সোমালিয়ান জলদস্যুদের দাবি-দাওয়া
নিউজ ডেস্ক :
বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’র সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে আটকে তিন দিন হতে চললো। এখনো কারো সঙ্গে সোমালিয়ার জলদস্যুরা কোনপ্রকার যোগাযোগ করেনি। এমনকি কোন দাবি-দাওয়া এখনো তারা করেনি। জাহজটির মালিক পক্ষের সূত্রে এমনই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
তবে আশার আলো দেখছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে জাহাজসহ জিম্মি নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে জাহাজটির বীমা কোমম্পানি যুক্তরাজ্যের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে। তবে এতে কত দিন সময় লাগতে পারে তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জাহাজটিকে সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) ভোর ৬টা পর্যন্ত জাহাজটি সোমালিয়ার উপকূল থেকে ৭২ নটিক্যাল মাইল দূরে ছিল। দুপুর নাগাদ জাহাজটি সোমালিয়ায় পৌঁছে যাবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াত হোসেন।
বৃহস্পতিবার সকালে তিনি বলেন, ‘সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি নাবিকসহ জাহাজটির অবস্থান বৃহস্পতিবার ভোর ৬টায় শনাক্ত করা গেছে। জাহাজটি ওই সময় সোমালিয়া থেকে ৭২ নটিক্যাল মাইল দূরে ছিল। আজ দুপুরের মধ্যে জাহাজটি সোমালিয়ায় নিয়ে যেতে সক্ষম হবে। হয়তো এর পর জলদস্যুরা তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে মালিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। তবে এখন পর্যন্ত তারা কোনো দাবি জানায়নি।’
এ বিষয়ে বুধবার (১৩ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সেমিনারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, জাহাজটি হাইজ্যাক করা জলদস্যুদের সঙ্গে এখনো ফরমালি যোগাযোগ করা যায়নি। যেখানে জানানো প্রয়োজন, সেখানে জানিয়েছি। ইতোমধ্যে রিপোর্টিং সেন্টার ইন কুয়ালালামপুর, ইন্ডিয়ান ফিউশন সেন্টার ইন নিউ দিল্লি, তারপর সিঙ্গাপুর, ইউএসএ, ইউকে, চীনসহ সব এরিয়ার নেভাল শিপে আমরা রিপোর্ট করেছি। অন্যান্য সূত্রের মাধ্যমেও আমরা যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি।
গত বুধবার (১৩ মার্চ) দুপুরে সচিবালয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ভারত সাগরে জাহাজটি আছে। সার্বক্ষণিক তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত আমাদের নাবিকরা নিরাপদে আছে।
জাহাজটির মালিকানা প্রতিষ্ঠান, কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত জলদস্যুদের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। জাহাজের নাবিকেরা ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী জলদস্যুরা নাবিকদের কোনও ক্ষতি করেনি। তাদের যাতে কোনও ক্ষতি না হয় আমরা সেই চেষ্টা করছি। জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।’
মিজান বলেন, ‘এর আগে ২০১০ সালে আমাদের মালিকের আরও একটি জাহাজ একই জলদস্যু বাহিনীর কবলে পড়েছিল। সেই সময় ১০০ দিন পর জাহাজসহ সব নাবিককে অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছিল। আমরা অতীত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবারও সব নাবিককে সুস্থ শরীরে ফিরিয়ে আনতে পারব বলে আশা করছি।’
জাহাজটি হাইজাকের বিষয়ে চিফ অফিসার একটি অডিও বার্তা পঠিয়েছেন, চিফ অফিসার মো. আবদুল্লাহ’র অডিওবার্তাটি তুলে ধরা হলো—
‘আসসালামুলাইকুম স্যার, আমি চিফ অফিসার আবদুল্লাহ বলছি।
আজকে সকালে জাহাজের সময় আনুমানিক সাড়ে ১০টার সময় একটা হাইস্পিড বোট আমাদের দিকে আসছিল। সঙ্গে সঙ্গে আমরা অ্যালার্ম দিয়ে ব্রিজে গেলাম। ওখান থেকে পরে সিটে চলে গেলাম। ক্যাপ্টেন স্যার ও সেকেন্ড অফিসার ব্রিজে ছিল। আমরা ঝিকঝাক কোর্স করলাম। তার পর এএসএস-এ করলাম। ইউকে এমটিকেও ট্রাই করলাম। কিন্তু তারা ফোন রিসিভ করেনি। এর মধ্যে জলদস্যুরা চলে এলো।
চলে আসার পর ওরা ক্যাপ্টন স্যার ও সেকেন্ড অফিসারকে জিম্মি করে। আমাদের ডাকল। আমরা সবাই গেলাম। আমাদের ডেকে কিছু গোলাগুলি করল। আমরা একটু ভয় পেয়েছি। সবাই ব্রিজে বসে ছিলাম। কারও গায়ে হাত তোলেনি। শুধু সেকেন্ড অফিসারকে একটু মারধর করেছে। তার পর ওরা আরেকটি স্পিডবোটে করে আরও কয়েকজন চলে এলো। এভাবে মুহূর্তেই প্রায় ১৫-২০ জন চলে আসে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুর দেড়টার দিকে কবির গ্রুপের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়ার খবর জানতে পারে গ্রুপের কমকর্তারা।
Share your comment :