দিনাজপুরে আলুর দামে নাভিশ্বাস

দিনাজপুরে আলুর দামে নাভিশ্বাস

দিনাজপুর প্রতিনিধি:
চলতি মৌসুমে সব ধরনের সবজির ভালো ফলন হলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম উৎপাদন হয়েছে আলু। একেক সময় একেক পণ্যের দাম সর্বোচ্চ উঁচুতে গিয়েও নিম্নে নেমে এসেছে। অনেক পণ্যই কিনতে সাধারণ ক্রেতাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

এ বছর অস্থির সবজি বাজারে দিনাজপুরের খানসামায় সচরাচর স্থিতিশীল ছিল আলুর দাম। এখন সেই আলু কয়েক দিনের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে ১৫-২০ টাকা। বর্তমানে প্রতি কেজি আলু প্রকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে। এমন পরিস্থিতিতে আলুও যেন ভোক্তাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শনিবার উপজেলার বিভিন্ন সবজি বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি দোকানে কম-বেশি আলুর সরবরাহ রয়েছে। আলুর দাম ঊর্ধ্বগতি। দাম নিয়ে নিত্যপণ্যের বাজার তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে এই আলু। খাবার প্লেটে প্রধান সবজি আলুর দাম বেড়ে হওয়ায় নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছেন ভোক্তারা।

উপজেলার আঙ্গারপাড়া ইউনিয়নের ছাতিয়নগড় গ্রামে কথা হয় আলু চাষি মো. মমিনুল ইসলাম বলেন, এ বছর আমি ৪ বিঘা জমিতে আগাম আলুর চাষ করেছি এবং ভালো দাম পেয়েছি। আলুর দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে কেউ বলেছেন, উপজেলায় উৎপাদন কমেছে, অন্যান্য পণ্যের দামবৃদ্ধির প্রভাব, আবার কেউ বলেছেন বাড়তি চাহিদার কথা। এ ছাড়া সিন্ডিকেটের আশঙ্কাও করছেন অনেকে। তাই কৃত্রিম সংকট দেখেও আলুর দাম বাড়ছে বলে ভোক্তাদের অভিযোগ।

বাজারে সবজি কিনতে আসা দিনমজুর আ. রাজ্জাক বলেন, আমি দিন এনে দিন খাই। আমার ৫ জনের হাড়িতে প্রতিদিন কমপক্ষে ১ কেজি আলু লাগে। এখন দাম বাড়ায় আধা কেজি আলু কিনছি। এভাবে সব ধরনের জিনিসের দাম বাড়ার কারণে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়ছে। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। তিনি আরও বলেন, অন্য তরকারী না কিনলে হয় কিন্ত আলু না হলে চলা যায় না, বিশেষ করে বাচ্চারা আলু ছাড়া ভাত খেতে চায় না। তাই বাধ্য হয়ে আলু কিনতে হয়। কিন্ত দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের মত খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষে এখন আলু খাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

একই এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, তরকারির মধ্যে আলুই হচ্ছে প্রধান সবজি। দৈনন্দিন খাবারের সঙ্গে এটি কমবেশি থাকে। এর আগে আলু ছাড়া সব ধরনের সবজির দাম বৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু সেই বৃদ্ধির তালিকায় নতুনভাবে যোগ হয়েছে আলুও। বর্তমানে দেশি আলু কিনলাম ৫০ টাকা দরে। খানসামা বাজারের সবজি বিক্রেতা শাহীন বলেন, মোটামুটি সব সবজির দাম কম আছে। কিন্তু আলুর বাজার বেশি। কার্ডিনাল আলু মহাজনের কাছ থেকে ৪১ টাকা দরে কিনে এনে ৪৫ টাকা এবং দেশি আলু ৪৬ টাকা কিনে এনে ৫০ টাকা বিক্রি করছি। এ ছাড়া ক্যারিং খরচ তো আছেই।

উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা হাবিবা আক্তার বলেন, গতবারের চেয়ে এ বছর উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা কম ছিল। ১৯০০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ করা হয়েছে। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২৬০ হেক্টর। এবার কৃষকরা আগাম জাতের আলু উত্তোলন করে ভালো দামে বিক্রি করেছেন। কোনো কোনো কৃষক একই জমিতে দুইবার আলু লাগিয়ে বিক্রি করেছেন। গতবার আমরা এ উপজেলা থেকে বাইরের দেশে আলু রপ্তানি করেছি। এবার আলু কৃষকরা নিজেই ভালো দামে বিক্রি করে কিছু আলু বীজের জন্য রেখেছেন।

এআর-২০/০৪/২৪

Share your comment :