণ দিতে ১৯৮৯ সালে গঠিত হয় ইডিএফ। রিজার্ভ থেকে এই ঋণ পরিশোধে সর্বোচ্চ ২৭০ দিন সময় পান উদ্যোক্তারা। সেই তহবিলের আকার দীর্ঘ কয়েক বছর এক থেকে দুই বিলিয়ন ডলারের ঘরে ছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে ফজলে কবির গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরেই ধাপে ধাপে বৃদ্ধি পেতে থাকে আকার। আর ২০২০ সালে মার্চে করোনা সংক্রমণকালে ব্যবসা বাঁচানোর নামে একই বছরের এপ্রিলে ইডিএফের আকার ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন করা হয়। সেই ধারা প্রায় দুই বছর অব্যাহত থাকে এবং ২০২২ সালে ইডিএফের আকার ৭ বিলিয়নে উন্নীত হয়। কিন্তু ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন যুদ্ধের পর দেশে ডলার সংকট তীব্র হতে থাকে।
এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর হন আব্দুর রউফ তালুকদার। তিনি ইডিএফ কমাতে জোর দেন। তার নির্দেশে আকার ছোট হয়ে গত মে মাসে ইডিএফের পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন। আর জুন শেষে হয় ৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। গত জুলাইয়ে ইডিএফের আকার দাঁড়ায় ৩ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলারে। আর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সরকারের পালাবদলের পরে আগস্ট শেষে ইডিএফের আকার হয় ২ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার এবং সেপ্টেম্বরে তা হয় ২ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে আরও ছোট হয়েছে এ ফান্ডের আকার।
জানা গেছে, আইএমএফের দেওয়া ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের শর্ত পূরণে গত বছরে মাঝামাঝি এই তহবিল থেকে ঋণ বিতরণ বন্ধ রাখা হয়। পরে সীমিত পর্যায়ে চালু করা হয়েছে। সূত্র জানায়, আলোচিত বিসমিল্লাহ, ক্রিসেন্ট গ্রুপ, বেক্সিমকোসহ শীর্ষ ৪০টি প্রতিষ্ঠানের কাছে দীর্ঘদিন ধরে ৬০ কোটি ডলারের মতো আটকে রয়েছে। এর মধ্যে আটটি গ্রুপের কাছেই প্রায় ২৫ কোটি ডলারের ইডিএফ ঋণ রয়েছে।
এএ/

Share your comment :